২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন

কালিগঞ্জের প্রবাজপুর শাহী মসজিদ

প্রবাজপুর শাহী মসজিদ - ছবি : নয়া দিগন্ত

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে মুঘল আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক ‘প্রবাজপুর শাহী মসজিদ’। এটি মুসলিম স্থাপত্যের একটি অনুপম নিদর্শন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সুলতানি আমলে নির্মিত প্রবাজপুর শাহী জামে মসজিদ একটি প্রাচীন এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা যা ইসলামি ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। ১১০৪ হিজরী সনের ১৯ রমজান মোতাবেক ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ২ মে তৎকালীন ধুলিহর পরগনায় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রবাজপুর শাহী জামে মসজিদ।

মসজিদটি জ্বীনদের দ্বারা নির্মিত হয়েছে বলে কথিত থাকলেও এটি মূলত, সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে নির্মিত হয়। সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে প্রধান সেনাপতি পারভেজ খাঁ তার সেনাবাহিনীর নামাজের জন্য যমুনা নদীর তীরে মসজিদটি নির্মাণ করেন।

প্রাপ্ত তথ্যে আরো জানা গেছে, প্রধান সেনাপতি পারভেজ খাঁ এই মসজিদটি নির্মাণ করেছেন বিধায় সুবেদার পারভেজ খাঁর নামানুসারে ওই গ্রামের নাম হয়েছে প্রবাজপুর এবং মসজিদটির নামকরণ করা হয় প্রবাজপুর শাহী মসজিদ। মুঘল সুলতানী আমল শেষে দীর্ঘদিন যথাযথ পরিচর্যা না থাকায় মসজিদটি অনেকটা পরিত্যক্ত স্থাপনায় পরিণত হয়। ১৯৬৫ সালে স্থানীয় মুকুন্দপুর গ্রামের সোহরাব আলী পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে মসিজদটি নামাজের জন্য উপযোগী করেন। দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটির বহির্বিভাগের দৈর্ঘ্য ৫২ ফুট ৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৩৯ ফুট ৮ ইঞ্চি। মসজিদটির অভ্যন্তরে ২১ ফুট ৬ ইঞ্চির বর্গাকৃতির একটি নামাজের জায়গা রয়েছে। মসজিদের দেয়ালগুলো ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি থেকে ৭ ফুট পুরু। আর মসজিদের প্রধান দরজাটি ৪ ফুট ৭ ইঞ্চি প্রশস্ত। মসজিদটিতে ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি প্রশস্ত একটি বারান্দা ছিল যা এখন আর নেই।

প্রসঙ্গত, মসজিদটিতে মোট ১০টি দরজা থাকলেও বর্তমানে দরজার নিচের অংশে পাতলা প্রাচীর নির্মাণ করে জানালার আকৃতি করা হয়েছে। তিনটি অলংকৃত মেহরাবও রয়েছে। মসজিদটি চার গম্বুজবিশিষ্ট প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী হিসেবে এখনো সবার নজর কাড়ে।

এদিকে, মসজিদটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ১৯৬৮ সালের পূরাকীর্তি আইন অনুযায়ী স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কিন্তু প্রায় ৫০০ বছর আগে নির্মিত এই মসজিদটি প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে।

স্থানীয় মুসল্লি, মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দসহ সচেতন মহল আশঙ্কা প্রকাশ করছেন দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে ঐতিহাসিক শাহী মসজিদটি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শেখ মাখলুকাত ইসলাম (৬৮) ও স্থানীয় কয়েকজন মুসুল্লি জানায়, ৫০০ বছর আগে মুঘল আমলে নির্মিত প্রবাজপুর শাহী মসজিদে স্থানীয় মুসুল্লি ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে আগত ভক্ত ও দর্শনার্থীরা এখানে নিয়মিত নামাজ এবং জুমআ’র নামাজ আদায় করেন। প্রাচীন এই মসজিদের অবকাঠামো দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। মসজিদের মূল গম্বুজসহ ছাদে ফাঁটল সৃষ্টি হয়েছে। ইটসুড়কির সমন্বয়ে নির্মিত মসজিদের ভেতরের অংশে কারুকার্যখচিত দেয়ালেও জমেছে শ্যাওলা।

মসজিদের মোতাওয়াল্লী এসএম আব্দুল হামিদ এফসিএ (৬৫) জানান, ‘২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি মসজিদের অবকাঠামোগত সমস্যার বিষয়টি লিখিতভাবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরকে অবহিত করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ দুই বছরেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। ঐতিহাসিক নিদর্শন এই মসজিদটি আশু সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবারো ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও বিষয়টি অবগত করে প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগের খুলনা আঞ্চলিক পরিচালক বরাবর আবেদন করা হয়েছিল। কয়েক মাস আগে মসজিদটি পরিদর্শন করে গেলেও সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হয়নি।’


আরো সংবাদ



premium cement