ভালোবাসার দৃষ্টান্ত চিরকুমার জমিদার ২ ভাই এখন ভবঘুরে
- ইয়াছীন আলী সরদার, তালা (সাতক্ষীরা)
- ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৮, আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:০৮
‘শৈশবে লাল মুড়ি, কৈশোরে ঝাল মুড়ি, যৌবনে বধূ নারী’-প্রবাদটি হার মেনেছে দুই ভাই রাম ও লক্ষণের কাছে। রাম ও লক্ষণ দুই ভাই যেন একে অপরের হৃৎপিণ্ড। আর সে কারণে ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের মমত্ববোধ কেড়ে নিয়েছে যৌবনের বধূ নারী। বাস্তবতায় বধূ নারী জুটলো না দুই ভাইয়ের কপালে। শরৎচন্দ্রের সেই ‘দেবদাস’ উপন্যাসের পার্বতীকে তারা হয়তো পায়নি, তবে তা নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই।
ভালোবাসার দৃষ্টান্ত শুধু দুই ভাই। তার একটাই কারণ, ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন, যদিও পৃথক হয় নারীর কারণ। এজন্য ছোটবেলা থেকে দুই ভাই সব সময় একসাথে খাওয়া থেকে শুরু করে সর্বত্র বিচরণ। তাদের দুই ভাইয়ের বয়স এখন যথাক্রমে ৮০ ও ৭৫। অথচ আজ পর্যন্ত দুই ভাই কেউ বিবাহ করে নাই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই ভাই বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ায়। হাতে হাত রেখে বিভিন্ন মন্দিরে ও আশ্রমে। সাদা মনের দুই ভাইয়ের আসল নাম মৃনাল কান্তি বসু ও দীপক কান্তি বসু। কিন্তু এলাকার মানুষ তাদের রাম ও লক্ষণসহ বিভিন্ন নামে ডাকে। মানুষ ভুলে গেছে তাদের আসল নাম।
তাই তো তাদের নাম দিয়েছে সাহেব মানান্তর, অন্ধ সন্ধ ইত্যাদি। ছোট ছেলে-মেয়েরা এ দুই ভাইকে কোনো গ্রামে দেখলে পিছু নেয়। ডাকে তাদের বিভিন্ন নামে। এক সময় খুলনার জেলার পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালীতে সাহেব মানান্তরের পরিবারের সদস্যদের জমিদারি ছিল।
কালের বিবর্তনে আজ আর নেই। কিন্তু চলাফেরায় তাদের ভদ্রতা নম্রতা ও পরিপাটি দেখলে বোঝা যায় তারা সম্ভ্রান্ত পরিবারের। ভদ্রতার নিরিখে আভিজাত্য পরিবারের এ দু’ভাই খুবই অসহায় জীবনযাপন করে থাকে। বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চেয়ে খায়। তাদের পৈত্রিক ভিটা থাকলেও তাদের পাগল বলে সরলতার সুযোগ নিয়ে ভিটে ছাড়া করেছে সমাজের কিছু মানুষ। সহজ-সরল দুই ভাইয়ের আশ্রয়স্থল এখন বিভিন্ন মন্দির ও আশ্রমে।
সকালের আলো ফুটলে দুই ভাই খাদ্যের জন্য বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। কারো কাছে কিছু চায় না। মানুষরা তাদের দেখলে সামান্য পয়সা দেয়। তা দিয়ে তারা খাবার কিনে খায়। সাহেব ও মানান্তরের ছোটবেলা থেকে পথ চলার ধরনটা আজও পরিবর্তন হয়নি। তারা তাদের চিরচেনা সেই রাজহংসী রাজকীয় দুলকিতে সামনে পিছে করে পথ চলে। শিশু-কিশোর, বয়স্ক সবাই তাদের ভালোবাসে। তাদের শেষ বয়সে এখন সরকারি সাহায্য সহযোগীতা খুবই প্রয়োজন। কারণ তারা ভবঘুরে। এখন তাদের চিকিৎসা ও খাবারের বড় প্রয়োজন।