জীবন বদলানোর টিপস : আত্মমর্যাদা (এক)
- মুফতি ড. ইসমাইল মেনক
- ১০ মে ২০২০, ০০:০০
[জিম্বাবুয়ের মুফতি ড. ইসমাইল মেনক এ সময়ের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী স্কলার। তিনি মদিনায় ইসলামের ওপর উচ্চতর পড়াশোনা এবং অলডারগেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোশ্যাল গাইডেন্সের ওপর ডক্টরেট করেছেন। টুইটারে কোভিড-১৯ এর লকডাউনের সময় অনুশীলনের জন্য গিফট করা দু’টি বইয়ে জীবনাচরণের বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে তিনি সহজ সরল কিছু টিপস দিয়েছেন। লকডাউন গিফটের জীবন বদলানোর প্রথম বইয়ের শেষ বিষয় হলোÑ আত্মমর্যাদা। এই পরিচ্ছেদের প্রথম অংশ আজ। অনুবাদ করেছেন মাসুমুর রহমান খলিলী।]
লোকেরা যখন আপনার সম্পর্কে গসিপ, ব্যাকবাইট বা গুজব ছড়িয়ে দেয় তখন কৃতজ্ঞ হন। আপনার কাছে এমন কিছু আছে যা তারা চান। জেনে রাখুন যে, সর্বশক্তিমান তাদের অসৎকর্মের ফয়সালা করবেন। এ কাজের জন্য তাদের সব সৎকর্ম আপনাকে দেবেন আর আপনার পাপ দেবেন তাদেরকে।
কিছু লোক সত্যকে বিকৃত করার জন্য সবসময় অজুহাত খুঁজবে। আপনি তাদের কিভাবে সংশোধন করতে চেষ্টা করছেন তার প্রতি তাদের কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই, তারা কেবল কানটা বন্ধ করে রাখে; সুতরাং আপনার জন্য দূরত্ব বজায় রাখাই উত্তম।
আপনি যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার জীবনের প্রতিটি বিষয় সম্প্রচার করেন, তখন এর সাথে সাথে সমস্যাগুলোর আগমনও আপনাকে প্রত্যাশায় রাখতে হবে। আপনি যা কিছু শেয়ার করেন তা বিচার বিবেচনা করেই করুন।
সর্বশক্তিমানের সাথে আপনার সম্পর্কের উন্নতির জন্য প্রতিদিনই কিছু না কিছু করুন। সেই কাজটি কত ছোট সেটি কোনো ব্যাপার নয়, কেবল এটি করুন। আপনি পার্থক্য অনুভব করবেন।
আমরা প্রায়শই ক্ষুদ্র বিষয়গুলোতে শোকাহত হই ও হাহাকার করি অথচ এ সময় অন্যরা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ এবং জীবন পরিবর্তনকারী পরিস্থিতির মুখোমুখি। আপনার জীবনের উপর এক ধরনের দৃঢ়তা বজায় রাখুন। ধন্যবাদ দিন সর্বশক্তিমানকে।
আপনার আকাক্সক্ষার ব্যাপারে সাবধান থাকুন। এটিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেবেন না। শেষ পর্যন্ত আপনি কী চান সে সম্পর্কে নিজেকে মনে করিয়ে দিন। জান্নাত হবে আপনার সব ত্যাগের চূড়ান্ত মূল্য।
আমাদের সবার মধ্যে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা আসে মাঝে মাঝে। এটি প্রমাণ করে আমরা মানুষ। কিন্তু যখন আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হয়, তখন আপনাকে এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
প্রয়োজনকে ন্যূনতমে সীমিত রাখুন। আপনাকে তো একাই যেতে হবে, তাই অপ্রয়োজনীয় জিনিসকে বিদায় জানাতে শিখুন। আপনি এ সব জিনিস সাথে নিয়ে যেতে পারবেন না। সাদামাটাভাবে বাঁচুন। শান্তিতে ঘুমান।
আপনি সামাজিক গণমাধ্যম থেকে পালাতে পারবেন না, তবে আপনার ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার। আপনার নিজের মর্যাদা পছন্দ বা লাইক দিয়ে নির্ধারিত হয় না। এটি দিয়ে বোকা বনবেন না।
কিছু কিছু লোকের জীবনকে স্পটলাইটে নিতে লাইভ করার প্রয়োজন হয়, তারা যা কিছু করে তা নিয়ে চেঁচামেচি করে। এসব হতে দূরে থেকে যারা ভেতর থেকে জ্বলজ্বল করেন তাদের মধ্যে থাকুন।
কারসাজি ও চালাকির আশ্রয় গ্রহণকারীদের সম্পর্কে সচেতন হন। তারা সব কিছুতেই মিথ্যা বলে এবং অকারণে আপনার ওপর দোষ চাপায়। তাদের কাছ থেকে দূরে থাকুন; তারা কেবল আপনাকে আঘাতই করবে।
