জীবন বদলানোর টিপস : অনুতাপ (চার)
- মুফতি ড. ইসমাইল মেনক
- ২৭ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
[জিম্বাবুয়ের মুফতি ড. ইসমাইল মেনক এ সময়ের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী স্কলার। তিনি মদিনায় ইসলামের ওপর উচ্চতর পড়াশোনা এবং অলডারগেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোশ্যাল গাইডেন্সের ওপর ডক্টরেট করেছেন। তিনি টুইটারে কোভিড-১৯ এর লকডাউনের সময় অনুশীলনের জন্য গিফট করা দু’টি বইয়ে জীবনাচরণের বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে সহজ সরল কিছু টিপস দিয়েছেন। লকডাউন গিফটের জীবন বদলানোর দ্বিতীয় আলোচনা হলো অনুতাপ। এই পরিচ্ছেদের শেষ অংশটি আজ। অনুবাদ করেছেন মাসুমুর রহমান খলিলী।]
অন্যদের সম্পর্কে শুধু ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে গল্প ছড়াবেন না। কাউকে নিয়ে গল্প বানানো অনেক বড় পাপ। ভয় করুন যে, প্রকৃত বিষয়টি কি তা সর্বশক্তিমান জানেন ।
‘খারাপ’ কিছু কেন ঘটেছে তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ বন্ধ করুন। আপনি যেটাকে ‘খারাপ’ হিসাবে দেখছেন সেই ব্যক্তি আপনাকেও সেভাবে দেখতে পারে। কেবল সর্বশক্তিমানই কোনো ভুল করেন না।
সর্বশক্তিমান যখন ‘না’ বলেন, আমাদের লক্ষ্যের মধ্যে তা রাখা আর উচিত নয়। তিনি আমাদের কষ্ট ও দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করছেন। তাঁর গোপন কৃপার উপর আস্থা রাখুন।
আপনি কখনো জীবনের লক্ষ্য হারিয়ে যাওয়ার বিষয় অনুভব করেন অথবা আপনার জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন তবে যিনি আপনাকে গর্ভে সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর সাথে যোগাযোগ বজায় রাখুন। আপনার স্রষ্টা। আপনি এর উত্তর পেয়ে যাবেন।
এটি একটি দুঃখজনক সত্য। আমরা অপরাধী। সর্বশক্তিমান যতক্ষণ না আমাদের কাছ থেকে সেগুলো সরিয়ে নিয়ে যান ততক্ষণ আমরা আমাদের প্রতি যে রহমত ও কৃপা তার জন্য প্রশংসা করি না। অনেক বেশি দেরি হওয়ার আগেই জেগে উঠুন।
আপনি যদি এখন খুব কঠিন সময় পার করে থাকেন তবে আপনার আগের চেয়ে তাঁর আরও বেশি প্রয়োজন এখন। অন্য লোকেরা আপনার জন্য সবকিছু ঠিক করে দেবে এমন আশা করবেন না। তাঁর কাছে স্বাচ্ছন্দ্য ও দিকনির্দেশনা চান।
আপনার কথা এবং কাজ সম্পর্কে বিশেষ সতর্ক থাকুন। আপনি যদি অন্যকে খারাপভাবে আঘাত করেন, বাহ্যিকভাবে পরে ভালো হয়ে গেলেও এটি সর্বদা তাদের মনের পিছনে থাকবে।
কষ্টের একটা কারণ আছে। এটি আপনার হৃদয়কে নরম করবে। এটি আপনাকে সর্বশক্তিমানের আরও কাছাকাছি পৌঁছে দেবে। এটি আপনাকে তাঁর ঐশ্বরিক সুবুদ্ধি প্রত্যক্ষ করাবে। কষ্টের সাথে আলিঙ্গন করুন।
যখনই আপনি এই যাত্রাটিকে খুব কঠিন বলে অনুভব করেন, সর্বশক্তিমানকে মনে রাখুন যা কিছু হচ্ছে তার পেছনে কারণ রয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষার একটি উদ্দেশ্য আছে। এটা সামনে থাকলে তা আমাদের স্বস্তি দেবে।
পরাক্রমশালী। আমার হৃদয় থেকে ভার তুলে নিন এবং সহজকে এর প্রতিস্থাপন করুন। আমাকে নতুন শক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে আগামীকালের মুখোমুখি হওয়ার জন্য আশা দিন।
আপনি এমনভাবে কাজ করেে যেন অতীতের জন্য গর্বিত নন । আপনি একা নন। হতাশ হবেন না। নতুনভাবে শুরু করুন। প্রার্থনা করুন। সর্বশক্তিমান আপনার কাছ থেকে শুনতে অপেক্ষা করছেন।
আমাদের বয়স কত অথবা আমরা নিজেদের কতটা স্মার্ট বলে মনে করিÑ এসব কোনো বিষয় নয়, আমরা সবাই ভুল করি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এটি চিহ্নিত করা এবং দ্রুত এটি ঠিক করে নেয়া।
