২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রমজানে জাকাত প্রদান

-

জাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ। যা সঠিকভাবে আদায়ের ফলে বিত্তশালীদের সম্পদ পরিশুদ্ধ হয়। যার ফলে মহান আল্লাহ তায়ালা সেই সম্পদে বরকত দান করেন। আর পবিত্র কুরআনে সালাতের পর সর্বাধিক জাকাতের কথাই উল্লেখ আছে।
ইসলামে জাকাত ব্যবস্থা হলো একটি আর্থিক ইবাদত। যা পুরোপুরি অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আর অর্থনীতিই বর্তমান পৃথিবীর মূল চালিকাশক্তি। অর্থনীতি শক্তিশালী হলে পৃথিবী গতিশীল হয় আর অর্থনীতি দুর্বল হলে পৃথিবী তার নিজস্ব গতিকেও হারিয়ে ফেলে!
আর এই অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা। কারণ জাকাত সমাজের মানুষদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। যা জোগান বৃদ্ধিতে চাপ প্রয়োগ করে। জোগান বাড়াতে প্রয়োজন হয় বিনিয়োগ বাড়ানোর। গড়ে ওঠে নতুন কারখানা। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, বেকারত্ব হ্রাস পায়। বিনিয়োগ বাড়ালে মুনাফা বৃদ্ধি পায়। কাজেই সম্পদও বৃদ্ধি পায়। ফলে জাকাতও বেড়ে যায়। এভাবেই পুরো অর্থনীতিকে চালিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা। আর জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা সমাজের সম্পদের বৈষম্য দূর করে, একটি সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে সাহায্য করে।
অপর দিকে যে সমাজে জাকাতব্যবস্থার প্রচলন চালু নেই সেখানে সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থাসহ নানা ধরনের সামাজিক অসঙ্গতি দেখা দেয়। যার ফলে সমাজে সামাজিক অবক্ষয় দেখা যায় এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ সমাজের কর্মহীন হতাশাগ্রস্ত যুবকেরা মাদক ও নেশার প্রতি ঝুঁঁকে যায়, যার ফলে তারা বিভিন্ন জটিল ও কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, ফলে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি হয়, যার পরিণতিতে আর্থিক ও সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ তারা দরিদ্রতার মধ্যে নিপতিত হওয়ার ফলে তাদের মাঝে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, খুনখারাবি, সুদ, ঘুষ, জুয়া, খুনোখুনি ও দুর্নীতির মতো আর্থসামাজিক কেলেঙ্কারির ঘটনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। একসময় অবস্থা এমন হয়; মানুষ ঈমানের পথ থেকে কুফরির পথের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। হাদিস শরিফে রয়েছে, রাসূল সা: বলেন, ‘দারিদ্র্য মানুষকে কুফরির নিকটবর্তী করে দেয়।’ (তিরমিজি শরিফ)
আর তাই ধনী-গরিবদের মাঝে সম্পদের বৈষম্য দূর করার মাধ্যমে, সামাজিক বিপর্যয় রোধ করে সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের লক্ষ্যেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা ধনীদের সম্পদের মধ্যে গরিবদের জন্য নির্দিষ্ট একটি হক দিয়ে দিয়েছেন। আর তাই আল্লাহ জাকাতকে নির্দিষ্ট কিছু শর্তে মাধ্যমে বিত্তবানদের ওপর ফরজ করে দিয়েছেন।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের সূরা বাকারার ১১০ নম্বর আয়াতে বলেছেন- ‘তোমরা সালাত আদায় করো এবং জাকাত প্রদান করো। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য আগে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখছেন।’
সূরা নূরের ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘তোমরা সালাত আদায় করো, জাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পারো।’
আর যারা এই জাকাত আদায় করবে আল্লাহ তায়ালা তার সেই বান্দাহদের জন্য মহাপুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ১৬২ নং আয়াতে বলেছেনÑ ‘এবং যারা সালাত আদায় করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদের মহাপুরস্কার দেবো।’
তবে যারা যাকাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভকে নিছক দান-সদকা মনে করে, এর থেকে গাফেল থেকে তা আদায় করা থেকে বিরত থাকবে, আল্লাহ তাদের জন্য ভয়ঙ্কর শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা তাওবার ৩৪-৩৫ নম্বর আয়াতে বলেছেনÑ ‘যারা সোনা-রুপা পুঞ্জীভূত করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে খরচ করে না, তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। এমন একদিন আসবে, যেদিন সেসব সোনা-রুপা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, তারপর তা দিয়ে তাদের মুখমণ্ডল, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে এবং বলা হবে, এই হলো তোমাদের সেসব অর্থসম্পদ যা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। অতঃএব এখন নিজেদের জমা করে রাখা সম্পদের স্বাদ গ্রহণ করো।’
এ সম্পর্কে রাসূলে করিম সা: বলেছেন : ‘আল্লাহ যাকে অর্থ সম্পদ দিয়েছেন, সে যদি সে অর্থ সম্পদের জাকাত প্রদান না করে, তবে তা কিয়ামতের দিন একটি বিষধর অজগরের রূপ ধারণ করবে। যার দু’চোখের উপর দু’টি কালো চিহ্ন থাকবে। সে বলবে, আমিই তোমার অর্থ সম্পদ, আমিই তোমার সঞ্চয়। এতটুকু বলার পর নবী করিম সা: নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করলেন, ‘যারা আল্লাহর দেয়া অর্থ সম্পদে কার্পণ্য করে, তারা যেন মনে না করে যে এটা তাদের জন্য মঙ্গল, বরং এটা তাদের জন্য অত্যন্ত খারাপ। তারা যে অর্থ সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে তাই কিয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ি হবে।’ (সূরা আল-ইমরান ঃ ১৮০, সহিহ বুখারি)
যেহেতু নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকদের বছরের যেকোনো একদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে জাকাত আদায় করতেই হবে, সেহেতু জাকাত আদায়ের সে সময়টা রমজান মাসকেই বেছে নেয়াটা উত্তম হবে। কেননা রমজান হলো আল্লাহ তায়ালার মাস। আর আল্লাহ এই রমজান মাসে তাঁর যেকোনো ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, ইবাদতের সাওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। তাই চাকাত আদায়কারী মুমিনদেরও এরকম সুবর্ণ সুযোগটি গ্রহণ করা উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement