রমজানের শেষ দশকের প্রস্তুতি
- উম্মু নুসায়ের
- ১৫ মে ২০২০, ০০:০০
দেখতে দেখতে রমজানের অর্ধেকের বেশি চলে গেল। সামনে আসছে মহিমান্বিত শেষ দশ দিন। অর্থাৎ শেষ দশ দিনের বিজোড় রাত। আমাদের জন্য রয়েছে সবচেয়ে আকাক্সিক্ষত এবং ফজিলতপূর্ণ লাইলাতুল কদর। এই সময় নিজের আত্মার সমৃদ্ধির জন্য সর্বোৎকৃষ্ট সময়। মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আমি কুরআন নাজিল করেছি কদরের রাতে-(আল কদর : ৯)
কদর শব্দটির অর্থ হলোÑ মূল্য, তাৎপর্য বা গুরুত্ব। এ রাতের অসীম গুরুত্বের জন্য এর নাম লাইলাতুল কদর। ইবনু রজব রা: বলেন, ‘নবীজী সা: শেষ দশ দিন এতটাই ইবাদতে মগ্ন থাকতেন পরিবারের সাথেও তার সম্পর্ক থাকত না।’
কদর কথাটির অন্য একটি অর্থ হলো ‘ভাগ্য’। এ রাতে আমাদের ভাগ্য লেখা হয়ে থাকে বলে এর নাম লাইলাতুল কদর। কদরের রাতে এক বছরের সব কিছু ফেরেশতাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। আল্লাহ বলেন, ‘এটি হলো সেই রাত যে রাতে আমার নির্দেশে প্রতিটি বিষয়ে বিজ্ঞচিত ফয়সালা দেয়া হয়’। Ñদুখান : ৪
আমাদের সব ফায়সালা যেহেতু নির্ধারিত হয়ে যায়, এরপর আমরা আমাদের ফয়সালার সুন্দর সমাপ্তির জন্য দোয়া করতে পারি। রাসূল সা: বলেন, ‘হে আল্লাহ আমাদের জন্য আপনি যে ফয়সালা করেছেন তার সুন্দর সমাপ্তি দিন’ Ñমুসনাদে আহমদ
তাকদিরের সাথে দোয়ার সম্পর্ক অন্তর্নিহিত। কেউ যদি দোয়া করে দোয়ার কারণে হয়তো তার চাওয়া পূরণ হবে অথবা কোনো বিপদ দূর হবে। আমাদের প্রিয় নবী সা: এভাবে দোয়া করতেন, ‘আমাকে যা দিয়েছেন তাতে বারাকাহ্ দিন। আমার তাকদিরে নির্ধারিত বিপদ দূরে সরিয়ে দিন। আপনিই তো সবকিছু নির্ধারণ করেন’-তিরমিজি, নাসাই
শবে কদর অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ এ রাতে কুরআন নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, ‘কদরের রাত হাজার রাতের চেয়েও উত্তম’- সূরা কদর : ৩
এ রাতের ইবাদত হাজার মাস বা ৮৩ বছর ৪ মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাতে আমরা কুরআন পড়লে অথবা তওবা করলে অথবা জিকির করলে তা যেন ৮৩ বছর ধরেই করে যাচ্ছি। এই সুযোগ কোনো বোধসম্পন্ন মানুষ অবশ্যই হাতছাড়া করবে না। বরকতময় কদরের আরো একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এ রাতে পৃথিবীতে যত পাথর কণা রয়েছে তার থেকেও বেশি সংখ্যক ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয় এবং জিবরাইল আ: ও তাদের সাথে আসেন। কখনো ভেবে দেখেছেন, জিবরাইল আ: এই পৃথিবীতে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এমন একটি বিশেষ সময় যখন তিনি দুনিয়াতে নেমে আসেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশে’- সূরা আল কদর : ৪
এ মহিমান্বিত রাত ঠিক কোনটি তার রাসূল সা:কে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাসূল সা:-এর কিছু লক্ষণ বলেছেন। যেমন- ‘লাইলাতুল কদর হবে পরিষ্কার আর স্বচ্ছ একটা রাত। মনে হবে যেন সে রাতে একটি উজ্জ্বল চাঁদ উঠেছে’Ñ আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ
এখানে উজ্জ্বলতা চাঁদ থেকে আসবে না। ফেরেশতাদের দুনিয়াতে আসা যাওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলা সে রাতে নূর দিয়ে দেবেন। হাদিসে আরো এসেছে, এটি হবে একটি শান্ত ও প্রশান্ত রাত। না ঠাণ্ডা না গরম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘শান্তি ফজর উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে’- সূরা আল কদর : ৫
সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে যে, আমরা যদি লাইলাতুল কদরকে চিহ্নিত করতে নাও পারি, তার পরেও সে সেই রাতের পূর্ণ নেকি অর্জন করতে পারব। আত-তাবারি এবং ইবনুল আরাবি বলেন, ‘মানুষ যদি এ রাতকে চিহ্নিত করতে না পারে তবুও সে এ রাতে ইবাদতের সওয়াব লাভ করবে’
লাইলাতুল কদরের জন্য একটি বিশেষ দোয়া আমাদের নবীজী সা: শিখিয়ে দিয়েছেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’Ñ হে আল্লাহ নিশ্চয় আপনি পরম ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে ভালোবাসেন সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
এ রাতে আমরা বেশি বেশি ইসতেগফার করব। হতে পারে এ রাতের ইবাদতে আমাদের যে বিপুল সওয়াব অর্জিত হবে সেটাই আমাদের আখিরাতের সাফল্য এনে দেবে। এ সুবর্ণ সুযোগ নেয়ার জন্য আমাদের উচিত সব অলসতা ঝেড়ে আল্লাহর ইবাদতের জন্য বিনয়ের সাথে উঠে দাঁড়ানো। সালাত আদায়ের পাশাপাশি যে ইবাদতে আমাদের প্রশান্তি অনুভূত হয় সেই ইবাদতেই আমরা মশগুল হতে পারি।
আমাদের একটা সাধারণ সমস্যা হচ্ছে আমরা বেশির ভাগই ইবাদতে স্বাদ পাই না অর্থাৎ মনোযোগ রাখতে পারি না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের বেশি বেশি দোয়া করতে হবে যাতে আমরা খুশু-খুজু ইবাদতে পাই। আবু দাউদ এ বর্ণিত সূরা তাওবার শেষ আয়াত ফরজ সালাতের পরে সাতবার সকাল-সন্ধ্যায় পড়লে আল্লাহ ওই ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। ইবাদতে খুশু-খুজু পেতে এই আমল বেশ কার্যকর।
আরো একটি পরীক্ষিত কৌশল যা সাইকোলজিস্টরা বলে থাকেন। যখন মনোযোগ থাকে না কোনো কিছুতে বিশেষ করে পড়াশোনা ধরনের ব্যাপারগুলোতে। তখন ছেড়ে না দিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও পড়ার জন্য বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০-১৫ মিনিট পর ঠিকই মনোযোগ আসে। আমার নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি পরীক্ষার সময়গুলোতে যখন পড়তে ভালো লাগত না। তখন এ কৌশল বেশ কাজ দিত। অর্থাৎ আত্মতৃপ্তি না পেলেও চালিয়ে যাবো হোক সেটা সালাত, জিকির অথবা কুরআন তেলাওয়াত। আল্লাহ তো আমাদের চেষ্টা দেখবেন। এই চেষ্টার জন্য হয়তো আমাদের রহম করবেন। আমরা সালাতে খুশু খুজু ফিরে পাবো। আল্লাহ আমাদের প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। আমিন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা