২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পাইকগাছায় স্বেচ্ছাশ্রমে ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার, ত্রাণ আসছে পর্যাপ্ত

পাইকগাছায় স্বেচ্ছাশ্রমে ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার, ত্রাণ আসছে পর্যাপ্ত - নয়া দিগন্ত

ভাঙনের পাঁচ দিনেই কয়েক হাজার মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করা হয়েছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটির কালীনগরে ভদ্রা নদীর বাঁধ।

সোমবার (২৬ আগস্ট) রাত ৮টার পর্যন্ত কাজ করে সেটি সংস্কার করা হয়।

ভায়াবহ ভাঙনে বিধ্বস্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ২২ নম্বর পোল্ডারের আলোচিত বেড়িবাঁধ সংস্কার হওয়ায় নতুন করে সেখানে পানি ঢুকার আশঙ্কা না থাকলেও ঠিক কবে নাগাদ সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ নিজ ঘরে ফিরতে পারবে তা নিয়ে নানা আশঙ্কা জেঁকে বসেছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান রিপন কুমার মণ্ডল জানান, দিনে ও সন্ধ্যায় নদীতে ভাটার সময়ে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মানুষ ভাঙন মুখে পর্যাপ্ত মাটি ফেলে বাঁধ নিরাপদ করেছে।

প্যানেল চেয়ারম্যান সুকুমার কবিরাজ ও প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সুকৃতি মোহন সরকার বলেন, দেলুটি, লতা, লস্কর, দাকোপ, সোলাদানার হাজার-হাজার নারী-পুরুষের পাঁচ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাঁধের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে দেলুটির ২২ নম্বর পোল্ডারের ১৩ গ্রামের ১৫ হাজার আশ্রয়হীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এনজিওসহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন।

মঙ্গলবার সকালে দুর্গত এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, নৌ ও স্থলপথে এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন এলাকা থেকে খাদ্যপণ্য এনে দুর্গতদের মধ্যে সরবরাহ করছে। এর মধ্যে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার, কাঁচা তরকারি, সুপেয় পানি, স্যালাইন, পলিথিন, কাপড়-চোপড়সহ নানা উপকরণ বিতরণ করতে দেখা যায়।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত নলিয়ারচক, দারুনমল্লিক, বিগরদানার অনেকেই আক্ষেপের সাথে জানান, যাদের মধ্যে ত্রানসামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে, তারা শুধু পেয়েই যাচ্ছে।

এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত সব মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রীর সুষম বণ্টন দাবি করেন। তাদের দাবি, ত্রাণ সরবরাহকারীসহ স্বেচ্ছাসেবকদের পানিবন্দী ভেতরের অনেক গ্রাম বিশেষ করে কালিনগর, দারুনমল্লিক, সেনেরবেড়, হাটবাড়ী এলাকায় পৌঁছানোর।

ভাঙ্গনকূলের বাসিন্দা ইউপি ওয়ার্ড সদস্য পলাশ কন্তি রায় জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালে নদীভাঙনে ২২ নম্বর পোল্ডার প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই দ্বিতীয় দফার ভাঙনে তারা রীতিমত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সেখানকার জনজীবন ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ দ্বিতীয় দফায় ভদ্রার একইস্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ২২ নম্বর পোল্ডার অভ্যন্তরে পানি ঢুকে ১৩ গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে।

পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ বলেন, বাঁধ ভেঙে লবণ পানি ঢুকে ৯৫০ হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত, ২২৫ হেক্টর আমন ধানের বীজতলা ও ২৫ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক বলেন, ছোট-বড় প্রায় ৪০০টির মতো চিংড়ি ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় আট কোটি ২৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আশরাফুল আলম বলেন, নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ফুট পানি বেড়েছে। এ কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। দুটি এস্কাভেটর দিয়ে মাটি কেটে রিং বাঁধ দেয়া হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটির আশু সংস্কার করেছে। এতে পাউবোর পক্ষে তারা জিও টিউব সরবরাহ করেছে।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনিন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রায় এক হাজার মানুষ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১২ টন চাল, নগদ ৫৫ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ২২ নম্বর পোল্ডারের কালীনগর গ্রামের কালীনগর গ্রামে ভদ্রা নদীর বাঁধ ভেঙে কালীনগর, দারুল মল্লিক, হরিণখোলা, সৈয়দখালি, সেনেরবেড়, গোপীপাগলা, খেজুরতলা, তেলিখালী, হাটবাড়ী, ফুলবাড়ী, বিগরদানা, দুর্গাপুর ও নোয়াই গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। এতে প্লাবিত হয় সেখানকার ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের, পুকুর, ধ্বসে পড়ে বহু কাঁচা ঘর-বাড়ি, বীজতলা।


আরো সংবাদ



premium cement