১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় যুবলীগের হামলা, আহত ৬

বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় যুবলীগের হামলা - ছবি : নয়া দিগন্ত

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত যশোরের মণিরামপুরে উপজেলার টেংরামারী বাজারে শোভাযাত্রায় যাওয়ার পথে হামলা করেছে যুবলীগের কর্মীরা। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ছয়জন।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) উপজেলার টেংরামারী বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় হামলাকারীদের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম ও নাজিম উদ্দিন খেদাপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য বলে জানা গেছে।

আহতরা হলেন আব্বাস উদ্দিন (৩৫), রাকিব হোসেন (২২), নজরুল ইসলাম ভুট্টো (৪৫), মাসুদ (২৫), মাসুদ হোসেন (৩৫) ও মনিরুজ্জামান (১৫)। এর মধ্যে আব্বাস, রাকিব, ভুট্টো ও মাসুদ হোসেনকে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলায় আহত আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় যোগ দেয়ার জন্য তারা টেংরামারী বাজারে যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টেংরামারী সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হট্টোগোল দেখে তারা এগিয়ে যান। সেখানে টেংরামারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমকে মারধর করতে দেখলে তা মোবাইলে ভিডিও করছিল আমাদের পক্ষের লোকজন। এটা বুঝতে পেরে হামলাকারীরা তাদের উপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে তাদেরকে এলোপাতাড়ি মারপিট করা হয়। স্থানীয় যুবলীগ নেতা নাজিম, সিরাজুলসহ ২০ থেকে ২৫ জন এ হামলা চালিয়েছে বলে জানান তিনি। ৫ আগস্টের পর থেকে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে এসব ঘটনা ঘটিয়ে আসছে বলে আব্বাস উদ্দিন দাবি করেন।

টেংরামারী সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রধান প্রভাস চন্দ্র ছুটিতে ছিলেন। সরকারী ও বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সবকিছু বিস্তারিত উল্লেখ করে সোমবার প্রধান শিক্ষক প্রধান প্রতিষ্ঠানে এসে যোগদান পত্র দাখিল করে খাতায় স্বাক্ষর করে যান। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় একটি পক্ষ বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় যড়যন্ত্র করে আসছিলেন। সোমবার সকালে তারাই বিদ্যালয়ে আসেন। প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র কেন খাতায় স্বাক্ষর করেছেন মর্মে আমার উপর চড়াও হয়। এরপর একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমসহ আট থেকে ১০ জন মাথায় আঘাত করে। পরে সেখান থেকে বাড়িতে চলে যাই। এ সময় বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য হোসেন আলী বলেন, ‘তাদের কেউ এই ঘটনার সাথে যুক্ত নন। তবে, টেংরামারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র বিগত দিনে বহু অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলেন। যে কারণে পটপরিবর্তনের পর থেকে একদিনও প্রতিষ্ঠানে আসেননি। প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে ইউএনও অফিসে ছয়টি অভিযোগসহ আদালতে মামলা চলছে, যা প্রক্রিয়াধীন। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী ইতোপূর্বে প্রভাস চন্দ্রের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। প্রধান শিক্ষককের পক্ষে এই কর্মকাণ্ডের সার্বিক সহযোগীতা করে আসছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম। ঘটনার দিন একটি পক্ষ নজরুল ইসলাম ভুট্টো, মাসুদ আলম ও মাসুদ হোসেন নামে তিনকর্মীকে মারধর করে।’

খেদাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির সদস্য শামছুজ্জামান শান্ত বলেন, ‘সকালে মনিরামপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে একটি বিজয় শোভাযাত্রা করা হয়। এতে অংশগ্রহণের জন্য খেদাপাড়া ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা টেংরামারী বাজারে যাচ্ছিলেন। একজন স্কুল শিক্ষককে মারপিটের ভিডিও করার অভিযোগ এনে আব্বাস, রাকিব ও মনিরুজ্জামানকে মারপিট করা হয়েছে। হামলার শিকার রাকিব হোসেন খেদাপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ও আব্বাস উদ্দিন খেদাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রার্থী। হামলাকারীদের মধ্যে নাজিম উদ্দিন ও সিরাজুল ইসলাম যুবলীগের সদস্য বলেও তিনি দাবি করেন।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বলেন, ‘সহকারী প্রধান শিক্ষককে হুমকি দেয়া হয়েছে। এটা কখনই কাম্য নয়। এ বিষয়ে ইউএনওর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না বলেন, ‘বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষককে মারপিটের ঘটনাটি শুনেছেন। প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। অচিরেই তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মণিরামপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূর মোহাম্মদ গাজী বলেন, ‘হট্টোগোলের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা করা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement