২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জীবন বদলানোর টিপস : ভালোবাসা

-


[জিম্বাবুয়ের মুফতি ড. ইসমাইল মেনক এ সময়ের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী স্কলার। তিনি মদিনায় ইসলামের ওপর উচ্চতর পড়াশোনা এবং অলডারগেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোশ্যাল গাইডেন্সের ওপর ডক্টরেট করেছেন। টুইটারে কোভিড-১৯ এর লকডাউনের সময় অনুশীলনের জন্য গিফট করা দু’টি বইয়ে জীবনাচরণের বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে তিনি সহজ-সরল কিছু টিপস দিয়েছেন। লকডাউন গিফটের জীবন বদলানোর সপ্তম আলোচনা
হলোÑ ভালোবাসা। এই পরিচ্ছেদের পুরোটা আজ। অনুবাদ করেছেন মাসুমুর রহমান খলিলী।]


তাড়াহুড়ো করবেন না, কারণ সর্বশক্তিমানের পরিকল্পনা সবসময় নিখুঁত। পথের প্রতিটি পদক্ষেপে একেকটি পাঠ রয়েছে। জেনে রাখুন, তিনি আমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষা করছেন!
আপনি যে ধরনের ব্যক্তিকে বিয়ে করেন তা আপনার সন্তানের ধরনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। সুতরাং আপনার অনাগত সন্তানের জন্য সুবুদ্ধির সাথে বেছে নিন জীবনসাথী।
লোকেরা যদি না হেসেই ‘হা-হা-হা’ করতে পারে, তবে অবশ্যই তারা ভালো না বেসেও ‘আমি তোমায় ভালোবাসি’ বলতে পারে। সুতরাং বোকা বনবেন না।
আমরা আমাদের পরিবারকে যথেষ্ট প্রশংসা করি না। আমরা পরিবারের ওপর বন্ধুদের অগ্রাধিকার দেই। নিঃস্বার্থভাবে তারা আপনার জন্য যে উৎসর্গ করেছে তা কোনোভাবেই ভুলে যাবেন না।
যখনই আপনি এই যাত্রাটিকে খুব কঠিন বলে অনুভব করেন, মনে রাখুনÑ সর্বশক্তিমান এই বিষয়গুলো ঘটাচ্ছেন নির্দিষ্ট কারণে। প্রতিটি পরীক্ষার একটি উদ্দেশ্য থাকে। এটিই আমাদের জন্য স্বস্তিকর হওয়া উচিত!
যখন আপনি হৃদয় ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা অনুভব করেন এবং হতাশ বোধ করেন, কারণ বিষয়গুলো কেন হচ্ছে তা আপনার কোনোভাবেই বোধগম্য হচ্ছে না, তখন আপনি হাত তুলে সর্বশক্তিমানের সাথে কথা বলুন। আঘাত বেশি হলে আপনার কথার দরকার নেই। মন থেকে নিঃশব্দে কথা বলুন।
আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় যা দেখছেন তাকে বিয়ে ভেবে বিভ্রান্ত হবেন না। বিয়ে এটা নয়। এটি কঠোর পরিশ্রম, দেয়া ও নেয়া, ধৈর্য্য ও ত্যাগের বিষয়।
আমরা জানি না ভবিষ্যতে কী রয়েছে। আমরা চিন্তা করি, উদ্বিগ্ন হই। তবে ভাবুন, আমরা কেন এত চিন্তা করব; যদি সর্বশক্তিমান সাথে থাকেন? তাঁকে বিশ্বাস করার সৌন্দর্য এটিই।
আমরা এত ভুলের পরও নিজেকে ভালোবাসি, সুতরাং আমরা অন্যকে একটি বা দুটি ভুলের জন্য কেন ঘৃণা করব?
আপনি পরিবারকে ভালোবাসেন এ কথা বলতে কোনো সময় দ্বিধা করবেন না। দয়া আর ভালোবাসার কথাগুলো দৃঢ় ও স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গঠনে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারে।
অন্যের জন্য প্রার্থনা করুন। স্বার্থপর হবেন না এবং কেবল নিজের জন্যই প্রার্থনা করবেন না। আপনি নিজের জন্য যা চান তা অন্যের জন্যও চান। আপনার হৃদয় ভালোবাসা সাথে নিয়ে সমৃৃদ্ধ হবে।
সবকিছু এক একটি কারণে ঘটে; এমনকি যেগুলো আমাদের দুঃখিত করে তোলে তাও, প্রত্যেকটি পরিস্থিতিতে এর শিক্ষা রয়েছে। এসব থেকে শিখুন এবং সর্বশক্তিমানের কাছে কৃতজ্ঞ হোন।
অন্যকে কখনই অকেজো বোধ করতে দেবেন না। আপনি নিজেকে উন্নততর ভেবে অন্য লোককে একদিকে ঠেলে দেবেন না বা তাদের উপেক্ষা করবেন না। সর্বদা তাদের মূল্য সম্পর্কে তাদের স্মরণ বা সচেতন করিয়ে দিন।
ভালোবাসায় ভরা হৃদয়, সদা প্রস্তুত শ্রুতিমধুর কান এবং এমন এক হাত যা অন্যকে যেকোনো সময় সহায়তা করতে ইচ্ছুক, তার চেয়ে ভালো কিছু হয় না।
আপনি যখন সত্যিকার অর্থে কাউকে শুভেচ্ছা জানাতে চান, তার প্রতি আপনার অন্তরে কোনো হিংসা যেন না থাকে এবং তার জন্য সেরাটি চান, আপনি সত্যি সত্যি ধন্য হবেন।
যদি এই পৃথিবীর প্রতি আপনার ভালোবাসা এত গভীর হয়, মনে রাখবেনÑ আপনি এটিকে আপনার সাথে নিয়ে যেতে পারবেন না। সুতরাং পরবর্তী জীবনের জন্য এখনই প্রস্তুতি শুরু করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রত্যেকেরই জীবনে অন্য কারো একটি অংশ রয়েছে। আমরা কখনই জানতে পারি না যে, আমরা কোথায় খাপ খাই অথবা আমাদের আসল ভূমিকা কী কার সাথে, তবে আমাদের ছাড়া তাদের জীবন সম্পূর্ণ হবে না।
আপনি যখনই পড়ে গেছেন তখনই আপনার ¯্রষ্টা আপনাকে তুলে নিয়েছিলেন, সামনে এগিয়ে যেতে শক্তি জুগিয়েছেন; যখন আপনার মনে হয়েছিল পৃথিবী আপনাতে গর্তে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আপনি তাকে ছাড়া কোথায় থাকবেন? আপনি যখন লোকদেরকে খুশি করার জন্য কিছু করেন, তখন কেউ না কেউ সবসময় অভিযোগ করবে। কোনো কিছুই সর্বাঙ্গীণভাবে ভালো হয় না। এর পরিবর্তে সর্বশক্তিমানকে খুশি করার পথ বেছে নিন।
আপনি খুব বেশি কিছু হয়তো করতে পারবেন না, তবে মনে রাখবেনÑ খালি হাত এবং খালি পকেট সর্বশক্তিমানের প্রতি ভালোবাসাহীন খালি হৃদয়ের তুলনায় কিছুই নয়। এটি একটি রোগ যা অনেককে সংক্রমিত করে। সেটি হলেÑ কথা ও কাজে দ্বিচারিতা, ভণ্ডামি। দেখানোর জন্য তিনি ভালো কিছু করছেন, প্রদর্শন করতে চান। সমস্যার মূলে যান, হৃদয় পরিষ্কার করুন।
বোঝার চেয়ে কৃপা ও আশীর্বাদ সম্পর্কে বেশি বলার অভ্যাস করুন। আপনি যখন ইতিবাচকতা ছড়িয়ে দেবেন, তখন সর্বশক্তিমান আপনাকে আরো বেশি করে দয়া করবেন।
নিজের প্রতি সদয় হোন। আপনি যে ভুল করেছেন তার জন্য নিজেকে হারাতে হবে না। এই ভুলের মধ্যেও কৃপা রয়েছে। আজকে আপনি যেখানে এসেছেন তার পেছনে এর অবদান রয়েছে। আপনি যখন শেষ পর্যন্ত টানেলের শেষের আলোটি দেখবেন, তখন আনন্দে সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ জানাবেন। যখন আপনি ভেবেছিলেন যে, তিনি আপনাকে ছেড়ে চলে গেছেন তখনো তিনি আসলে আপনাকে দেখাশোনাই করছিলেন।
আপনার ভাইবোনদের প্রতি সদয় হোন এবং তাদের সাথে সর্বোত্তম সম্পর্ক বজায় রাখুন। সর্বশক্তিমান একেকটি কারণে তাদের বেছে নিয়েছেন। তাদের মূল্য দিন যাতে আপনাকে আফসোস করতে না হয়।
মনে রাখবেন, আপনার জীবনের নিকটতম কিছু লোক সর্বদা সেই ব্যক্তি হয় না যে আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। আপনি এসব পরিবর্তন করতে পারবেন না। এতে সন্তুষ্ট থাকুন এবং সামনে এগিয়ে যান।
আপনার প্রিয়জনদের কাউকে ভুল পথে যেতে দেখে কষ্ট লাগে। আপনার চেষ্টা যথাসাধ্য করুন এবং তাদের সহৃদয় পরামর্শ দিন। প্রার্থনা করুন যেন সর্বশক্তিমান তাদের অন্তরকে ঘুরিয়ে দেন।
এরপর কাল : জীবন বদলানোর টিপস : দয়া

 


আরো সংবাদ



premium cement