ইসলামে জাকাত
- ড. মুহাম্মাদ মোহন মিয়া
- ১২ মে ২০২০, ০০:০০
‘জাকাত’ ইসলামী শরিয়াহর একটি অন্যতম রুকন। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি হলো জাকাত। জাকাতের শাব্দিক অর্থ পরিচ্ছন্নতা বা পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি বা আধিক্য ইত্যাদি। আল কুরআনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাকাতের নির্দেশনা ৮২ বার রয়েছে। ‘জাকাত’ শব্দ দ্বারা ৩০ বার, ‘ইনফাক’ দ্বারা ৪৩ বার এবং ‘সাদাকাত’ দ্বারা ৯ বার এই জাকাতের নির্দেশনা রয়েছে। আল কুরআনের ১৯টি সূরায় জাকাতের আলোচনা আছে। জাকাত বলতে ধন-সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দান করাকে বোঝায়। পারিভাষিক অর্থে জাকাত বলতে সাহেবে নিসাবের ধন-মাল, জমির ফসল এবং খনিজসম্পদের ওপর ইসলামী শরিয়াহ নির্ধারিত আবশ্য দেয় সেই অংশকে বোঝায় যা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের নিয়তে, ঈমানের সত্যতার প্রমাণস্বরূপ সম্পদ ও আত্মার পবিত্রতা অর্জন এবং সম্পদের ক্রমবৃদ্ধি সাধনের আশায় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত আটটি খাতে ব্যয়-বণ্টন করার জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট তহবিলে জমা দেয়া হয়। ইসলামী শরিয়াহতে মুসলিমদের জমিতে উৎপাদিত ফসলের জাকাতকে বলা হয়েছে ‘ওশর’। একে ফল ও ফসলের জাকাতও বলা হয়ে থাকে। ওশর মানে দশ ভাগের এক ভাগ। জাকাত কোনো দান বা করুণার বিষয় নয়। এটা ধনীদের সম্পদে মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত দরিদ্র জনগণের অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। জাকাত ইসলামী সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠান। জাকাত দরিদ্র, অভাবী, অসহায় ও অক্ষম জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তার যেমন গ্যারান্টি, তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অগ্রগতি ও প্রবৃদ্ধির হাতিয়ার। দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম পন্থা হচ্ছে জাকাত ব্যবস্থা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তাদের সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত : ১৯)
জাকাতকে আল্লাহর অধিকার বলে উল্লেখ করে আল-কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তিনিই সেই সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন বাগানসমূহ। যার কতক মাচান অবলম্বী এবং কতক মাচান অবলম্বী নয় এবং খেজুর বৃক্ষ ও শস্যক্ষেত্র, যাতে বিভিন্ন স্বাদের খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়, আর জয়তুন ও আনার যা পরস্পর সদৃশ ও বিসদৃশও। এগুলো থেকে ফল খাও যখন ফলবান হয় এবং আল্লাহর হক দিয়ে দাও যখন ফসল কাটবে। আর সীমালঙ্ঘন করো না। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা আনআম, আয়াত : ১৪১)
কুরআন ও হাদিসের আলোকে জাকাত
মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনের বহু জায়গায় জাকাত সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ আরো বলেন, ‘আর তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত প্রদান করো।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১১০) কুরআনে আরো বলা হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত আদায় করো আর বিনয়ীদের সঙ্গে বিনয় প্রকাশ করো।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ৪৩) জাকাত সম্পর্কে কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘এবং তোমাদের এই আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা বিশুদ্ধচিত্ত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে, জাকাত দেবে আর এটাই সঠিক দীন।’ (সূরা আল-বাইয়্যেনা, আয়াত : ৫)। কুরআনের অন্য এক আয়াতে জাকাত সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তবে তারা যদি তওবা করে, নামাজ কায়েম করে ও জাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দীনি ভাই।’ (সূরা তওবা, আয়াত : ১১)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেছেন, ‘বলুন আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ, আমার প্রতি ওহি নাজিল করা হয় যে তোমাদের মাবুদ মাত্র একজন। অতএব, তারই পথ দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং তারই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। আর মুশরিকদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ। যারা জাকাত দেয় না এবং আখেরাতেও ঈমান রাখে না।’ (সূরা হা-মীম সাজদা, আয়াত : ৫ ও ৬) সূরা তওবার ৭১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মুনিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু। তারা ভালো কাজের নির্দেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, তারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আনুগত্য করে তাঁর রাসূলের।’ সূরা আরাফের ১৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমার রহমত সবকিছু পরিব্যক্ত করে নিয়েছে। আমি তা লিখে দেবো সেই লোকদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে ও জাকাত দেয় এবং যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান রাখে।’
জাকাত সম্পর্কে রাসূল করিম সা: বলেন, ইবনে উমর রা: বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আদিষ্ট হয়েছি এজন্য যে, আমি যুদ্ধ করব লোকদের সঙ্গে যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই ও মুহাম্মদ সা: আল্লাহর রাসূল এবং নামাজ কায়েম করবে ও জাকাত দেবে।’ (বুখারি-মুসলিম) হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেছেন, ‘আমাকে ছয়টি জিনিসের নিশ্চয়তা দিন, আমি আপনাকে বেহেশতের নিশ্চয়তা দান করব। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সা: সেগুলো কী? তিনি বললেন, ১. নামাজ ২. জাকাত ৩. সততা ৪. নৈতিক পবিত্রতা ৫. উদর ও ৬. জিহ্বা। (তিরমিজি)
কাল: আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে জাকাত
লেখক : প্রাবন্ধিক ও সাবেক ডিএমডি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা