ক্ষমতায় গেলে নারীদের যোগ্যতা অনুসারে কাজে লাগাবে জামায়াত : আমির
- এম. আইউব, যশোর অফিস
- ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:১১, আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:১৮
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘কেউ কেউ জামায়াত রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে নারীকে ঘরবন্ধী করা হবে বলে অপপ্রচার করে। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের যোগ্যতা অনুসারে কাজে লাগানো হবে। কোরআনের রাজ কায়েম হলে নারীরা সম্মানিত হবেন।’
শুক্রবার সকালে যশোর ঈদগাহ ময়দানে জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দেশে বৈষম্য থাকবে না উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘অমুসলিমরা যথাযথ নিরাপত্তা পাবেন। এদেশে চাঁদাবাজ দখলদার থাকবে না। থাকবে না কোনো বৈষম্য। ফ্যাসিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ আধিপত্যবাদ মানবে না। মানবিক বাংলাদেশ হবে। আমরা ক্ষমতা না, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সকলের সহযোগিতা চাই।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও স্বাধীনতার অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ করলে কথা বলে না। তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই প্রতিশোধ নিয়েছে। গত ১৫ বছর এই দলটি গায়ের জোরে গদি দখল করেছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বড়ি বিক্রি করে। অথচ যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তখন কোনো কথা বলে না। জবাব দেয় দেশপ্রেমিকরা। জামায়াত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার এদেশকে এক প্রকার ধ্বংস করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। ব্যাংকে টাকা নেই। রিজার্ভ শূন্যের কোটায়। ব্যবসায়ীদের মধ্যে হাহাকার। মানুষ এক প্রকার আগুন খাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা তাতে বাজারে যাওয়া দায় হয়েছে। তারা সিন্ডিকেট করেছিল। তবে একটি সিন্ডিকেট পালালেও নতুন করে সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে। নতুন করে আবির্ভাব হচ্ছে চাঁদাবাজ ও দখলদার। ৫ আগস্টের পর নতুন এই বাংলাদেশে চাঁদাবাজ ও দখলদার থাকবে না। এসবের মধ্যে আশার কথা হচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা হলেও রিজার্ভ বাড়িয়েছে। ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচারের আমলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামায়াত। এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের তারা হত্যা করেছে। সারাদেশে কার্যালয়গুলো বন্ধ করে দিয়েছে। লাখ লাখ মামলা করেছে। শেষ পর্যন্ত সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে। তারা বাংলাদেশকে জমিদারি নিয়েছিল। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। জামায়াত ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্র ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখে। সংগঠনকে যদি আল্লাহতায়ালা রাষ্ট্র ক্ষমতার জন্য কবুল করেন তাহলে সব নাগরিককে সমান চোখে দেখবে। আকাশ-পাতাল ব্যবধান থাকবে না। কারো অধিকার খর্ব করা হবে না।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘যশোর একটি পুরাতন জেলা। এখানে এখনো কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি মেডিক্যাল কলেজ থাকলেও নেই কোনো পার্ক, জলাধার। অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও নেই। এই শহরকে নগরে পরিণত করা দরকার। সারাদেশে সুষম উন্নয়ন হওয়া দরকার। কোনো জেলা যেন উন্নয়ন বঞ্চিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজীজুর রহমান।
জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেন ঝিনাইদহ জেলা আমির অধ্যাপক আলী আযম, মাগুরার সাবেক জেলা আমির ড. আলমগীর বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য আব্দুল মতিন, সাতক্ষীরা জেলা আমির শহীদুল ইসলাম মুকুল, নড়াইলের জেলা আমির অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বাচ্চু, মাগুরার জেলা আমির এ বি এম বাকের প্রমুখ।
এতে সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পী অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান ও তরঙ্গশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যরা। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস ও নুর আল মামুন।
সম্মেলনে যোগ দিতে এদিন সকাল ৬টা থেকেই নেতা-কর্মীরা আসা শুরু করেন। সাড়ে ৮টায় কোরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে স্থানীয় নেতারা শুরু করেন বক্তৃতা। ৯টার মধ্যে পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে জনস্রোত আছড়ে পড়ে আশপাশের সব রাস্তায়। লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে শহর।
তবে বিশাল এই কর্মী সম্মেলনের শৃঙ্খলা প্রশংসিত হয়েছে শহরের মানুষের কাছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা