১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩০, ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

নেতা পরিবর্তন না করে নীতির পরিবর্তন করুন : চরমোনাই পীর

সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন চরমোনাই পীর - ছবি : নয়া দিগন্ত

নেতা পরিবর্তন না করে নীতির পরিবর্তন করুন মন্তব্য করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেছেন, ‘বার বার নেতা পরিবর্তন না করে নীতি ও আদর্শের পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে আমাদের বার বার রক্ত দিতে হবে। নেতা পরিবর্তনের মাধ্যমে কখনো শান্তি আসতে পারে না।’

বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর দেশের মানুষ বহুবার রক্ত দিয়েছে, আন্দোলন করেছে কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। দেশে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ কায়েম হয়নি। তাই নিজে পরিবর্তন হয়ে, দেশকে পরিবর্তন করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই ভূখণ্ড মুসলমানরা শাসন করেছে। কিন্তু কিছু মুনাফেকদের কারণে আমরা পরাজিত হয়েছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সে সময় দিল্লীর ষড়যন্ত্রে ৮০ হাজার মাদরাসা ধ্বংস করা হয়েছে। আলেমদেরকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। হাজার হাজার আলেম হত্যা করা হয়েছে। বৃটিশরা যখন দিল্লী দখল করেছিল, তখন ওলী-আওলিয়ারা আন্দোলন করে এই ভূখণ্ড থেকে তাদের বিতাড়িত করেছিল। কিন্তু মুসলমানরা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান পায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হিন্দু জমিদাররা বিশেষ করে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর চিঠি লিখে বাধা দিয়েছিলেন। তারপরও নবাব স্যার সলিমুল্লাহ রহ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘এই উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে মুসলমানরা রক্ত দিয়ে অবদান রেখেছে। তাই এই দেশ মুসলমানদের হলেও অধিকার সবার। পাকিস্তান গঠনের মাধ্যমে মুসলিমদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। সেই পাকিস্তান গঠনেও নেতৃত্ব দিয়েছিল মুসলমানরা। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আবারো বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। দেশের মানুষ আবারো যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মূলমন্ত্র ছিল সাম্য, মানবিকতা, ন্যায়বিচার ও সামাজিক মর্যাদা। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর ৭২ সালের সংবিধানে মূলনীতি হিসেবে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মতো কুফরি মতবাদ চাপিয়ে দেয় ভারত। ভারতের প্রেসক্রিপশনে সংবিধান লেখা হয়। ফলে দেশের মানুষ সাম্য ও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতে থাকে।’

চরমোনাই পীর বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এই দেশটা লুটপাট করেছে। তার মন্ত্রী, এমপি ও সাধাারণ নেতা-কর্মীরা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। যে দেশে শেখ হাসিনার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়, পিয়ন হেলিকপ্টারে ঘোরে, ফরিদপুরের ছাত্রলীগ নেতা দু’হাজার কোটি পাচার করে, মন্ত্রীরা কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি করে, বিদেশে ভূমিমন্ত্রীর হাজার হাজার কোটি টাকার বাড়ি পাওয়া যায় সে দেশের অর্থনীতির আর কি অবশিষ্ট্য থাকতে পারে ?’

তিনি বলেন, ‘হাসিনার আমলে যুবলীগ নেতা সম্রাট সিঙ্গাপুরে কেসিনো খেলে ২০০ কোটি টাকায়, ৯৮ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় এটাই কি দেশের মানুষ চেয়েছিল? যারা আওয়ামী লীগ করে তাদের জন্য সাত খুন মাফ হবে, এটা সাম্যতা হতে পারে না। এজন্য আমরা দেশ স্বাধীন করিনি।

তিনি আরো বলেন, আমরা মুসলিম লীগ দেখেছি, আওয়ামী লীগ দেখেছি, জাতীয় পার্টি দেখেছি, বিএনপি দেখেছি। কিন্তু মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে দেখিনি। তাই আসুন দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হলে, ঘুষ, দুর্নীতি ও কালো টাকার নির্বাচন বন্ধ করতে হলে সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন চাই। দেশে যদি কেউ মডারেট ইসলাম কায়েম করতে চায়, সে বেঈমান হয়ে যাবে। দেশে কারো মনগড়া ইসলাম কায়েম করতে দেয়া হবে না। ৫ আগস্টের পর দেশব্যাপী যারা লুটপাট, চাঁদাবাজী ও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে তাদের প্রত্যাখান করতে জনগনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

বক্তব্য শেষে তিনি দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মার শান্তি কামনায় মোনাজাত করেন।

ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যায় জড়িতদের বিচার, আহতদের ক্ষতিপূরণ, দুর্নীতিবাজদের বিচার ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এ গণসমাবেশের আয়োজন করে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি ডা. এইচ এম মোমতাজুল করীমের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে আরো বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব হোসেন, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক মুফতি আহমদ আব্দুল জলিল, ঝিনাইদহ জেলা সেক্রেটারি প্রভাষক মাওলানা শিহাব উদ্দীন, ওমর আলী, মুহাম্মদ রায়হান উদ্দীন, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল, মাওলানা নিজাম উদ্দীন, মুন্সি মাওলানা মিরাজ হুসাইন, মুফতি নাজির আহম্মেদ, মুফতি মুহাম্মাদ আলী হুসাইন, মাওলানা শহীদুল ইসলাম, মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, মুহাম্মদ ফারুক হোসেন ও এইচ এম নাঈম মাহমুদ।


আরো সংবাদ



premium cement