মনে রাখবেন আপনার চরিত্রই আপনাকে মূল্যবান করে তোলে; আপনার চেহারা নয়। সর্বোপরি, যদি গোলাপটি তেমন গন্ধ না বিলায় তবে তা নিরর্থকই হবে।
আপনি যদি অন্যরা কী ভাববে এবং কী বলবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন তবে থামুন! আপনার জীবনের মূল লক্ষ্যটির দিকে মনোনিবেশ শুরু করুন। সর্বশক্তিমানকে সন্তুষ্ট করুন এবং এরপর সব কিছু জায়গা মতো পড়বে।
দ্বৈত মান সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। কিছু লোক প্রত্যাশা করে যে, আপনি তাদের সব কিছু সহ্য করবেন তবে আপনি যদি তাদের সাথে এটি করেন তবে তারা হট্টগোল শুরু করবে।
আপনার জীবনকে পর্যালোচনা করুন, ফোকাস পুনর্নির্ধারণ করুন এবং পরীক্ষা করুন যে আপনি ঠিক পথে রয়েছেন কিনা। বিভ্রান্তিকে তার পথে যেতে দিন। প্রার্থনা করুন যেন সর্বশক্তিমান আপনাকে প্রতিটি পদক্ষেপে পরিচালিত করেন।
দ্বিমত করা ঠিক আছে তবে কখনোই দূষিত বা দুষ্কর হয়ে উঠবেন না। উভয়পক্ষই আন্তরিক হলে মতবিরোধ মানুষের মধ্যে বন্ধনকে জোরদার করতে পারে।
আপনার সম্পর্কে অন্যরা যা বলেন তাকে খুব বেশি গুরুত্বসহকারে নেবেন না। আপনি আয়নাতে যা দেখেন সেটিই আপনি। আপনার সত্যবাদিতার প্রতিফলন হয় আপনার হৃদয়ে।
বেরিয়ে আসার সহজ পথ হিসেবে ‘আমাকে বিচার করবেন না’Ñ এ কথা বলবেন না। আর আপনি যেভাবে চান পোশাক পরুন। আপনার সীমা কতটুকু সেটি জানুন। বিনয় হলো সম্মানের লক্ষণ; এটা দুর্বলতা নয়।
অন্যরা কী বলে তা উপেক্ষা করতে শিখুন। মানুষ কথা বলবে। এরপর তারা ভুলে যাবে কিন্তু সর্বশক্তিমানই একমাত্র, যিনি সব কিছু মনে রাখবেন।
আপনার কাজকর্ম থেকে শুরু করে তাকানো পর্যন্ত লোকেরা সব কিছুতে আপনার সমালোচনা করবে এবং আপনাকে হেয় করার চেষ্টা করবে। আপনাকে নিরুৎসাহিত করার জন্য তাদের নেতিবাচক শব্দগুলো উদ্দীপনার জন্য ব্যবহার করুন, তাতে নিজেকে পোড়ানোর জন্য নয়।
আপনার অগ্রাধিকার ঠিক করুন। লোকেরা আপনাকে বিভ্রান্ত করবে এবং বাধা দেবে কিন্তু আপনি যদি প্রতিটি সমালোচনা শোনেন, আপনি কখনোই আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন না।
আপনি যা-ই করুন না কেন, যারা আপনাকে আপনার পথ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন তারা সেখানে থাকবে। যতক্ষণ আপনি নিজের লক্ষ্য জানেন, ততক্ষণ যেতে থাকুন। সর্বশক্তিমান আপনাকে গাইড করবেন।
সমাজ আপনাকে যে আদেশ নিষেধ করে তা দিয়ে জীবনকে মাপবেন না। যে যতœটি আপনি পেয়েছেন, যে ভালোবাসা ভাগ করে নিয়েছেন, যে হৃদয় দিয়ে আপনি এগিয়েছেনÑ সেগুলো পরিমাপের ঊর্ধ্বে।
জীবনের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রশংসা করুন। এর তাৎপর্য অনেক। আমাদের অনেক দেয়া হয়েছে, আমরা অনেক নষ্ট করেছি। তবুও আমরা অভিযোগ করি। আজই সর্বশক্তিমানের কাছে শোকর জানাতে শুরু করুন।
তাদের মতো হওয়ার চেষ্টা করুন যারা চলে গেছেন কিন্তু তাদের ভালো চরিত্রটি এখনো বেঁচে আছে। সুতরাং বিনম্র, আন্তরিক এবং উদার হতে শিখুন।
সর্বশক্তিমান ছাড়া আর কারো কাছ থেকে কিছু আশা করবেন না। লোকেরা আপনাকে আঘাত করবে এবং আপনাকে হতাশ করবে। সুতরাং আপনার প্রত্যাশাকে কমিয়ে ফেলুন; এটাই সেরা উপায়।
একবারে নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে অতিরিক্ত চাপ নেবেন না। কেউই নিখুঁত নয়। আমাদের সবাইকে অসম্পূর্ণ জীবন গ্রহণ করে সেটাকেই আরো ভালো করতে হয়। কাজ শুরু করি আজ থেকেই!
এরপর কাল : জীবন বদলানোর টিপস : আত্মমর্যাদা-দুই
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা