২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

একদিন পর উঠছে সুন্দরবনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা, প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত বনজীবীরা

- ছবি : নয়া দিগন্ত

সুন্দরবনের বনজ ও মৎস্য সম্পদের ওপর নির্ভরশীল জেলে-বাওয়ালীদের সুন্দরবনে ঢোকার টানা তিন মাসের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে চলেছে। আজ শনিবার নিষেধাজ্ঞা শেষে আগামীকাল রোববার থেকে সুন্দরবনে যেতে পারবেন বনজীবীরা।

এদিকে, বনে ঢোকার দিন ঘনিয়ে আসায় শুরু হয়েছে নৌকা ও জাল মেরামতের তোড়জোড়। সবকিছু ঠিক থাকলে মাছ ও কাঁকড়া ধরার জন্য আগামীকাল থেকে সুন্দরবনে যেতে পারবেন বনজীবীরা।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ, কৈখালী ও রমজাননগর এলাকা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সুন্দরবন সংলগ্ন চুনা, চুনকুড়ি, মালঞ্চ ও খোলপেটুয়া নদীর পাড়ে পুরোনো নৌকা, ছেঁড়া জাল মেরামত ও রঙ করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন বনজীবীরা। এসব এলাকার প্রায় ১০ হাজার জেলে পরিবার সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলোর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলায় চারদিকে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তাদের মুখে বইছে হাসির ঝিলিক।

শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী এলাকার ষাটোর্ধ্ব হানিফ গাজী ছোটবেলা থেকেই মাছ ধরার পেশায় জড়িত। সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছ-কাঁকড়া ধরা নিয়ে তার রয়েছে নানান অভিজ্ঞতা।

তিনি বলেন, ‘যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই বাদায় (সুন্দরবনে) মাছ-কাঁকড়া ধরার কাজে জড়িত। এখন পর্যন্ত এ পেশায় আছি। বছরের দু’টি সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। তখন আমাদের অন্য কাজ করে সংসার চালাতে হয়। মাছ ধরা শুরুর আগে ঋণ করে নৌকা মেরামত ও জাল কিনে নদীতে নামি। তবে মাছ পাওয়ার বিষয়টি অনেক সময় ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। নদীতে নামলে অনেক সময় মাছ পাওয়া যায়, আবার অনেক সময় খালি হাতে ফেরতে হয়।’

নীলডুমুর এলাকার ওয়াহেদ গাজীর (৬০) জানান, ‘নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকি। তবে এ সময় সরকার থেকে যে সহায়তা দেয়া হয় সেটি দিয়ে সংসার চলে না। এ কারণে অন্য কাজ করে উপার্জন করি। সরকার সুন্দরবনের মাছ ও কাঁকড়া রক্ষায় যে অভিযান চালায় সেটি আরো কঠোর এবং নেট জাল ও কারেন্ট জালের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধসহ অবৈধভাবে সুন্দরবনে চোরা শিকারিদের প্রবেশ বন্ধ করা দরকার। তাহলে সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছ কাঁকড়া পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।’

একই এলাকার আবু হাসান সরদার (৪৫), জামাল হোসেন (৩৫), রফিকুল সরদার (৪০)। তারা নদীতে নামার জন্য জাল ও নৌকা মেরামতের কাজ করছেন। তারা জানান, ‘তিন মাস সুন্দরবনে মাছ কাঁকড়া আহরণ থেকে বিরত থাকায় সংসার অনেক কষ্টে চলেছে। কারণ মাছ-কাঁকড়া ধরা ছাড়া তারা অন্য কোনো কাজ করতে পারেন না।’

তারা আরো বলেন, ‘প্রতিটি নৌকায় দুই থেকে পাঁচজন জেলে থাকে। পাঁচ জনের পাঁচটি পরিবার। আমাদের মাছ পাওয়ার ওপর নির্ভর করে সংসার। মাছ পাওয়া গেলে সংসার ভাল চলে। না পাওয়া গেলে কষ্ট করেই চলতে হয়। অনেকে সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করেন।’

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা, জীবজন্তু ও মাছের প্রজনন বাড়ানোর জন্য ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৯২ দিনের জন্য সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছ, কাঁকড়া ধরা ও পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর আগে, জানুয়ারি ও ফেব্রয়ারি মাসে প্রজনন মৌসুম হিসেবে বন্ধ রাখা হয়েছিল কাঁকড়া ধরা। ফলে সুন্দরবনের মাছ ও কাঁকড়া ধরার ওপর নির্ভরশীল মানুষ চরম কষ্টে ছিল।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশন থেকে বিএসসি (নোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) হয়েছে ২৯০০টি।

বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা এ.বি.এম হাবিবুর রহমান জানান, ‘সাধারণত একটি নৌকায় দুই থেকে ছয়জন করে মাছ কিংবা কাঁকড়া ধরতে সুন্দরবনে ঢুকে থাকেন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবার মাছ ও কাঁকড়া ধরার অনুমতি দেয়া হবে। এতে করে আবার কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে জেলেদের মাঝে।’

সুন্দরবন ট্রলার মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম জানান, ‘পর্যটকের ওপর নির্ভর করে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় পাঁচ শতাধিক ট্রলার চলে। সুন্দরবনে জুন থেকে আগষ্ট পর্যন্ত মাছ ও কাঁকড়া ধরা বন্ধ রাখার পাশাপাশি পর্যটক ঢোকা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় তাদের প্রায় এক হাজার ট্রলারচালক ও শ্রমিক বেকার জীবনযাপন করেন। তাদের সংসার চলে খুব কষ্টে ধার দেনা করে।’


আরো সংবাদ



premium cement