গুনাহ মাফের বসন্তকাল রমজান
- ড. সাইফুল গণি নোমান
- ১০ মে ২০২০, ০০:০০
পবিত্র রমজান দোয়া কবুল ও আত্মশুদ্ধির মাস। পাপ-পঙ্কিলতার যেসব আবর্জনা আমাদের হৃদয় ও আত্মায় জন্মেছে সেসবের জন্য ক্ষমা চাওয়া জরুরি। দোয়া হলো আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে বান্দাহর কথোপকথনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। তাই আল্লাহর দরবারে যেকোনো সময় দোয়া করা যায়। রোজা অবস্থায় দোয়া বেশি কবুল হয়। মুহাম্মদ সা: ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। তাদের একজন হলেন রোজাদার ব্যক্তি।
আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর একটি গাফ্ফার, অর্থ পরম ক্ষমাশীল আর একটি আল ওয়াহহাব অর্থ সবকিছু দানকারী। আল্লাহ ওই মুহূর্তটিকে বেশি পছন্দ করেন, যখন বান্দা চরম বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ ও সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে, তাঁর কাছে মাগফিরাত ও নাজাত কামনা করে। রমজান দোয়া কবুলের সময়। আল্লাহ রোজাদারদের গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে নতুন জীবন লাভ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তাই নবী করিম সা: বলেছেন, ‘রোজাদারের নিদ্রা ইবাদততুল্য, চুপ থাকা তাসবিহ-তাহলিলতুল্য, আমল ইবাদত সওয়াব হাসিলে বেশি অগ্রগণ্য, দোয়া কবুলযোগ্য ও তার গুনাহ ক্ষমার যোগ্য।’ (বায়হাকি)
আল্লাহর কাছে দোয়া করলেই তা কবুল হয়। যা চাওয়া হয় তাই দেয়া হয়। অথবা তা পরকালের জন্য জমা রাখা হয় অথবা দোয়ায় যা চাচ্ছেন তা আপনার জন্য কল্যাণকর নয়, তাই দেয়া হয় না। সুতরাং সময় পেলেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা কিভাবে চাওয়া উচিত? যে ব্যক্তি কোনো গোনাহ করে না তারও তাওবা করা উচিত। বিশ্বনবী সা: বলেন, হে লোক সব তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো। নিশ্চয় আমি প্রতিদিন একশত বার তাঁর নিকট তাওবা করি। (মুসলিম-২৭০২) তাওবাকারীদের আল্লাহ ভালোবাসেন তা ব্যক্ত করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ (আল-কুরআন : বাকারা-২২২) অপর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, আর তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তাওবা করো হে মুমিনগণ যাতে তোমরা সফলকাম হও। (আল-কুরআন : নূর-৩১) আর রাসূল সা: বলেন, প্রত্যেক আদম সন্তানই ভালোকারী আর ভুলকারীদের মধ্যে উত্তম হলো যারা তাওবা করে। (সুনানে ইবন মাজাহ-৪২৫১)
গোনাহ মাফের জন্য গভীর আকুলতা, আন্তরিকতা ও আশাবাদ নিয়ে তাওবা করতে হবে। যে গোনাহ করা হয়েছে তা আর কখনো করব না বলে দৃঢ়-সংকল্প করতে হবে। কিন্তু দেখা গেলো ভুল করে বা ধোঁকায় পড়ে আবারো সেই একই গোনাহ করা হলো। এভাবে শতবার তাওবা ভাঙার পরও তাওবার দরজা খোলা থাকে। কিন্তু তাওবা করার সময়ই এমন মনোভাব থাকা উচিত নয় যে এখন তাওবা করছি ঠিকই, কিন্তু সুযোগ পেলে আবারো সেই পাপ করব! এমন অনুতাপহীন মনোভাব নিয়ে তাওবা করলে তাঁর তাওবা কবুল হবে না। তবে মুমিন যখন কোনো গুনাহ করে তখন দশটি বিষয় তার গুনাহের শাস্তিকে রুখে দিতে পারে। নির্ভেজাল তাওবা, ইসতিগফার, উত্তম আমল, অন্য মুমিন ভাই এর দোয়া, মুমিন ভাই এর আমলের সাওয়াব প্রেরণ, রাসূল সা:-এর সুপারিশ এবং আল্লাহর দয়া ও করুণা।
নবী করিম সা: রমজান মাসে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘এই মাসে তোমরা চারটি কাজ অধিক পরিমাণে করো, ১. বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর জিকির করা; ২. আল্লাহর কাছে মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা। ৩. জান্নাত চাওয়া, ৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া।’
সাধারণত দোয়ার নিয়ম হলো, একাকী দোয়া করা। অজু না থাকলেও দোয়া করা যায়। এমনকি হাত না তুলে মনে মনে কিংবা মুখে বান্দাহ নিজের সব কামনা-বাসনার কথা আল্লাহর কাছে বলতে পারে। দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত, হালাল উপার্জন ও ভক্ষণের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা।
রাসূল সা: বলেছেন : যে ব্যক্তি এই দোয়াÑ ‘আসতাগফিরুল্লা-হাল আ’যীমাল্লাযী লা-ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি’ পড়বে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামি হয়। (তিরমিজি ৪/৬৯)
আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ মহান সবচেয়ে কাছের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকছ? আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছ? আমি তাকে তা দেবো। কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো।’ (মুসলিম)
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে পাপমুক্তির জন্য দোয়া কীভাবে করতে হবে, তার বিভিন্ন পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি; যদি তুমি আমাদের ক্ষমা না করো এবং দয়া না করো, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো।’ (সূরা আরাফ ২৩)
মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার বান্দাহগণ, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না নিশ্চয় আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (আল-যুমার-৫৩)
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, যে গুনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও করুণাময় পায়। (নিসা-১১০)
যারা নানা ফরজ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন এবং ইবাদতে অতি উচ্চ বা মধ্যপর্যায়ে আছেন তাদের সবারই উচিত রমজানে তাওবা কবুলের বিশেষ সুযোগ তথা মহা-ছাড় বা সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করা। পাপ করতে থাকার কারণে যেসব পর্দা আল্লাহর অনুগ্রহ আসার পথে বাধা হয়ে গেছে সেগুলো দূর করার জন্য সবারই তাওবা করা উচিত যাতে মহান আল্লাহর দয়া, অনুগ্রহ ও করুণার সূর্য থেকে আমাদের অন্তরে ও প্রাণে আল্লাহর নানা নেয়ামত আর করুণার আলো অকাতরে ঝরে পড়ে।
অতএব, আমরা আমাদের সব পাপ ও কলমের ভুল থেকে মহান রাব্বে কারিমের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ক্ষমা প্রার্থনা করছি আমাদের ইলম অনুযায়ী আমল না করার জন্য। হে আল্লাহ্ আমাদের ক্ষমা করে দিন এবং সব মুমিন ভাইবোনকে তাওবা করে পুণ্যের পথে ফিরে আসার তৌফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক পরিচিতি : অধ্যাপক ও গবেষক ।
ফৎ.ংধরভহঁসধহরঁ@মসধরষ.পড়স
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা