২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তাওবা-ইস্তেগফারের ১৫টি পুরস্কার

-

বর্তমানে করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় সমগ্র বিশ্ব প্রক¤িপত। এ থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য প্রত্যেক গবেষক আপন আপন চিন্তা -ভাবনার মাধ্যমে নির্দেশনা প্রদান করছেন। তারা বলছেন, মাস্ক পরতে, সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধৌত করতে, তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলতে এবং সর্বশেষ একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনা মহামারী থেকে বাঁচার জন্য এগুলো হচ্ছে বাহ্যিক উপকরণ। শুধু বাহ্যিক উপকরণের মাধ্যমে এ ভয়ঙ্কর মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়; বরং অভ্যন্তরীণ উপকরণগুলোও অবলম্বন করতে হবে। কেননা, এ মহামারী আল্লাহর গজব। যা মানুষের পাপের কারণে জলে-স্থলে ছড়িয়ে পড়েছে। এ পাপমোচনের জন্য আমাদেরকে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তেগফার করা প্রয়োজন। এটাই হচ্ছে অভ্যন্তরীণ উপকরণ। আর এ উপকরণ বাহ্যিক উপকরণ থেকে বহুগুণ বেশি শক্তিশালী। এ উপকরণ বর্জন করে সফলতা লাভ করা সম্ভব নয়।
তাই আসুন আমরা বাহ্যিক উপকরণের সাথে সাথে অভ্যন্তরীণ উপকরণগুলো মান্য করি। তাহলে আমরা এ মহামারী থেকে অতি তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবো, ইনশাআল্লাহ।
‘তাওবা’ অর্থ হচ্ছেÑ তৎক্ষণাৎ গুনাহ ছেড়ে দেয়া, গুনাহের জন্য মনে মনে লজ্জিত হওয়া, ভবিষ্যতে আর না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করা এবং মানুষের বা আল্লাহর কোনো হক থাকলে তা আদায় করে দেয়া।
‘ইস্তেগফার’ অর্থ হচ্ছেÑ ক্ষমা চাওয়া। আমরা এভাবে বলতে পারিÑ আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ। এর অর্থ হচ্ছে, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। ইস্তেগফার হচ্ছে তাওবার দিকে যাওয়ার পথ।
আমরা যদি খাঁটি দিলে তাওবা করে বেশি বেশি ইস্তেগফার করতে থাকি তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর থেকে করোনার মতো মহামারী দূর করাসহ ১৫টি পুরস্কার দান করবেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা নূহের ১০-১২ নং আয়াতে ছয়টি পুরস্কারের ঘোষণা করেছেন।
১. সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন : এর ফলে পাপের কারণে যে আজাব ও গজব অবধারিত হয়ে গিয়েছিল তা আল্লাহ তায়ালা দূর করে দেবেন। যেমনÑ হজরত ইউনুছ আ:-এর জাতি যখন আজাব প্রত্যক্ষ করেছিল তখন তাওবা-ইস্তেগফার শুরু করে দিয়েছিল, ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং তাদের ওপর থেকে ভয়ানক আজাব সরিয়ে দিয়েছিলেন।
২. রহমতের প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করবেন : এর ফলে করোনার কারণে আমরা যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছি তা আল্লাহ তায়ালা দূর করে দেবেন। ইস্তেগফারের কারণে রহমতের বৃষ্টি বর্ষণের অনেক ঘটনা কিতাবে রয়েছে, কিন্তু পত্রিকার কলেবর বৃদ্ধি পাবে বিধায় তা এখানে উল্লেখ করলাম না।
৩. ধন-স¤পদের মাধ্যমে সাহায্য করবেন : বর্তমানে ভাইরাসের কারণে আয়ের সব উৎস প্রায় বন্ধ। অপর দিকে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে অর্থ-স¤পদ ব্যয় হচ্ছে। যার ফলে অভাবের আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠছে। এখন যদি আমরা ইস্তেগফার করতে শুরু করি তাহলে এ আশঙ্কা কমে যাবে।
৪. সুসন্তানের মাধ্যমে সাহায্য করবেন : বিয়ের পর সন্তান লাভের জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করি। কেউ যায় মাজারে, কেউবা পড়ে ভণ্ডের খপ্পরে। কেউ ঈমান হারায় আবার কেউ অর্থ খোয়ায়, কিন্তু সন্তান পায় না। অথচ আল্লাহ তায়ালা ইস্তেগফারের বিনিময়ে এমন সুসন্তানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, যারা মা-বাবার উপকারে আসবে। তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করবে।
৫. বাগ-বগিচা দান করবেন : অর্থাৎ ফল-ফ্রুট, শাক-সবজি, তরি-তরকারি এবং ফসলাদিতে অনেক প্রাচুর্য দান করবেন। ফলে খাদ্যের কোনো অভাব হবে না।
৬. নদী-নালা প্রবাহিত করবেন : বর্তমানে নদী-নালার বহমানতা একেবারেই কমে গেছে। বহু নদী শুকিয়ে খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। সাধারণ জেলেরা দূর-দূরান্ত ঘুরে বহু কষ্টে মাছ ধরলেও গ্রামের ছেলেদের জন্য এখন মাছ ধরা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। তাই ইস্তেগফার করতে থাকলে আমাদের পানি এবং মাছ কোনোটারই সঙ্কট থাকবে না।
পবিত্র কুরআনের সূরা হুদের তিন নং আয়াতে আল্লøাহ তায়ালা ইস্তেগফারের আরো দুটি পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন।
৭. সুখময় জীবন দান করবেন : বর্তমানে বহু তরুণ-তরুণী এবং বহু দ¤পতি অশান্তির আগুনে জ্বলছে। সুখের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরেও ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ কুরআন সুখময় জীবনের পথনির্দেশনা দিচ্ছে।
৮. সম্মানিতদের সম্মান বৃদ্ধি করবেন : বর্তমানে অনেক জ্ঞানী-গুণী, শিক্ষিত এবং সম্মানি লোক আছেন যারা সমাজে কাক্সিক্ষত মর্যাদা পান না। তারও কারণ এ ইস্তেগফার।
ইস্তেগফারের আরো একটি পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন আল্লøাহ তায়ালা সূরা হুদের ৫২ নং আয়াতে।
৯. আমাদের শক্তি বৃদ্ধি করে দেবেন : বর্তমানে আমরা সব ক্ষেত্রে দুর্বল। আমরা যদি বেশি বেশি ইস্তেগফার করি, তাহলে তিনি আমাদের শারীরিক শক্তি, সামাজিক শক্তি, অর্থনৈতিক শক্তি, সামরিক শক্তি এবং রাষ্ট্রীয় শক্তির সাথে গায়েবি শক্তি যুক্ত করে দেবেন।
আর সূরা আনফালের ৩৩ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে আরো একটি পুরস্কার।
১০. আজাব-গজব দেবেন না : আমরা যদি বেশি বেশি ইস্তেগফার করতে থাকি, তাহলে তিনি আজাব-গজব দূর করে দেবেন।
সুনানে আবু দাউদের ১৫১৮, সুনানে ইবনে মাজাহের ৩৮১৯ এবং মুসনাদে আহমদের ২২৩৪ নং হাদিসের মধ্যে আরো তিনটি পুরস্কারের কথা বর্ণিত হয়েছে। যথাÑ
১১. সব প্রকার আপদ-বিপদ ও সঙ্কট দূর করে দেবেন।
১২. সব দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন।
১৩. অকল্পনীয়ভাবে রিজিক দান করবেন।
আরেকটি পুরস্কার অভিজ্ঞতার আলোকে বোঝা যায়।
১৪. মুস্তাজাবুদ দাওয়াত হয়ে যাবেন। অর্থাৎ, ইস্তেগফার পাঠকারী এমন হয়ে যাবেন, যখন তিনি কোনো দোয়া করবেন আল্লøাহ তায়ালা তা কবুল করবেন।
১৫. মৃত্যুর পর তাকে জান্নাত দান করবেন।
তাই আসুন আমরা বেশি বেশি ইস্তেগফার করি, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং সব বিপদ-আপদ থকে বেঁচে, আল্লাহর দেয়া পুরস্কার লাভ করতে চেষ্টা করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন, আমিন।
লেখক : শিক্ষক, জামেয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া (লালবাগ মাদরাসা) ঢাকা ও খতিব, ফিরদাউস জামে মসজিদ, লালবাগ, ঢাকা।
ঊ-সধরষ: যধভবুুঁনধুবৎধযসবফ@মসধরষ.পড়স

 


আরো সংবাদ



premium cement