২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

খুলনায় প্রবল জোয়ারে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ আটকানোর কাজ করছেন। - ছবি : ইউএনবি

অমাবস্যার প্রবল জোয়ার এবং গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির ফলে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রা ও পাইকগাছার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে।

শুক্রবার জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে কয়রায় চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। কপোতাক্ষ আর কয়রা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়েছে ২ নং কয়রা, গোবরা, ৩ নং কয়রা ও বেদকাশি গ্রাম। এর আগে বুধবার উপজেলার কাজী পাড়া, পুটিহারী, হরিণখোলা, কাশিরহাট খোলা ও ঘাটাখালি প্লাবিত হয়।

গাজী পাড়ার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমফানের পর কোনোমতে ঘর মেরামত করে বসবাস শুরু করেছিলাম। কিন্তু জোয়ারের পানিতে ঘরবাড়ি ফের প্লাবিত হয়ে পড়েছে।’

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ করে জোয়ারের অতিরিক্ত পানি বাঁধ উপচে বিভিন্ন গ্রামে প্রবেশ করেছে। এতে নতুন করে ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ২৫০০ পরিবার সংকটে পড়েছে। সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ আটকানোর কাজ শুরু করেছে।’

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জোয়ারের পানির চাপে ঘাটাখালী এবং ২ ও ৩ নং কয়রায় বাঁধ ভেঙে গেছে। কিছু জায়গায় বাঁধ ও পাকা সড়ক উপচে গ্রামে গ্রামে পানি প্রবেশ করছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘পানির চাপ কমে গেলে এসব স্থানে প্রয়োজনীয় মেরামত করা সম্ভব হবে। আর বিভিন্ন স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমের কাজে বস্তা সরবরাহ করা হচ্ছে।’

এদিকে, পাইকগাছা উপজেলায় শিবসা নদীর পানির চাপে হাড়িয়ার বাঁধ ভেঙে বুধবার মাজরাবাদ, বয়ারঝাপা ও টেংরামারী গ্রাম প্লাবিত হয়। গত দুই দিনে অমাবস্যার প্রবল জোয়ারের পানির চাপে চারটি ইউনিয়নের সাতটি স্থানে ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে ও উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে সাময়িকভাবে বাঁধ মেরামত করা হলেও বেতবুনিয়ার আবাসন প্রকল্পের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানির মধ্যে বসবাস করছে। জোয়ারের পানিতে উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নে বেতবুনিয়া আবাসন এবং গুচ্ছগ্রাম পানিতে থৈ থৈ করছে। একই ইউনিয়নের টেংরামারী ও ভাঙা হাড়িয়ার ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে পাঁচ হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে ফসল ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া দেলুটি ইউনিয়নের চকরি-বকরি বদ্ধ জলমহল ও গেওয়াবুনিয়ার ওয়াপদার বাঁধ উপচিয়ে জোয়ারের পানি এলাকায় প্রবেশ করেছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিপন মন্ডল বলেন, ‘দ্বীপবেষ্টিত দেলুটি সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার। বুধবার গদাইপুরের কচুবুনিয়া ও লতার কাঠামারীর ওয়াপদার রাস্তা উপচে জোয়ারের পানিতে শত শত বিঘা চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়।’

গ্রামবাসীদের সহায়তায় ভাঙা হাড়িয়ার ভাঙন মেরামত করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এসএম এনামুল হক।

ইউপি সদস্য কল্যাণী মন্ডল বলেন, বাঁধ ভেঙে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকায় দ্রুত টেকসই বাঁধ দেয়ার বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী মো. ফরিদউদ্দীন জানান, ‘এর আগে চার দফায় সরকারি ও স্থানীয়ভাবে বাঁধ মেরামত করা হলেও তা টেকসই না হওয়ায় বারবার পাইকগাছার এ এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। বাঁধ মেরামতের জন্য তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement