হতদরিদ্রদের পাশে ঢাকা কলেজের ’৮৫ ব্যাচের ছাত্ররা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:৪১, আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫:৪৯
কথা ছিল রাজধানী থেকে অনেক দূরে বন্ধুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বেড়ানো। ব্যস্ত জীবনে একটু সময় কাটানো আর জমিয়ে আড্ডা দেয়া। কলেজ জীবনের এসব বন্ধুদের সাথে অনেকদিন পর দেখা-সাক্ষাৎ, প্রায় ত্রিশ বছর তো হবেই। এখন প্রতিষ্ঠিত জীবনে তাদেরকে খুঁজে পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পাওয়া হারানো কলেজবন্ধুদের নিয়ে নানা উছিলায় বের করা হচ্ছে আড্ডার ফুসরৎ। কারো সুখবরে কিংবা দুসংবাদেও পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে। আর সে হিসাবে এবার ঢাকা কলেজের ’৮৫ ব্যাচের বন্ধুদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফকরুল আলমের গ্রামের বাড়িতে যাওয়া।
জুলাইয়ের এক ফাঁকে প্রায় ২০ জনকে নিয়ে যায় মোহাম্মদ ফকরুল আলম তার প্রাণের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার প্রাগপুরে। ঢাকায় বড় হওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হলেও গ্রামের বাড়িকে ভুলতে পারেনি সে। কারণ সেখানে তার মা শুয়ে আছেন। আর সেজন্য বারবার রাজধানী থেকে সুদূর কুষ্টিয়ায় নিয়ে যাওয়া হল বন্ধুদের।
এ ব্যাপারে মোহাম্মদ ফকরুল আলম বন্ধুদের বলে, ‘ইচ্ছে করলে তো তোদের ঢাকায় নিয়ে আড্ডা দিতে পারতাম। কিন্তু মা আর প্রিয় গ্রামের টানে এখানে প্রিয় বন্ধুদের নিয়ে আসা।’
কিন্তু বন্ধুরা কি সেখানে শুধু আড্ডা দিয়েই চলে যাবে? তা কি করে হয়! খাওয়া-দাওয়া আর ফূর্তি করে চলে গেলেই হবে! দেশ ও জাতি বিশেষ করে হতদরিদ্র মানুষের জীবন নিয়ে কিছু একটা করতে হবে।
এদের মধ্যে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, অন্যজন প্রকৌশলী মো: সাব্বির হোসেন প্রাগপুর গ্রামে ঘুরে খুঁজে বের করে হতদরিদ্র কিছু মানুষের খোঁজ। আর এসব হতদরিদ্র মানুষের অভাবনীয় দুঃখ-দুর্দশা দেখে তাদের মনে দাগ কাটে। আর তাই তাদের পাশে দাড়ানোকে এদু’জন একটা কর্তব্য মনে করল।
প্রাগপুরে একেবারে দরিদ্র তাঁতীদের পাশে দাঁড়ানোকে একটা কর্তব্য মনে করে সেখানে চুটিয়ে আড্ডা বাদ দিয়ে প্লান-পরিকল্পনা করল সারাদিন। সেমতে তারা প্রথম ধাপে ১৭ জনকে বাছাই করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার মনস্থির করে। এজন্য প্রস্তাব দেয় উদ্যোগী দু’জন, বাকি বন্ধুরা যেন দরিদ্র তাঁতীদের কিছু একটা করে, পাশে দাঁড়ায়, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ব্যাস! আর কি, সবাই মিলে একটা ফান্ড গড়ে তুলে দেয় ড. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আর প্রকৌশলী মো: সাব্বির হোসেনের হাতে।
গত ৩০ আগস্ট জুমার নামাজের পর ফকরুল আলমের বাড়ি চত্বরে ১৭ জন দরিদ্র তাঁতীকে তাদের ঋণগ্রস্ত জীবন থেকে উদ্ধারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তবে তা ঋণ ছিল না, ছিল সম্পূর্ণ অফেরতযোগ্য সহযোগিতা। আশ্বাস দিয়ে আসা হয় তাদের জীবনে সামনের দিনগুলোতেও পাশে দাঁড়াবে। যে কোনো বিপদে তারা যেন ঢাকা কলেজের ’৮৫ ব্যাচের ছাত্রদের স্মরণ করেন।
উল্লেখ্য, প্রাগপুর ইউনিয়নে প্রায় চার শ’ তাঁতী আছে। এদের প্রায় সবাই নারী। কিন্তু অনেক গরিব। বিভিন্ন ভাবে ঋণ নিয়ে তারা তাদের তাঁতকর্মকে নিয়ে বেঁচে আছেন। একটু সহযোগিতা পেলেই তাদের জীবন পাল্টাতে পারে। আর তাদের জীবনকে পাল্টাতেই এবার ঢাকা কলেজের ’৮৫ ব্যাচের ছাত্ররা পাশে দাঁড়াল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা