২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জীবন বদলানোর টিপস : বিষণœতা (দুই)

-

[জিম্বাবুয়ের মুফতি ড. ইসমাইল মেনক এ সময়ের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী স্কলার। তিনি মদিনায় ইসলামের ওপর উচ্চতর পড়াশোনা এবং অলডারগেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোশ্যাল গাইডেন্সের ওপর ডক্টরেট করেছেন। টুইটারে কোভিড-১৯ এর লকডাউনের সময় অনুশীলনের জন্য গিফট করা দু’টি বইয়ে জীবনাচরণের বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে তিনি সহজ সরল কিছু টিপস দিয়েছেন। লকডাউন গিফটের জীবন বদলানোর তৃতীয় আলোচনা হলো বিষণœতা । এই পরিচ্ছেদের শেষ অংশটি আজ। অনুবাদ করেছেন মাসুমুর রহমান খলিলী।]

মনে হয় জীবনের সবকিছু আপনার রয়েছে কিন্তু এর পরও আপনি অসুখী। কেন? কারণ জীবনের আসল সুখ আপনার বিশ্বাস এবং আপনার সম্পর্ক থেকে আসে।
কিছু লোক নেতিবাচক চিন্তাভাবনা, সন্দেহ এবং ভয় নিয়ে এতটাই আসক্ত হয় যে তারা ইতিবাচক চিন্তাভাবনায় বিরক্ত হয়। এই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসুন।
আপনার হৃদয়ে যে উত্তর রয়েছে তা আপনি অন্য কোথাও খুঁজে পাবেন না। যদি আপনি সর্বশক্তিমানের সাথে সংযুক্ত থাকেন তবে তিনি শান্তি দেবেন; অন্যথায় উদ্বেগ এবং সন্দেহ আপনাকে শাসন করবে।
দুনিয়াকে আপনাকে গ্রাস করতে দেয়া বেশ সহজ এবং তখন আপনার নিজের ইমেজটি হবে অসুখী। সর্বশক্তিমান আপনাকে সেরা অবয়বে তৈরি করেছেন। পৃথিবী যেন আপনাকে ঠকায় না।
যারা অন্যকে খারাপ দেখে, তাদের খ্যাতি নষ্ট করে এবং গুজব ছড়িয়ে নিজেরা ভালো থাকতে চায়, তাদের বিষয়ে সাবধান থাকুন। এটি একটি রোগ। তাদের জন্য প্রার্থনা করুন। তাদের এটি দরকার।
শান্ত থাকুন। ইতিবাচক মনোভাব রাখুন। সর্বশক্তিমানের কৃপায় খুশি থাকুন। আপনি কখনোই জানেন না কত সময় আপনার বাকি আছে। আগামীকাল বেঁচে থাকবেন তা নিয়ে কখনোই কারও কাছে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি।
আমাদের সবারই হৃদয়ে কষ্ট এবং দুঃখ থেকে উদ্ভূত মুহূর্ত থাকে । এ সময়ে আপনি যখন সর্বশক্তিমানের ওপর সম্পূর্ণরূপে আস্থাশীল থাকবেন, তখন সেটাকেই বলে ঈমান।
অন্তরকে পবিত্র করার জন্য প্রচেষ্টা চালান। কেন আমরা হৃদয়কে চাপে রাখছি? কারণ আপনি যা কিছু এতে ধারণ করেছেন আপনি যখন এই পৃথিবী ছেড়ে যাবেন তখন তা আপনার সাথে যাবে।
আমরা সবাই সময়ে সময়ে হতাশ হই। এই হতাশা আপনার ওপর চেপে বসার আগে তা ছেড়ে দেয়া জরুরি। তাই ছোট জিনিসকে উপেক্ষা করতে শিখুন।
আপনি যখন তার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখেন, তখন এটি এমন বাধাগুলো ভেঙে দেবে যার অস্তিত্ব সম্পর্কে আপনি কখনো জানেন না। সুতরাং যখন আপনার হৃদয়ে কষ্ট হবে তখন প্রার্থনা করুন। সর্বশক্তিমানের হাতে সবকিছু সমর্পণ করুন।
শেষ পর্যন্ত, তিনি সর্বশক্তিমান যিনি আমাদের প্রত্যেকে কী পাবার যোগ্য সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন। তিনি আমাদের অন্তর ভালোবাসায় পূর্ণ করুন এবং আমাদের প্রাপ্যের চেয়ে আমাদের আরো বেশি দিন।
কঠিন সময় ছদ্মবেশে আশীর্বাদই হয়। যতই কষ্ট হোক না কেন, এগিয়ে যান। এখানে শক্ত পাঠ থাকবে, তা থেকে শিখুন এবং আরও শক্তিশালী হয়ে উঠুন।
আপনার পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় আপনি কি দুঃখ বোধ করছেন? একজন বিশ্বাসী এটিকে শান্ত মন নিয়ে মেনে নেন কারণ তিনি জানেন যে সর্বশক্তিমানের কাছে রয়েছে আরো ভালো পরিকল্পনা।
আমরা সবাই ত্রুটিযুক্ত। আমরা সবাই প্রতিদিন ভুল করে থাকি। তবুও তার রহমত রয়ে গেছে। সুতরাং আপনি যতই কঠিন হোঁচট খান এবং পড়ে যান না কেন, উঠে পড়–ন। ট্রাকে ফিরে আসুন।
আপনার সমস্যাগুলো যাই হোক না কেন, আশা হারাবেন না। আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না এমন জিনিসগুলো শনাক্ত করুন। এসব তাঁর ওপর ছেড়ে দিন। জীবন কিন্তু সুখ-দুঃখের এক সংমিশ্রণ।
তাদের মধ্যে থাকুন যারা জীবনের সমস্যাগুলোর চেয়েও ইতিবাচক দিকের প্রতি বেশি মনোনিবেশ করেন । এতে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে এবং আপনি সর্বত্র রহমত ও দয়া দেখতে পাবেন।
যখন আপনি আশা হারাচ্ছেন এবং হাল ছেড়ে দেয়ার প্রান্তে এসে উপনীত হয়েছেন তখন আপনার স্রষ্টার প্রশংসা করুন। পরীক্ষা সহ্য করুন, তিনি আপনাকে আবার তুলে আনবেন। আপনাকে তখন আর কোনো কিছুই নামাতে পারবে না।
আপনি যখন নিজের সুখ অন্য কারো হাতে রাখবেন, তখন ধরে নিতে পারেন আপনাকে হতাশ হতে হবে। এটিকে আপনার স্রষ্টার হাতে রাখুন; তিনি কখনোই আপনাকে হতাশ করবেন না।
কষ্টকে ভয় করবেন না। এটি জীবনের সমস্ত জিনিসের মতো অস্থায়ী। এটি আমাদের পাঠ শেখানোর জন্য আসে। একবার আমরা এটি শিখে নিলে পরবর্তী পাঠটি এরপর আসে।
তাদের সাথে সময় নষ্ট করবেন না যারা প্রতিবারই ওঠার চেষ্টার সময় আপনাকে আটকে রাখতে চাইছে।
আপনার শক্তি সন্ধান করুন সর্বশক্তিমানের কাছে। তিনি সর্বজ্ঞ।
দুঃখ ভারাক্রান্ত হবেন না। সর্বশক্তিমানের সাহায্য কষ্টের সমানুপাতিকভাবে আসে। ব্যথা যত বেশি, নিরাময় তত মিষ্টি। হাল ছাড়বেন না। লেগে থাকুন।
এই পৃথিবীতে আপনার হৃদয় ভেঙে লাখ লাখ টুকরো হয়ে যেতে পারে, তবে আপনি যদি আপনার সৃষ্টিকর্তায় আস্থা রাখেন, তবে তিনি এটি পুনরুদ্ধার করতে পারেন, আবার তিনি পুরোপুরি তৈরি করে দেবেন এটাকে!
সর্বদা সর্বশক্তিমানকে স্মরণ করুন। যদি আপনি নিজের অন্তর থেকে বিশ্বাস রাখেন, আপনার পাপ তিনি ক্ষমা করবেন, আপনার উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা দূর করে দেবেন। সব কিছুতেই তাঁর উপরই আস্থা রাখুন।
সর্বশক্তিমান জানেন। আপনি যে শব্দগুলো উচ্চারণ করছেন তা হৃদয়ে রাখেন। কষ্ট এবং দুঃখ লুকিয়ে আছে। তাঁর সাহায্য যে আসছে তা নিয়ে কখনো সন্দেহ করবেন না।
যখন ভাববেন বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং আপনি দুঃখের দ্বারা ঘিরে যাচ্ছেন, নিজেকে সর্বশক্তিমানের কাছাকাছি করুন। তিনি আপনাকে পুরস্কার দেবেন!
