২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

চৌগাছায় মা-বাবা হত্যার দায়ে ছেলের ফাঁসির আদেশ

- ছবি - নয়া দিগন্ত

যশোরের চৌগাছায় মা-বাবাকে হত্যার অভিযোগে ছেলেকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জর্জ সপ্তম আদালতের বিচারক জনাব জুয়েল অধিকারী এই রায় দেন।

রায়ে মামলার একমাত্র আসামি হাবিবুর রহমান মিলন ওরফে মিলন উদ্দীনকে (৩২) ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।

এসময় আদালতে পিপি অ্যাড. সৈয়দ কামরুল ইসলাম ও আসামি হাবিবুর মিলন কাটগঢ়ায় উপস্থিত ছিলেন। আদালতে বাদি হুমায়ন কবির ও তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মামলার নথিসূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার সময় উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান মিলন (৩২) বাবা মহির উদ্দীনের (৬২) কাছ থেকে নেশার টাকা না পেয়ে ধারালো গাছি দা দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। এসময় তার মা আনোয়ারা বেগম (৫৫) মিলনকে বাধা দিলে তাকেও কুপিয়ে জখম করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তারা দু’জনই ঘটনাস্থালে মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় এলাকাবাসী মিলনকে আটক করে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ ঘটনায় মিলনের ছোট ভাই হুমায়ন কবির বাদি হয়ে চৌগাছা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৯, তারিখ ২৫-১২-২০১৯। পুলিশ আটক মিলনের ১৬১ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করলে তার মা-বাবাকে হত্যার কথা স্বীকার করে। ২৬ ডিসেম্বর পুলিশ মিলনকে আদালতে পাঠালে তিনি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মামুনুর রহমানের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে মা-বাবাকে কুপিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় আদালত তাকে জেল হাজতে আটক রাখার নির্দেশ দেন।

পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এসএম এনামুল হক তদন্তপূর্বক সাক্ষীদের জবানবন্দী রেকর্ড করে ২০২০ সালের ৩ জুন তারিখে মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। পরবর্তীতে মামলাটি জেলা ও দায়রা জর্জ আদালতে পাঠানো হয়। এ পর্যায়ে মামলাটি বিচারের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জর্জ সপ্তম আদালতে পাঠানো হয়। সাক্ষীদের স্বাক্ষ্যগ্রহণ ও দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০২৪ সালের ৩০ জুন রোববার বিচারক জনাব জুয়েল অধিকারী মামলার রায় দেন। রায়ে আদালত মামলার একমাত্র আসামি হাবিবুর রহমান মিলন ওরফে মিলন উদ্দীনকে ফাঁসির আদেশ দেন।

রায় পাওয়ার পর মামলার বাদি হুমায়ন কবির সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, জেল থেকে বিভিন্ন লোক ফিরে এসে আমাকে বলেছে মিলন যদি বের হতে পারে তাহলে আমাকেও মা-বাবার মতো খুন করে ফেলবে। সে কারণে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম। আজকে রায় পেয়ে চিন্তুামুক্ত হয়েছি। আদালত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত থাকা মিলনের চাচা আজিজুর রহমান বলেন, ভাই-ভাবির হত্যার বিচার পেয়ে খুশি হয়েছি। তবে তাদের হারানোর বেদনাটা মনের মধ্যে থেকেই গেছে।

বাদি হুমায়নের দাদা আব্দুল লতিফ পন্ডিত বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ আদালতের বারান্দায় ঘুরছি। আজ রায় শুনে খুশি হয়েছি।

চৌগাছা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘এই যে একটি ন্যায় বিচার হলো এ কারণে সকল অপরাধিদের জানা উচিত অপারাধ করে কেউ পার পেয়ে যেতে পারে না। তিনি মামলা সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।’

মামলা পরিচালনাকারী পাবলিক প্রসিকিউটার অ্যাডভোকেট সৈয়দ কামরুল ইসলাম বলেন, আসামির শাস্তির জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছি। আজ মামলার রায় পেয়ে ভালো লেগেছে। একজন অপরাধিকে শাস্তির আওতায় আনতে পেরে খুশি হয়েছি।


আরো সংবাদ



premium cement