চৌগাছায় আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্যে দুর্ভোগে এলাকাবাসী
- এম এ রহিম, চৌগাছা, (যশোর)
- ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:০১
যশোরের চৌগাছায় আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্যে দুর্ভোগে মানুষ, বেশি সমস্যায় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরা বাজারে গিয়ে প্রয়োজনের অর্ধেক বাজার করেই ফিরছেন বাড়িতে। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের দুর্ভোগ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে, বিক্রেতাদের আক্ষেপ, আগের মতো বেচা-কেনা হচ্ছে না।
সোমবার চৌগাছার সাপ্তাহিক হাটবার শহরের বড়বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের প্রতিটি হাট-বাজারে শাক-সবজিসহ সব কাঁচা সবজির দাম বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। অনেকেই কাঁচা বাজারে এসেও প্রয়োজনীয় সবজি না নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে বেশি দামেই কিনছেন সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল।
উপজেলার হাকিমপুর, সলুয়া, সিংহঝুলী, পাশাপোল, পুড়াপাড়া, মাশিলা, খড়িঞ্চা, চাঁদপাড়া, নারায়নপুর ও আন্দুলিয়াসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কাঁচা মরিচ, ডিম ও সবজির দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৬০০ টাকা। কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকায়। গত দুই সপ্তাহ আগেও কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি প্রায় ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছেন ক্রেতারা। পাশাপাশি প্রতি কেজি আলু ৬০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচু প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, প্রতি কেজি ঢেঁড়স ৮০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মাঝারি লাউ প্রতিটি ৭০ টাকা, ফুলকপি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, পেঁয়াজ ১২০, শসা ১২০ টাকা ও প্রতি কেজি মুলা ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ডিমের দাম। প্রথমবারের মতো ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিমের দাম রেকর্ড মূল্য ১৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রতি হালি ডিমের দাম ৬০ টাকা, যা সপ্তাহখানেক আগে ছিল ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা।
চৌগাছা বাজারের মুরগী ও ডিম ব্যবসায়ী শ্রী ভবেন কুন্ড জানান, ‘বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আর মুদি দোকানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা দরে। যেখানে মাত্র এক সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ছিল ১৫০ টাকা। যার প্রতি হালি বিক্রি হতো ৫০ টাকায়।’
ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিনে মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বেশি তাই স্বাভাবিকভাবেই খুচরা বাজারেও দাম বেশি।’
চৌগাছা বাজারের গোশত ব্যবসায়ী বিপ্লব হোসেন বলেন, ‘গরু, ছাগল এবং দেশী ও ব্রয়লার মুরগির গোশতের দাম না বাড়লেও মাছের দাম ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে। চৌগাছা শহরের বড় মাছ বাজারসহ উপজেলার বাজারগুলোতে ছোট মাছ নেই বললেই চলে। যেগুলো আছে সেগুলো সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। আবার বড় মাছের দামও অনেক বেশি। ইলিশের ভরা মৌসুমেও দাম ধরাছোঁয়ার বাহিরে। এছাড়া বেড়েছে সব ধরনের চাল ও তেলের দাম। তবে হঠাৎ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে বিক্রিও কমে গেছে।’
চৌগাছা বাজারে বাজার করতে আসা টেঙ্গুরপুর গ্রামের আব্দুল মুন্নাফ কালু মিয়া বলেন, ‘সবকিছুর দাম বাড়লেও আমাদের উপার্জন বাড়েনি। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম এত বেশি যে বাজারে আসতেই ভয় হয়। বাড়ি থেকে যে টাকা এনেছিলাম তাতে অর্ধেক বাজার করে বাড়িতে ফিরে যেতে হচ্ছে। নিত্যপণ্যসহ সব জিনিসের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান তিনি।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হুসাইন বলেন, ‘সবজি উৎপাদনের রাজধানী খ্যাত এ উপজেলায় চাষিদের সবজির আবাদ অতিবৃষ্টির ফলে মরে-পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সবজির সরবরাহ কম থাকায় প্রতি দিনই কাঁচা মরিচ ও সবজির দাম বাড়ছে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে উৎপাদন বাড়লে স্বাভাবিক হবে বাজার।
এ ব্যাপারে চৌগাছা উপজেলা বাজার নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা বলেন, ‘বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। সবজির মৌসুমের শুরুতে অতি বৃষ্টির ফলে সবজি উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। তবে শীতের সবজি বাজারে এলে দাম কমে আসবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা