২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ শাবান ১৪৪৬
`

কুয়েটে ছাত্ররাজনীতির দ্বন্দ্বে আহত ৫০, হাসপাতালে ১০

কুয়েটে দফায় দফায় সংঘর্ষে গুরুতর আহত ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে - ছবি : সংগৃহীত

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্ররাজনীতির দ্বন্দ্বে ৫০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর ১০ জনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে শুরু হওয়া সঙ্ঘাত এ রিপোর্ট লেখার সময় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। অতীতে ক্যাম্পাসে রাজনীতির নামে ছাত্রলীগের গুণ্ডামি, নোংরামি ও সীমাহীন অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এমনকি তাদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনে একজন শিক্ষক পর্যন্ত মারা যান। বিপ্লবের পর বাংলাদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল এখানে আর ছাত্র রাজনীতি ফিরবে না। কিন্ত সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সোমবার থেকে ছাত্রদল কুয়েটে সদস্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ শুরু করে। গতকাল দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে ভিসির কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে। পথিমধ্যে ছাত্রদলের কর্মীদের সাথে মুখোমুখি হলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, এ সময় কুয়েটের পকেট গেট দিয়ে বহিরাগত কিছু লোক ধারালো অস্ত্র, রামদা, চাপাতি, লোহার রড নিয়ে প্রবেশ করে। তারা ছাত্রদলের কর্মীদের সাথে একত্রিত হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামালা চালায়। এরপর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা ক্যাম্পাস। সাধারণ ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে ছাত্রদল কর্মীরা পালিয়ে গেলেও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সাথে কুয়েটের আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের সাথে নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পাল্টা হামলা করে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও বৃষ্টির মতো ইট পাটকেল নিক্ষেপে একের পর শিক্ষার্থী রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাদেরকে কুয়েট মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। অপরদিকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১০ শিক্ষার্থী হলেন প্রীতম বিশ্বাস, শাফি, নাফিস ফুয়াদ, সৌরভ, তাওহিদুল, ইউসুফ খান সিয়াম, দেবজ্যোতি, মাহাদি হাসান, নিলয় ও মমতাহিন।

কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে দুপুর ১টায় আমরা সমাবেশ ডেকেছিলাম। সেখানে বহিরাগতদের নিয়ে ছাত্রদল হামলা চালিয়েছে। জানা গেছে, কুয়েটের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইফাজ ছাত্রদলের হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে। সংঘর্ষের শুরুতে ছাত্রদল কর্মীরা বলেছিল, বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোনো পুলিশ প্রশাসন ক্যাম্পাসে আসবে না। তোদেরকে রক্ষা করবে কে? এই বলে তারা হামলা শুরু করে। সংঘর্ষ শুরুর দীর্ঘ সময় পরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, সেনা বাহিনীর সদস্য ও এপিবিএন, বিজিবি ও নৌ কন্টিনজেন্ট সদস্যরা কুয়েটে আসেন। এ সময় ছাত্ররা কুয়েটের মেইন গেট আটকে দিয়ে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। দুপুর ১টায় সংঘর্ষ শুরুর দীর্ঘ চার ঘণ্টা পর বিকেল ৫টায় কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে এলো এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।’

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিব বলেন, ‘পরিস্থিতি অতি শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আসবে। আমার কুয়েটের ভিসিসহ সব পক্ষের সাথে কথা বলেছি। স্থানীয়দের সাথেও কথা হয়েছে। এটা আরো মারাত্মক রূপ যাতে নিতে না পারে সেই চেষ্টা করছি।’

অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা জেলা ও মহানগর শাখা কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৮টায় নগরীর শিববাড়ি মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল আহ্বান করে।


আরো সংবাদ



premium cement