আমরা প্রতিদিন ছোট এবং ক্ষুদ্র জিনিসগুলোর জন্য বিরক্ত হই। আমাদের সত্যিকার অর্থে বিরক্ত হওয়া উচিত যখন কোনো দিন আমাদের গুণাবলি অর্জন ছাড়াই পেরিয়ে যায়।
এমন অসুস্থ হৃদয় থেকে সাবধান থাকুন যে ক্ষুদ্র বিষয়গুলোর জন্যও সর্বদা প্রতিশোধ প্রার্থনা করে। সর্বশক্তিমান এ জাতীয় অন্তরকে আন্তরিক ক্ষমার পথে পরিচালিত করুন।
আপনি কি কখনো অনুভব করেছেন যে আপনার সমস্যাগুলো অন্যদের সাথে ভাগ করে নেয়ার কোনো মানে নেই। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর প্রতি তাদের মনোযোগ নেই? সর্বশক্তিমানে আস্থা রাখুন। তিনি সবসময় আপনার জন্য আছেন।
কষ্ট মানুষ হিসাবে আমাদের সীমাবদ্ধতা এবং আমাদের সর্বশক্তিমানের úূর্ণ প্রয়োজনের কথা মনে করিয়ে দেয়। আপনার কষ্ট ধৈর্য এবং প্রার্থনা দিয়ে অতিক্রম করুন। তিনি আপনাকে পুরস্কৃত করবেন।
কিছু লোক সোজাভাবে কথা বলতে পারে না। তারা ব্যঙ্গাত্মক শব্দ ব্যবহার এবং অন্যকে অপমান করতে পছন্দ করে। সাবধান। সর্বশক্তিমান আপনাকেও খারাপ পরিস্থিতিতে ফেলতে পারেন।
যখনই আপনি দুঃখ পান বা হতাশ হন, মনে রাখবেন কিছুই স্থায়ী হয় না। কষ্ট হলো পুরো প্রক্রিয়ার অংশ। প্রতিটি সংগ্রাম আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। চলতে থাকুন।
এমন কেউ আছেন যাঁরা আপনাকে ব্যর্থ দেখতে সব কিছু করতে চান। এটাই জীবনের বাস্তবতা। স্বচ্ছ বিবেকবোধ বজায় রাখুন এবং যা সঠিক তাই করুন। হেদায়েতের জন্য প্রার্থনা করুন।
আপনি যখন প্রার্থনা করেন তখন নিশ্চিত হন যে আপনার হৃদয়, মন এবং আপনার সব কিছুই সেখানে আছে। সম্পূর্ণ বিশ্বাস এবং নিরঙ্কুশ আস্থার সাথে আর্জি জানান। তিনি জানেন, তিনি শোনেন এবং সাড়া দেবেন।
কঠিন সময়েও হাসুন। কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরুন। সর্বদা ভাল কিছু করার জন্য সংগ্রাম ও চেষ্টা করুন। এটাই আপনার জান্নাতে যাওয়ার পথ। এটা অর্জন করুন।
হতাশা, আত্ম-সংশয় এবং নিম্ন আত্মমর্যাদাবোধ সবই শয়তানের ফিসফিসানি। হতাশ হবেন না। হতাশা থেকে নিজেকে টেনে আনুন এবং এককভাবে সর্বশক্তিমানের প্রতি আপনার বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করুন।
আমরা বিরক্ত হই কারণ আমরা চূড়ান্তভাবে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে জানি না। যারা সঠিকভাবে খাবারটাও জোগাড় করতে পারেন না তাদের কথা চিন্তা করুন। তাদের সবার জন্য প্রার্থনা করুন।
সর্বশক্তিমান আপনাকে কখনো হতাশ করবেন না। তাঁর সাথে আপনার সংযোগে ওঠানামা থাকতে পারে তবে এটি চিরন্তন। তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করুন।
সর্বশক্তিমান জানেন আপনি কখন আহত হন। পৃথিবী কখন আপনার পাশে নেই সেটিও তিনি জানেন। তিনি আপনাকে দেখছেন। তিনি তাও দেখতে পারে আপনি যা দেখতে পারেন না।
এরপর কাল : জীবন বদলানোর টিপস : বিষণœতা-ক্যারিয়ার

 


আরো সংবাদ



premium cement