নামের মিল থাকায় জেল খাটলেন দিনমজুর, ধরাছোঁয়ার বাইরে আসামি
- মহেশপুর (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা
- ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩:৫৬
কথায় বলে নামে-নামে যমে টানে। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহের মহেশপুরে। মাদক মামলার আসামি মাহাবুবের জায়গায় দিনমজুর মাহাবুলকে আদালতে চালান দিয়েছে দামুড়হুদা থানার এসআই মেজবাহুর রহমান। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে মহেশপুর থানা। আসামি শনাক্তে ভুল হওয়ার ব্যাপারে থানা পুলিশ প্রতিবেদন দিলে ১৩ দিন পর দিনমজুর মাহাবুলকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন আদালত।
জানা গেছে, ভুলক্রমে গ্রেফতার হওয়া দিনমজুরের নাম মাহাবুল (২৮)। তিনি মহেশপুর উপজেলার মাইলবাড়িয়া পশ্চিমপাড়ার শাহার আলমের ছেলে। অন্যদিকে মাদক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামির নাম মাহাবুব হোসেন। বাবার নাম আলী বক্র। তার বাড়িও একই গ্রামে। আসামি মাহাবুব একজন মাদককারবারি।
আসামি এবং দিনমজুর দু’জনের নিজের নামের মিল থাকলেও তাদের বাবার নাম ও মায়ের নাম আলাদা। তবে পরিবারের অভিযোগ-গ্রেফতারের সময় দিনমজুরের পরিবার ও এলাকাবাসীর কারো বক্তব্য শোনেননি এসআই মেজবাহুর রহামান।
ভুক্তভোগী মাহাবুল অভিযোগ করে বলেন, ‘দুপুরে ভাত খেতে বসেছি, ঠিক সেই সময় মহেশপুর থানার সহযোগিতায় দামুড়হুদা থানার এসআই মেজবাহুর রহমানসহ দু’তিনজন পুলিশ এসে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যান। এ সময় পরিবারের লোকেরা ও এলাকাবাসী পুলিশ কর্মকর্তার কাছে আপত্তি করেন। দিনমজুর মাহাবুলের নামে কোনো মাদক মামলা নেই বলেও তারা দাবি করেন। তবে পুলিশ তাদের কোনো কথাই শুনতে চাননি। আটকের পরদিন তাকে চুয়াডাঙ্গা আদালতে তোলা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।’
এদিকে ২০১৮ সালের ৯ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদা উপজেলার ইশ্বরচন্দ্রপুর এলাকা হতে ১০০ বোতল ফেন্সিডিলসহ মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের মরহুম সোনা মিয়ার ছেলে শুকুর আলীকে আটক করে বিজিবি। সেই মামলায় পলাতক দেখানো হয় নাটোর জেলার জয়কেষ্টপুর গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে আজবার আলী ও মহেশপুর উপজেলার মাইলবাড়িয়া গ্রামের শাহজামানের ছেলে মাদককারবারি মাহাবুব হোসেনকে। মামলার বাদি ছিলেন বিজিবির দর্শনা কোম্পানী হাবিলদার শওকত আলী।
ফেন্সিডিলসহ আটক হওয়া শুকুর আলী বলেন, ‘আমি মালের ‘জোন’ ছিলাম মালের আসল মালিক ছিলো মাইল বাড়িয়া গ্রামের মাহাবুব হোসেন। কিন্তু এ মামলায় যে মাহাবুলকে পুলিশ ধরেছে তাকে আমি চিনি না।’
স্থানীয় আজিজুর রহমান বলেন, ‘মাহাবুল একজন দিনমজুর। তিনি কোনো দিন মাদকের সাথে জড়িত ছিলো না, আমাদের গ্রামে চিহ্নিত একজন মাদককারবারি আছে তার নাম মাহাবুব। শুধু নামের ভুলে একজন নিরীহ ছেলে ১৩ দিন জেল খেটেছে। এখনো সে মামলার হাজিরা দিচ্ছে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহাবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের গ্রামে মাহাবুব নামে চার থেকে পাঁচজন আছে কিন্তু পুলিশ আসল মাদক মামলার আসামিকে না ধরে একজন দিনমজুরকে ধরে নিয়ে যায়। আমরা গ্রামের অনেকে তখন পুলিশের কাছে সে নির্দোষ এবং প্রকৃত মাদককারবারিকে ধরার অনুরোধ জানালেও এসআই মেজবাহুর আমাদের কোনো কথাই শোনেননি।’
ভুক্তভোগী মাহাবুলের মা তহমিনা বলেন, ‘আমার ছেলে নির্দোষ ছিল। তারপরও পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। প্রতিহিংসার কারণে কতিপয় ব্যক্তি পুলিশকে দিয়ে মাদক মামলার মূল আসামিকে না ধরিয়ে নামের মিলে আমার ছেলেকে ধরিয়ে দেয়। আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, হয়রানির শিকার হয়েছি, আমি নামাজ পড়ে আল্লাহর এই ঘটনার বিচার দেই।
দিনমজুর মাহাবুল অভিযোগ করে বলেন, ‘মিথ্যা মাদক মামলায় আমি ১৩ দিন জেল খেটেছি। সে মামলায় ছয় বছর ধরে এখনো হাজিরা দিতে হয়। শুধুমাত্র নামের মিলে মামলার আসল আসামিকে না ধরে আমাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। আমি এর সঠিক বিচার এবং এই মামলা থেকে মুক্তি চাই।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দামুড়হুদা থানার এসআই মেজবাহুরের কাছে বিষয়টি জানতে চেয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
মহেশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফয়েজ আহম্মেদ বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তার ভুল হওয়ার কথা নয়, নাম এবং বাবার নাম মিল থাকতে হবে। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা