২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না, সাকিব ও ইয়াসিনের পরিবার

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাকিব ও ইয়াসিন - ছবি : নয়া দিগন্ত

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকায় গুলিতে নিহত খুলনার শেখ মো: সাকিব রায়হান ও ইয়াসিন শেখ। সাকিবের বাড়ি নগরীর নবপল্লী এলাকায় আর ইয়াসিনের বাড়ি রূপসা উপজেলার রহিমনগর গ্রামে। দুইজনেই অল্পবয়সী টগবগে যুবক। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ঢাকায় গুলিতে নিহত হন।

সরেজমিনে দেখা যায়, আদরের সন্তান হারিয়ে শোকে স্তব্ধ পরিবার দু’টি। চোখের পানি শুকিয়ে গেলেও কান্না যেন থামছে না তাদের। মা-বাবার ঘুরে ফিরে একই কথা। তারা তো কোনো রাজনীতি করতো না। তারা তো পথচারী ছিল। কেন তাদেরকে এভাবে চলে যেতে হলো। আমাদের বলার কিছুই নেই। বিচারের ভার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিলাম।’

জানা গেছে, ঢাকার বেসরকারি একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করতো সাকিব। সম্প্রতি অর্থনীতি শুমারির মাঠ কর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিল। গত ১৯ জুলাই বিকেলে মিরপুরে সাকিব গুলিতে নিহত হয়।

এ দিকে, ইয়াসিন ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানে ডেলিভারি ম্যানের কাজ করতো। গত ২০ জুলাই গ্রাহকের বাসায় গ্যাস পৌঁছে দিয়ে ফেরার সময় ইয়াসিন যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে আহত হয়। পরে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ জুলাই মারা যায়।

খুলনা সদরের নবপল্লী এলাকায় ছোট একটা গলি। এই গলিতেই সাকিব রায়হানের পরিবার। বাড়িতে অভাব-অনটনের ছাপ। বাবার মুদি দোকানের আয় দিয়ে চলে পুরো সংসার। বড় বোন মিরপুরে থাকেন। আরেক ভাই ঢাকাতে ছোটখাটো একটি ব্যবসা করেন।

কথা বলতেই সাকিবের মা-বাবা বলেন, ‘সাকিবকে খুলনায় ফিরে আসার কথা বললে ও বলতো খুলনায় কিছু হবে না। ঢাকায় চাকরি অথবা ব্যবসা করে তোমাদের মুখে হাসি ফোটাবো। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) থেকে সাকিবের নতুন চাকরিতে যোগ দেয়ার কথাও ছিল।’

সাকিবের বাবা আজিজুর রহমান জানান, ‘১৯ জুলাই বিকেলে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে একজন ফোন করে জানায়, তার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। পরদিন ভোরে মেঝ ছেলে অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে খুলনাতে ফেরেন। পরে জানাজা শেষে বসুপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।’

রূপসার রহিমনগরের ইয়াসিন শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, জীর্ণশীর্ণ কুড়ে ঘরে বসবাস তাদের।

ইয়াসিনের মা মনজিলা বেগম জানান, ‘ইয়াসিন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কয়েকটা ছেলে ঢাকার যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল এলাকায় আমার ভাড়া বাসায় এসে জানায় তার গুলির খবর। তখন আমার কাছে একটা টাকাও ছিল না, অনেক অনুরোধের পর এক রিকশাচালক বিনা ভাড়ায় আমাকে ইয়াসিনের কাছে নিয়ে যায়। এরপর তাকে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করি। ২৫ তারিখ সে মারা যায়। এরপর গ্রামের লোকজনের দেয়া চাঁদার টাকায় অ্যাম্বুলেন্সে করে ইয়াসিনের লাশ খুলনার বাড়িতে আনি। আনার পথেও অনেক হয়রানি পোহাতে হয়।’

কাঁদতে কাঁদতে তিনি আরো বলেন, ‘আমার ছেলের কোনো দোষ ছিল না। সে পথচারী ছিল। সে তো কোনো দল করতো না। কাজ করতো, ভাত খেত। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করতাম। ইয়াসিনের আয় দিয়েই বাসা ভাড়াসহ সংসার চলতো। আমি এখন কী করে চলবো, আমাকে কে খাওয়াবে? আমার তো সব শেষ। এত অল্প বয়সে সে আমার বুক খালি করে চলে যাবে তা ভাবতেও পারিনি।’


আরো সংবাদ



premium cement