২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

যেভাবে সফল উদ্যোক্তা হলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম

যেভাবে সফল উদ্যোক্তা হলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম - নয়া দিগন্ত

তিনি মাদরাসাশিক্ষক। প্রচণ্ড পরিশ্রমী ও মেধাবী। মাদরাসার দরিদ্র শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরকে নানাভাবে সহায়তা করার জন্য তিনি গঠন করেন গোরাবা ফান্ড। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই তহবিলে মানুষ টাকা পাঠাতেন। ওই টাকা দিয়েই দরিদ্র শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সহযোগিতা করতেন এই আলেম।

কিন্তু, দেশে যখন বৈশ্বিক মহামারী করোনা আঘাত হানে, তখন যারা গোরাবা ফান্ডে টাকা পাঠাতেন, তারা টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন। তাই বন্ধ হয়ে যায় গোরাবা ফান্ড থেকে সহযোগিতা করাও। শুধু বন্ধ হয় না এই ফান্ড থেকে যারা সহযোগিতা নিতেন তাদের আহাজারি ও আর্তনাদ।

মাদরাসার দরিদ্র-অসহায় ছাত্ররা ফোন দিয়ে বলত, হুজুর, মাদরাসায় বেতন দিতে পারছি না, একটু সহযোগিতা করেন। কোনো শিক্ষক বলতেন, আমার বেশি কিছু লাগবে না, এক কেজি চাল কিনে দেন। গোরাবা ফান্ড তো খালি। একটা পয়সাও নেই। কিভাবে সহযোগিতা করবেন এই আলেম। বিষয়টি অনেক যন্ত্রণা দিত তাকে।

তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি নিজে স্বাবলম্বী হবেন এবং অন্য আলেমদেরকেও স্বাবলম্বী করবেন। এরপরই তিনি গড়ে তুলেন এস কে এম নামে একটি জুতার কারখানা।

ওই আলেমের নাম মুফতি সাইফুল ইসলাম । তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা, আলগীর শুখনী গ্রামের মরহুম সোহরাব মাতুব্বরের ছেলে। তিনি গোপালগঞ্জের জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামপুর মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) এবং ইফতা সম্পন্ন করেন।
এরপরে তিনি মানিকগঞ্জ জামিয়া আরাবিয়া সিদ্দিকিয়া মাদরাসায় তিন বছর শিক্ষকতা করেন।

মুফতি সাইফুল ইসলামের গোরাবা ফান্ড যখন বন্ধ হওয়ার পথে, তখন সহকর্মীদের নিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য নিয়ে কমিশনের ভিত্তিতে বিক্রি করা শুরু করেন তিনি। পণ্যগুলো অনলাইনে যখন ভালোই বিক্রি হচ্ছিল, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন– নিজেই পণ্য বানিয়ে বিক্রি করবেন।

মুফতি সাইফুল ইসলামের ছোট ভাই জুতা তৈরির কাজ করতেন। তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই বড় পরিসরে জুতা তৈরির কাজ শুরু করেন। তাদের এই কোম্পানির নাম দেয়া হয় এস কে এম।

মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, যখন জুতা তৈরির কারখানা করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন আমার কাছে কোনো পুঁজি ছিল না। আমার মা, ছোট ভাই এবং আরো অনেকেই তখন আমাকে সহযোগিতা করেন।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে মাত্র ৮০০ হাজার বিনিয়োগে আমাদের পথচলা শুরু হয়। বর্তমানে আমাদের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৭০ লাখ টাকা। আমাদের কারখানায় ৩০ জন শ্রমিক কাজ করে। এ ছাড়াও আমাদের পণ্য নিয়ে কাজ করছে শতাধিক আলেম।
মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক মাসে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার জুতা বিক্রি হয় আমাদের এই কারখানা থেকে। সারাদেশে প্রত্যেক জেলায় এবং উপজেলায় এস কে এমের ডিলার নিয়োগ চলছে বলেও জানান মুফতি সাইফুল ইসলাম। তবে, তারা আলেম বা দ্বীনদার মানুষ ছাড়া ডিলার নিয়োগ দেন না।

মুফতি সাইফুল ইসলাম আরো বলেন, আমরা জুতা বিক্রির পর থেকে আজ পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে নেতিবাচক কোনো মন্তব্য পাইনি।

তাছাড়া প্রসিদ্ধ আলেম শায়েখ আহমাদুল্লাহ, মাওলানা উবাইদুর রহমান খান নদভি, মাওলানা সাইফুল্লাহসহ শীর্ষ পর্যায়ের আলেমরা আমাদের এস কে এম সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন এবং আমাদেরকে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা আশা করছি, একদিন আমাদের এই জুতা কোম্পানি শীর্ষ জুতার কোম্পানিগুলোর মধ্যে জায়গা করে নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement