২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সুন্দরবন থেকে বন্যপ্রাণীর লোকালয়ে প্রবেশ ঠেকাতে বেড়া

- ছবি : সংগৃহীত

সুন্দরবনের প্রাণীদের লোকালয়ে প্রবেশ ঠেকাতে বন ঘিরে নাইলনের বেড়া দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের এ বেড়া দেয়া হয়েছে। আরো ২০ কিলোমিটার বেড়া দেয়ার কাজ চলছে। এই পদ্ধতিতে সুন্দরবন ঘেঁষা লোকালয়ে বাঘ এবং অন্য বন্যপ্রাণীর প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।

বনবিভাগ জানায়, এই বেড়া দেয়ার ফলে মানুষ ও গবাদি পশু বন্যপ্রাণীর হাত থেকে রক্ষা পাবে। আবার বণ্যপ্রাণীও আতঙ্কিত গ্রামবাসীর আঘাত থেকে রক্ষা পাবে।

বন বিভাগ আরো জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের’ অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মেয়াদ ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত। এ প্রকল্পের আওতায়ই নাইলনের বেড়া দেয়া হচ্ছে। গত বছরের অক্টোবরে মাঠ পর্যায়ে বেড়া দেয়ার কাজ শুরু হয়।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ও প্রকল্প পরিচালক ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, সুন্দরবনের যেসব এলাকায় বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব বেশি, সেখানে বেড়া দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাগেরহাটের ধানসাগর, শরণখোলা, সাতক্ষীরার কৈখালী, খুলনার কৈলাশগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় বনের প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা বেড়া দেয়া হয়েছে। আরো ২০ কিলোমিটার এলাকায় একই ধরনের বেড়া দেয়া হবে। বেড়া তদারকির জন্য ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের সদস্যদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে; যাতে বনজীবী কিংবা দুষ্কৃতকারীরা তা ছিঁড়ে না ফেলেন। কোথাও ছিঁড়ে ফেললে তারা যাতে দ্রুত বন বিভাগকে জানান, সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ডিএফও ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, ঝড় ও অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারের সময় পানি বেশি হলে বাঘ ও হরিণ মাটির কিল্লায় আশ্রয় নিচ্ছে। ক্যামেরা ট্রাপিং করে কোন কোন কিল্লায় বন্যপ্রাণী ওঠে, কিভাবে ওঠে, কতক্ষণ থাকে, তা নজরদারির চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এছাড়া বনের ভেতর আরো আটটি মাটির কিল্লা তৈরির প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

তবে নাইলনের বেড়া দেয়ার ব্যাপারে খুলনা নদী রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও পরিবেশ আন্দোলনকারী কুদরত-ই-খোদা বলেন, ‘নাইলনের বেড়া দিয়ে আর কতটুকু সুরক্ষা দেয়া সম্ভব? এছাড়া নাইলন পচনশীল নয়। এটি প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর। এ বেড়া দিয়ে সাময়িকভাবে লোকালয়ে প্রাণীদের প্রবেশ ঠেকানো হয়তো সম্ভব। কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ছাড়া পশু শিকার ঠেকানো সম্ভব নয়।’

একই কথা বললেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), খুলনার সমন্বয়ক বাবুল হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের প্রাণীদের রক্ষার জন্য এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিকতাই যথেষ্ট। কিন্তু তাদের মধ্যে সেই আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। সুন্দরবন ও বনের প্রাণীদের রক্ষার চেষ্টা তাদের মধ্যে দেখা যায় না।’

উপরন্তু তাদের বিরুদ্ধেই হরিণ শিকারের অভিযোগে রয়েছে বলে জানান এই পরিবেশ আন্দোলনকারী।

তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা এবং বন বিভাগের কর্মীদের সততার প্রয়োজন প্রাণীদের রক্ষায়।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement