০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`

মিল চালু দুরে থাক, বকেয়ার কোনো খবর নেই

- ছবি : সংগৃহীত

মিল বন্ধের সময় বলা হয়েছিল আগস্টের মধ্যে এককালীন সকল বকেয়া পরিশোধ করা হবে। প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে চালু করা হবে। কিন্তু মিল চালু দুরে থাক, দুই মাস চলে গেলেও এখনো খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত সাতটি জুট মিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়া পাওনার টাকা পরিশোধ করা হয়নি। বন্ধের সময় কেবলমাত্র দুই মাসের (জুন-জুলাই) বেসিকের ২৬ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বেতন ও গ্র্যাচুইটিসহ বকেয়া পাওনা না পাওয়ায় চরম হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করছে শ্রমিক পরিবারগুলো।

সরেজমিনে খালিশপুরের সবচেয়ে বড় ক্রিসেন্ট জুটমিলে গেলে সেখানে দেখা গেলো, প্রধান গেট জুড়ে শ’খানেক শ্রমিকের জটলা। কেউ নোটিশ বোর্ডের দিকে তাকিয়ে। কেউ সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। কেউ বকেয়া পাওনা দিবে কী না তা জানতে সিবিএ নেতাদের সাথে আলোচনা। তবে সবার চোখেমুখে ক্ষোভ আর হতাশা। আক্ষেপের সাথে বলতে থাকেন, অভিযোগ শোনার যেন তাদের কেউ নেই। মিলের কোনো কর্মকর্তারও দেখা পাওয়া যায় না। একমাত্র সাংবাদিকরাই আমাদের ভরসা। দু’কলম লিখে আমাদের সহযোগিতা করেন, যাতে দ্রুত বকেয়া পেতে পারি।

মিলের বেসিং বিভাগের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক মনসুর আলী বলেন, মিল বন্ধের সময় দুই মাসের (জুন-জুলাই) বেসিকের ২৬ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু বেতন ও গ্র্যাচুইটিসহ অন্যান্য কোনো টাকা পরিশোধ করা হয়নি। আমাদের গত বছরের ছয়টি বিলও বাকি। নতুন করে মিল চালুরও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। আমরা এখন চরম হতাশার মধ্যে জীবনযাপন করছি।

মিলের সিবিএ নেতা শেখ ফরিদ হতাশার সুরে বলেন, আমাদের ইস্তফার কোনো কার্যকারিতা পাচ্ছি না। বকেয়া টাকারও কোনো খবর নেই। তারপরও এখনো আশা নিয়ে আছি বকেয়া টাকা একসাথে পাবো।

আরেক শ্রমিক গোলাম মোস্তফা বলেন, উপায় না পেয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া সহ সংসার চালাতে ভ্যান-রিকশা চালিয়ে দিন কাটাচ্ছি। বকেয়া টাকাগুলো না পেলে কিভাবে সামনের দিনগুলো চলবে তা জানি না।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) মোঃ কালাম মল্লিক বলেন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা এখনো পরিশোধ করা হয়নি। শ্রমিকদের বকেয়া ছয়টি বিলের ব্যাপারেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি বলেন, বন্ধ ঘোষিত মিল চালুর ব্যাপারেও আমাদের কিছু জানা নেই।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়ক (লিয়াজোঁ অফিসার) মোঃ গোলাম রব্বানী বলেন, অবসরপ্রাপ্ত আট হাজার ১০০ শ্রমিকের দুই মাসের বেসিকের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তবে বেতনসহ অন্যান্য বকেয়া এখনো পরিশোধ করা হয়নি। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু জানা নেই।

উল্লেখ্য, ক্রমাগত লোকসানের কারণে গত ২৫ জুন খুলনা অঞ্চলের নয়টিসহ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর ২ জুলাই পাটকল বন্ধসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় শ্রমিকদের অবসায়নের প্রজ্ঞাপন মিলে মিলে নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেয়া হয়। খুলনা অঞ্চলের বন্ধ হওয়া নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল হচ্ছে, ক্রিস্টে জুট মিল, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, স্টার জুট মিল, ইস্টার্ন জুট মিল, আলিম জুট মিল, জেজেআই জুট মিল ও কার্পেটিং জুট মিল।


আরো সংবাদ



premium cement