জীবন বদলানোর টিপস : বিষণœতা (এক)
- মুফতি ড. ইসমাইল মেনক
- ২৮ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
[জিম্বাবুয়ের মুফতি ড. ইসমাইল মেনক এ সময়ের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী স্কলার। তিনি মদিনায় ইসলামের ওপর উচ্চতর পড়াশোনা এবং অলডারগেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোশ্যাল গাইডেন্সের ওপর ডক্টরেট করেছেন। তিনি টুইটারে কোভিড-১৯ এর লকডাউনের সময় অনুশীলনের জন্য গিফট করা দু’টি বইয়ে জীবনাচরণের বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে সহজ সরল কিছু টিপস দিয়েছেন। লকডাউন গিফটের জীবন বদলানোর তৃতীয় আলোচনা হলো বিষণœতা । এই পরিচ্ছেদের প্রথম অংশটি আজ। অনুবাদ করেছেন মাসুমুর রহমান খলিলী।]
যখন আমরা বিষণœ হই, তখন আমাদের স্রষ্টার সাথে সম্পর্কটি কেমন সেটি দেখতে হবে। এটা কি ভালো? এ সম্পর্ক কি অক্ষত? সংযোগটি যদি ছিন্ন হয়ে যায় তবে অন্তর কিভাবে স্বাচ্ছন্দ্য পেতে পারে? সর্বশক্তিমান ছাড়া কে জানেন দুঃখ এবং কান্না একটি হাসি দিয়ে লুকিয়ে রাখা যায়। পৃথিবীতে আমাদের যা দেখানো হয়েছে তা কেবল একটি ঝলক। আপনার দুঃখের বিষয় তাঁর কাছেই নিবেদন করুন।
আপনি পরীক্ষা, হতাশা, সংশয়, উদ্বেগ এবং ভয়ের মুখোমুখি হতে পারেন; তবে জেনে রাখুন যে আপনি যদি কেবল তাঁরই দিকে মনোনিবেশ করেন তবে তিনি সব কিছুরই দেখাশুনা করবেন।
আপনি যখন নিচে পড়ে যাবেন তখন নিজেকে ওই জিনিসগুলো যা বলবে তা বিশ্বাস করবেন না। নিজেকে উচ্চকিত করে রাখবেন। শয়তান বিষণœ ব্যক্তিকে ভালোবাসে। তাকে আপনার মনের সাথে গণ্ডগোল পাকাতে দেবেন না।
আপনি যখন একাকিত্ব ও দুঃখ বোধ করেন তখন সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ জানান। তিনি দুনিয়ার বিষয়গুলো থেকে দূরে সরিয়ে আপনার মনকে তাঁর দিকে মনোনিবেশ করছেন। শান্তি অনুভব করুন।
আমরা অসুখী হওয়ার একটি বড় কারণ হলোÑ আমরা খুব বেশি চিন্তা করি। এমন জিনিস থেকে আপনার মনকে দূরে রাখুন যেগুলো আসলে আপনাকে সাহায্য করে না। ইতিবাচক চিন্তা অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়।
আপনি যখন পিছলে যান তখন আপনার ভারসাম্য আবার ফিরে পাবেন; কিন্তু যখন আপনার জিহ্বা পিছলে যায়, তখন ক্ষতি যা হবার হয়ে যায়। সুতরাং গসিপ থেকে সাবধান থাকুন। এটি একজন ব্যক্তির মর্যাদাকে চুরির মাধ্যমে হরণ করে। প্রতিটি অসুবিধা আপনাকে আরও ভালো কিছু করার জন্য প্রস্তুত করছে। তাই দুঃখবোধ করবেন না। সর্বশক্তিমান আপনার জন্য সর্বোচ্চ মঙ্গল চান আর ইবলিশ চায় আপনাকে ধ্বংস করতে । সাবধান হোন।
হে পরাক্রমশালী। আমি যখন হতাশ হই, আত্ম-সংশয়ে পড়ে যাই, হৃদয়ে নিরাপত্তাহীনতা এবং আশাহীনতায় পড়ি তখন আপনি আমাকে আবার আস্থা ফিরে পেতে সাহায্য করুন। আশা দিয়ে আমার হৃদয় ভরে দিন।
আপনি যখন একাকিত্ব, শূন্যতা এবং হতাশ বোধ করবেন তখন জেনে রাখুন এর সবই আপনার জন্য পরীক্ষা এবং ফলপ্রাপ্তির অংশ। আপনার হৃদয়কে শান্তির জন্য সর্বশক্তিমানের অভিমুখী করুন। বিষণœ হবেন না। আপনি যখন সর্বশক্তিমানের ইচ্ছা বুঝতে শুরু করেন, তখন যে পরিস্থিতিই হোক না কেন আপনি শান্ত বোধ করবেন। আপনি তাকে ধন্যবাদ জানাবেন, শোকর করবেন। আপনার স্রষ্টা ছাড়া আর কারো কাছ থেকে কখনোই প্রত্যাশা করবেন না। কখনো কোনো কিছু অনুমান করবেন না। জিনিসগুলো যেভাবে হয় তার একটি কারণ থাকে। বেঁচে থাকার জন্য এটি ভালো টিপস। সবকিছু একটি কারণে ঘটে; এমনকি যেগুলো আমাদের বিষণœ করে সেগুলোরও সব পরিস্থিতিতে এক একটা শিক্ষা রয়েছে। এগুলো থেকে শিখুন এবং সর্বশক্তিমানের কাছে কৃতজ্ঞ হন।
এই পৃথিবীটাই এমন যে মানুষ আপনাকে আঘাত করে যাবে। একমাত্র সর্বশক্তিমানই আপনাকে নিরাময় করতে পারেন। তাঁর প্রতি আস্থা রাখুন, তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ শ্রোতা। প্রকৃতপক্ষে কেউই আপনাকে পুরোপুরি জানেন না, শুধু তিনিই জানেন যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছিলেন। যখন আপনি আশা হারিয়েছিলেন এবং ভেবেছিলেন যে নিঃশেষ হচ্ছেন; তখন তিনি আপনাকে তুলে এনেছেন এবং সর্বদা এটি হবে!
ব্যর্থতার পরে আপনি কেন পরাজিত বোধ করেন? এই জীবন কখনই নিখুঁত হয় না। সুতরাং নিজেকে তুলে ধরুন এবং এগিয়ে যান। সর্বশক্তিমান আপনাকে দেখছেন। গতকালের কষ্ট এবং ভুলগুলোতে আটকে থাকবেন না। অতীতে আপনাকে কীভাবে আহত করা হয়েছে তা নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনার যা আছে তাতে মনোনিবেশ করুন এবং এগিয়ে যান। বেঁচে থাকুন।
মনে মনে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা রেখে সারা জীবন চলতে যাবেন না। নেতিবাচক সব ঝেড়ে ফেলুন। ইতিবাচক চিন্তার জন্য জায়গা করে নিন। এরপর পার্থক্য দেখুন।
সব কিছুই কোনো না কোনো পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটাই জীবন। দুঃখবোধ করবেন না এবং আপনার স্রষ্টার সাথে লিঙ্কটি হারাবেন না। দৃঢ় থাকুন। এটি আপনার জন্য সহজ-স্বাচ্ছন্দ্য থাকার একমাত্র উপায়।
কী কাজ হয়নি তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা বন্ধ করুন। আপনি ঠিক সে অবস্থাতেই আছেন সর্বশক্তিমান যেভাবে চেয়েছেন। সুযোগ নষ্ট করবেন না। দিনটিকে কাজে লাগান। শয়তান যদি আপনাকে একবার পরাভূত করে তবে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়ে পাল্টা আঘাত করুন। দু’বার যেন ইবলিশ সুযোগ না পায়; প্রথমে পাপ করার পরে আপনাকে তাঁর রহমতের আশা থেকে হতাশ করতে পারে।
যখন কোনো জিনিস আপনাকে কষ্ট দেয় বা প্রচুর যন্ত্রণার কারণ হয়, তখন এই কষ্টে হারিয়ে না যাওয়ার বিষয়ে সাবধান থাকুন। উপরে হাত তুলুন; সর্বশক্তিমান যে বার্তা দিচ্ছেন তা উপলব্ধি করুন।
কোন অবস্থার মধ্য দিয়ে আপনি যাচ্ছেন তা বিবেচনা না করেই মনে রাখবেন যে, এটি জীবনের জন্য একটি আশীর্বাদ। অভিযোগ এবং বিতর্ক কম করুন। এর পরিবর্তে আরও বেশি ভালোবাসা এবং প্রশংসা করতে শিখুন।
আপনি যদি চান আপনার হৃদয়ে শান্তি বিরাজ করুক, তবে ক্রোধ, বিরক্তি, দোষারোপ এবং উদ্বেগকে বিদায় করুন। আপনি আবেগের দিক থেকে আরও ভালো একজন ব্যক্তি হতে পারবেন।
যখন আমরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়ি, তখন আমরা দুঃখিত হই। আমরা আশা হারিয়ে ফেলি। আমরা ভুলে যাই যে তিনি আমাদের ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের জন্য পুরস্কৃত করেন, যা কিছু হারিয়েছি সেসব ভাবনা ছাড়িয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
আপনি হতাশ হতে পারেন এবং হতাশার গভীরতায় আটকে থাকতে পারেন। তবে মৃত্যুর মাধ্যমে কখনই আপনার দুঃখ-কষ্টের অবসান চাইবেন না। আপনাকে সর্বশক্তিমানের কাছাকাছি আনার জন্য পরীক্ষাগুলো করা হচ্ছে, ভেঙে পড়ার জন্য নয়।
সর্বশক্তিমান আপনাকে তা দিতে পারেন যা আপনি চান এবং তখন আপনি জীবনের সবকিছু পেয়েছেন বলে মনে হতে পারে। তবে সন্তুষ্টি না থাকলে আপনি কখনোই খুশি হবেন না।
আমাদের জীবন আরও জটিল হচ্ছে। আমরা একে অপরের সাথে খুব কমই কথা বলি তবে আমরা টেক্সট পাঠিয়ে যোগাযোগ করি। আমাদের অনুভূতিগুলো এখন আপডেট হয় স্ট্যাটাস দিয়ে। তিনি আমাদের সবাইকে সাহায্য করুন।
জীবনে আপনি যা করেন না কেন তার কোনো কিছুই কখনো অপচয় হয় না। প্রতিটি ব্যর্থতা, প্রতিটি ঘাত অভিঘাত সর্বশক্তিমানের কাছাকাছি পৌঁছানোর উপায়। এটি নষ্ট করবেন না।
এমনকি যখন আপনার কষ্ট অসহনীয় হয় এবং আপনি পুরোপুরি সন্দেহের মধ্যে পড়ে যান, তখনো কোনোভাবেই হাল ছাড়বেন না। আপনি যখন জানতে পারবেন যে তিনি আপনার সাথে আছেন তখন আপনার কী করার আছে, তাঁর রহমতই আপনাকে অনুসরণ করবে।
ভয়ের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে অস্বীকার করুন। কারণ আপনি সর্বশক্তিমানকে পুরোপুরি বিশ্বাস করেন। এমনকি সময়ের অন্ধকারেও, আপনার জন্য সব জিনিসকে সঠিক করতে তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখেন।
অনেক সময় মনে হতে পারে আপনি আটকে আছেন এবং কোথাও যেতে পারছেন না। এ জীবনে মনে রাখবেন, আপনাকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আবার পিছনে যেতে হতে পারে।
দুঃখিত হবেন না। দুঃখবোধ হৃদয়কে দুর্বল করে এবং আপনাকে এগিয়ে যেতে বাধা দেয়। সর্বশক্তিমান সম্পর্কে ভালো চিন্তা করুন; তাঁর ওপর আস্থা রাখুন। আপনি সুখের পথ খুঁজে পাবেন।
এরপর কাল : জীবন বদলানোর টিপস : বিষণœতা-দুই
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা