২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কুষ্টিয়ায় নিহত ৬

কুষ্টিয়ায় নিহত ৬ - ছবি : নয়া দিগন্ত

কুষ্টিয়ায় বিজয়ের পরেই পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এতে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে।

সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুর ২টা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মডেল থানার সামনে বিজয় মিছিল করছে। বিক্ষুদ্ধ আন্দোলনাকরীরা পুরো থানা ঘিরে ফেলে।

এমন সময় পুলিশকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। বিজিবি কর্মকর্তা পুলিশকে নিরস্ত্র জনগণের ওপর গুলি করতে নিষেধ করে অস্ত্র সমর্পন করতে বলে জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।

কিন্তু পুলিশ সেনা ও বিজিবি কর্মকর্তাদের কথা অমান্য করেই নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এ সময় পুলিশের গুলিতে অসংখ্য মানুষ আহত হতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ভয়ে আড়ালে গেলেও ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ নির্বিচারে গুলি করতে করতে তারা এনএসরোড হয়ে পুলিশ লাইনের দিকে পালাতে তাকেন। এতেই ছয়জন নিহত হয়। এ সময় হাসপাতালে শতাধিক গুলিবিদ্ধকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক ও নার্স এবং মিখ্ষার্থীরা তাদের চিকিৎসা কাজে সহযোগিতা করতে থাকেন। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান শহরের থানাপাড়ার লোকমানের ছেলে আব্দুল্লাহ-১৪, রিকশাচালক হরিপুরের মিন্টু-৫৫। বাকি নিহতেদের নাম পাওয়া যায়নি। এদিকে পুলিশের গুলিতে আহত শতাধিক মানুষের মধ্যে ছাত্র-শিক্ষক ও সাংবাদিক রয়েছে।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে মজমপুর এলাকায় পুলিশের বাঁধার মুখে পড়ে আন্দোলনাকারীরা। তাদের লক্ষ্য করে পুলিশের বেপরোয়া রাবার বুলেট ও কাদানো গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করতে দেখা গেছে। এদিকে দুপুর ১২টার দিকে জেলা স্কুলে থাকা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ সেনা সদস্যরা ছাত্রদের দলে এসে তাদের শান্ত হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। শিক্ষার্থীরা পুলিশের আক্রমণ বন্ধ করতে বললে সেনা কর্মকর্তা দ্রুত পুলিশের কাছে যেয়ে তাদের পুলিশ লাইনে চলে যেতে বললে পুলিশ সেখান থেকে দ্রুত পুলিশ লাইনে চলে যায়। এদিকে সকাল থেকেই শহরের ছয় রাস্তা মোড়ে দখলে নেয় পুলিশ।

শিক্ষার্থীরা ছয় দিক থেকে পুলিশকে ঘিরে ফেললে পুলিশ গুলি ও কাদানো গ্যাস ছুড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। পরে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া খেয়ে থানায় অবস্থান নেয়। এদিকে দুপুর ২টার দিকে পুলিশ মজমপুরগেট এলাকায় রাবার বুলেট ও কাঁদানো গ্যাস ছুড়তে ছুড়তে দ্রুত পালিয়ে পুলিশ লাইনে চলে যায়। সারা দেশবাসী যখন বিজয়ের উল্লাসে ব্যস্ত ঠিক সেই মুহূর্তে দুপুর আড়াইটার দিকে থানা ঘেরাও করার কারণে পুলিশ গুলি করতে করতে থানা থেকে পালিয়ে পুলিশ লাইনে যায়। হতাহতের ঘটনা ঘটে।

থানা পুলিশ মুক্ত হলে জনতা থানায় আগুন লাগিয়ে দেয়। এসময় মালখানার অস্ত্রসহ মটরসাইকেল গাড়ি থানার সকল কামরায় আগুনের লেলিহান চলে। বিকেলে থানার পোড়া অস্ত্র ও আসবাবপত্র লুট হতে দেখা গেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলীর থানাপাড়ার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিকেলে সেখানকার যাবতীয় মালামাল লুট করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
এদিকে সেনা প্রধানের বক্তব্যের পর শহরের সর্বত্র সাধারণ জনগণ পরিবার পরিজন নিয়ে সড়কে নেমে আসে। তাদের আনন্দ উল্লাস ও শ্লোগানে পুরো শহর মুখোরিত হয়ে।

এদিকে বিক্ষুদ্ধরা স্থানীয় এমপি মাহবুবুব উল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-২ আসনের এমপি কামারুল আরেফিনের বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটেুর ঘটনা ঘটে। এছাড়া শহরের সর্বত্র থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। শহরের সবকটি মুজিবের ভাস্কর্য ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে সাধারণ জনগণ। জনগণকে উল্লাস করতে দেখা গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement