২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

চুয়াডাঙ্গায় তিন ফসলের আবাদে বদলে গেছে দোয়াল্লিন মোল্লার ভাগ্য

চুয়াডাঙ্গায় তিন ফসলের আবাদে বদলে গেছে দোয়াল্লিন মোল্লার ভাগ্য - নয়া দিগন্ত

২০০৩ সাল। পরিবারের ওপর অভিমান করে বাড়ি ছেড়েছেন কৃষক দোয়াল্লিন মোল্লা। এরপর থেকে চাষাবাদ শুরু করেন পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া নিজের দেড় বিঘা জমিতে। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে একই জমিতে শুরু করেন তিন ফসলের আবাদ। আর এতেই ভাগ্য বদলে যায় কৃষক দোয়াল্লিন মোল্লার। জমিতে আগাছা দমন ও আদ্রতা ধরে রাখতে তিনি ব্যবহার করেন মালচিং পেপার। কলার মোচাতে ব্যবহার করেন ব্যাগিং প্রযুক্তি। পোকা দমনে জন্য রয়েছে ফেরোমন ফাঁদ। প্রশিক্ষিত ও আধুনিক কৃষক হিসেবে ইতোমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ হাটখোলা বাজারের আনোয়ার হোসেন মোল্লার ছেলে তিনি। কৃষি পরিবারের সন্তান তাই ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে যুক্ত হয়েছেন কৃষিকাজে। ২০০৩ সালে পরিবার থেকে পৃথক হন। পৈত্রিক সূত্রে নিজের ভাগে পেয়েছেন দেড় বিঘা জমি। ওই জমিতে চাষবাদ দিয়েই শুরু করেছেন কৃষিকাজের পথ চলা। তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি দোয়াল্লিন মোল্লাকে। পরিশ্রম আর লক্ষ্য থাকলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ যে সুগম হয়, তারই প্রমাণ দিলেন তিনি।

বর্তমানে তিনি আট বিঘা জমির মালিক এবং সব জমিতে তিনি বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ করেন। চলতি মওসুমে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, আলু, রসুন, একাঙ্গী, ঝাল, করলা, মাস কলাই, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ফিলিপাইনের গেন্ডারীর আবাদ করেছেন দোয়াল্লিন মোল্লা। শুধু সবজির আবাদ করেই থেমে থাকেননি তিনি। তার জমিতে রয়েছে আম, কাঁঠাল, লিচু ও মেহগনির গাছ।

এ বিষয়ে দোয়াল্লিন মোল্লা বলেন, ‘জমিতে একই ফসল বার বার আবাদ না করে ভিন্ন ভিন্ন রকমের ফসল আবাদ করেছি। একটি জমিতে যেমন রয়েছে লাউ, আবার অন্য জমিতে মাশকলাই, আলু ও বেগুন। আর ২৫ শতক জমিতে আবাদ করেছি এক সাথে তিন ফসল। ইউটিউবে কৃষি বায়োস্কোপের ভিডিও দেখেই আমি এক জমিতে বিভিন্ন আবাদের ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হয়েছি। ভিডিওতে দুই বছর আগে পেয়ারা বাগানে দুই সারির মাঝখানে একাঙ্গীর আবাদ করা দেখেছিলাম। এই বছর চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে নিজে ঝুঁকি নিয়ে কলা, মরিচ ও একাঙ্গী আবাদ শুরু করি। প্রথমে মনে হচ্ছিল তিনটি ফসল একসাথে হবে না, এখন দেখছি সবগুলোই ভালো হয়েছে। এরমধ্যে ৯০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করা হয়েছে, আরো বিক্রি হবে। ৫০ থেকে ৬০ মণ একাঙ্গী পাওয়া গেলে দুই হাজার টাকা মণ হিসেবে সেখান থেকে এক লাখ টাকার বেশি বিক্রি হবে। কলা বিক্রি করে প্রায় দুই লাখ টাকার বেশি পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। কলা গাছের চারা বিক্রি করেও পাওয়া যাবে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।’

দোয়াল্লিন মোল্লা আরো বলেন, ‘আমি ফসলে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করি না। চলতি মওসুমে একই জমিতে তিন ফসল আবাদ করে প্রায় ১০ লাখ টাকা লাভ করেছি। আলুর আবাদ শেষ হলে পটলের চারা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

এলাকাবাসী বলেন, দোয়াল্লিন মোল্লা একই জমিতে তিনটি ফসল আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। তিনি কোনো কীটনাশক ব্যবহার করেন না। তাকে দেখে এলাকার বিভিন্ন কৃষকও ঝুঁকছেন তিন ফসলের আবাদে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, ‘এক জমিতে তিনটি ফসল আবাদ করেছেন দোয়াল্লিন মোল্লা নামের একজন কৃষক। তার বিষমুক্ত এই চাষাবাদ ইতোমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। আমি তার ফসলি জমি পরিদর্শন করেছি। দোয়াল্লিন মোল্লার সবজির জমি থেকে প্রধান সড়কে আসার জন্য একটি পাকা রাস্তার প্রয়োজন এ ব্যাপারে তিনি জানিয়েছেন। আমি তালিকায় তার নাম দিয়েছি। বরাদ্দ আসলে পাকা রাস্তা করে দেয়া হবে। ইতোমধ্যে তাকে সরকারিভাবে সহযোগিতাও করা হয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলী হাসান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা জেলায় বছরে প্রায় এক হাজার ৬৬৩ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়ে থাকে। আমাদের এখানে যাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান আছে, তারা কলা আবাদের জমিতেই কয়েকটি আবাদ করছেন। তবে একটি প্যাটাম (এক ধরনের মাল্টি লেয়ার মিক্সড ক্রপিং টেকনিক, যেখানে একাধিক ফসল একই জমিতে, একই সময়ে চাষ করা হয়) খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। কলা বাগানের মধ্যে মরিচ ও একাঙ্গী চাষ করে লাভবান হচ্ছে। এটি খুবই লাভজনক। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষকরা যেন এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তাদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে এক দিকে যেমন কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন, তেমনি বর্ষাকালে মরিচের সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement