চার দিনেও উদ্ধার হয়নি দুবলার অপহৃত ১৫ জেলে
- শরণখোলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা
- ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:২৯
অহরণের চার দিন পার হলেও বাগেরহাটের বঙ্গোপসাগরের মান্দারবাড়িয়া এলাকা থেকে অপহৃত ১৫ জেলের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অপহৃত জেলেদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করছে কোস্টগার্ড ও বন বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে এ তথ্য জানিয়েছে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া সেল।
এদিকে, অপহৃত জেলেদের উদ্ধার ও সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে দুবলার চরের ফিশারমেন গ্রুপ ও শুঁটকি পল্লীর জেলে সমিতি। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও র্যাবের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
গত রোববার (২৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বনদস্যু মজনু বাহিনীর অস্ত্রধারী দস্যুরা সাগরে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত জেলেবহরে হানা দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তারা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একে একে ১৫টি ট্রলার থেকে ১৫ জেলেকে তুলে নেয়। একপর্যায়ে সব ট্রলারের জেলেরা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলে দস্যুদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে একটি বিদেশী বন্দুকসহ তিন দস্যুকে আটক করতে সক্ষম হন। এ সময় দস্যুদলের অন্য সদস্যরা ১৫ জেলেকে নিয়ে পালিয়ে যায়। অপহৃত সবাই পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের আলোরকোল শুঁটকি পল্লীর জেলে।
আলোরকোল শুঁটকি পল্লীর চাকলা বেল্ট (সাতক্ষীরা অঞ্চলের জেলে সংগঠন) জেলে সমিতির সভাপতি মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ জানান, দীর্ঘ দিন পর দস্যুদের আবির্ভাব ও জেলে অপহরণের ঘটনায় শুঁটকি পল্লীতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন শুঁটকি উৎপাদনকারী চারটি চরের প্রায় ১২ হাজার জেলে। তারা মাছ শিকারে গভীর সাগরে যেতে এবং রাতে অবস্থান করতে ভয় পাচ্ছেন। চার দিনেও জেলেদের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় উৎকণ্ঠায় পড়েছেন তাদের পরিবার ও মহাজনরা।
অপহৃত জেলেরা হলেন শাহ আলম, আজাহারুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, আরাফাত হোসেন, আলমগীর হোসেন, শাহাজান গাজী, রাসেল, শাহজাহান ঢালী, হাফিজুর রহমান, শাহিনুর আলম, মতিয়ার সরদার, খান রফিক, রিপন মোড়ল, নুরে আলম ও নাথন বিশ্বাস। এদের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি, তালা, বাগেরহাটের রামপাল, খুলনার পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বলে জানিয়েছেন আব্দুর রউফ।
দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অপহৃত জেলে উদ্ধার ও দস্যুদমনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে খুলনা র্যাব-৬-এ আবেদন করা হয়েছে। এর আগে, গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবরে একটি স্মারকলিপি দিয়েছি।’
কামাল আহমেদ বলেন, ‘দস্যুদের সাথে যোগাযোগের জন্য তাদের দু’টি মোবাইল নম্বর দিয়েছে। নম্বর দুটি হলো- ০১৩২৭৩৫৯০৯৯ এবং ০১৯৪৭৩৭১১২৯। কিন্তু এই নম্বরে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ ঘটনার পর থেকে জেলেরা সাগরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। শুঁটকি পল্লীর জেলে-মহাজন সবাই আতঙ্কে আছে।’
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আলোরকোল শুঁটকি পল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জেলেদের নিরাপত্তায় সাগরে টহল জোরদার করা হয়েছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে অপহৃত জেলেদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’
এ ব্যাপারে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের মোংলা সদর দফতরে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিডিয়া সেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দস্যুদের অবস্থান শনাক্ত করার জন্য আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ কাজ করছে। সঠিক তথ্য পেয়ে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হবে। তাছাড়া আমাদের নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে।’