আপনি যদি পরিবর্তন চান তবে বদলে ফেলার প্রথম পদক্ষেপটি নিন। বাকিটি সর্বশক্তিমানের কাছে ছেড়ে দিন। এটি আজ বা কাল নাও হতে পারে তবে জেনে রাখুন আপনি সেখানে পৌঁছে যাবেন।
খুব তাড়াতাড়ি মন্তব্য করবেন না। আপনার কোনো ধারণাই নেই অন্যরা কী অবস্থার মুখোমুখি। সুতরাং আপনার হৃদয়কে পরিষ্কার করুন এবং আপনার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এটাই আসল সংগ্রাম।
অতীত নিয়ে চিন্তা করে বিচলিত হবেন না। আফসোস করে সময় নষ্ট করবেন না। ভুল থেকে শিখে সামনে এগিয়ে চলবেন। বর্তমানের প্রশংসা করুন এবং এর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানান।
কী ছিল এবং কী হতে পারত তার জন্য বিলাপ করবেন না। এখন আপনার যে ত্যাগ এবং দৃঢ় বিশ্বাস সঙ্গে আছে সেটাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগান। সব কিছুর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিন।
সর্বশক্তিমান আমাদের সাথে প্রতিদিন বিভিন্নভাবে কথা বলেন। যদি আমরা তাঁকে শুনতে না পারি অথবা তাঁকে শুনতে পছন্দ না করি, তবে ধরে নিতে হবে আমাদের বিবেকবোধে কোন ঝামেলা আছে। চিন্তা-ভাবনা করুন কোথায় সমস্যা।
সত্যটি হল আমরা সর্বশক্তিমানের অনুগ্রহ উপভোগ করতে খুব ব্যস্ত যে, এর জন্য সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ জানানোর মতো সময় থাকে না। তিনি সব কিছু নিয়ে যাওয়ার আগে এটি করুন।
জীবন সবসময় সুখের হবে এমন নয়। দুঃখ এবং যন্ত্রণাকেও আলিঙ্গন করুন। তবে কোনো সময়ই সর্বশক্তিমানকে ভুলে যাবেন না। প্রতিটি ভয়, প্রতিটি স্বপ্ন, প্রতিটি আশা সম্পর্কে তাঁর সাথে কথা বলুন। তিনি সব শোনেন।
কোথাও কোনোভাবে কোনো সময় আমরা এই জীবনের প্লটটি হারিয়ে ফেলি। আমরা ভুলে যাই কেন আমরা এখানে আছি। অনেক দেরি হওয়ার আগে আমাদের পুনরায় ফোকাস ঠিক করা দরকার।
পরাক্রমশালী। আমাদের বুঝতে সহায়তা করুন যে আমাদের কাছে যা আছে তা সবই আপনার কাছ থেকে উপহার। আপনার জান্নাত উপার্জনের জন্য সেরা উপায়ে উপহারটি ব্যবহার করতে আমাদের গাইড করুন।
আপনি অনেক বেশি ভুল করেছেন বলে কি আশা হারিয়েছেন এবং সর্বশক্তিমান আর কোনোভাবেই সাহায্য করবেন না বলে মনে করছেন? আপনি স্মরণে রাখুন যে, তিনি পরম করুণাময়, দয়ার আধার, সবচেয়ে বড় ক্ষমাশীল। এখনই তাকে ডাকুন।
অনেকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বেশ অধৈর্য, ক্ষুব্ধ এবং সংশয়ী হয়ে ওঠে। এটি ভালো নয়। আমরা জানি না সামনে কী আছে, তবে সর্বশক্তিমান জানেন। তার ওপর আস্থা রাখুন।
ধৈর্য কঠিন তবে এটি অত্যাবশ্যক। প্রার্থনা এবং হৃদয়ের সাথে এটিকে একত্র করুন যাতে তা সর্বদা সর্বশক্তিমানের সাথে সংযুক্ত থাকে, আপনার কঠিন দিনগুলো এতে আরও সহজ হয়ে যাবে।
আমাদের সবারই দুর্বলতা আছে; বারবার এটি আমাদের অন্তর থেকে বেরিয়ে আসে। আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য সর্বশক্তিমানের সাহায্য প্রার্থনা করুন। যে হৃদয় সর্বদা তাঁকে ভাবতে ব্যস্ত তার খারাপ কিছু করার কোনো সময় থাকবে না।
যেভাবেই সম্ভব দয়া মায়া ছড়িয়ে দিন। মনে রাখবেন এটি কল্যাণ কাজের একটি ধরন। আপনি যা করছেন তা কোনো না কোনোভাবে কোনো একদিন আপনার কাছে ফিরে আসবে।
সে সময় আমরা অনুভূতিগুলি বর্ণনা করার মতো ভাষা পাবো না, ফলে আমরা নীরব হয়ে থাকব। হতাশ হবেন না। পরাক্রমশালী এটি অন্য সবার চেয়ে ভালো বোঝেন।
সময়কে অভিশাপ দেবেন না। সর্বশক্তিমানই সময়ের মালিক। আমাদের সবার ২৪ ঘণ্টা সময় আছে। কিছু কিছু মানুষ অন্যের তুলনায় প্রতিটি দিনই বাড়তি সময়ের বরকত পান। এটা তাঁর কৃপা।
পরাক্রমশালী। আমাদের প্রতিদিনের তাড়াহুড়োর প্রার্থনার দুর্বলতার জন্য ক্ষমা করুন, এর ভুল ত্রুটি ও ভ্রান্তির জন্য ক্ষমা করে দিন। আমরা কেবল আমাদের পার্থিব ইচ্ছা পূরণে ছুটে চলি।
আপনি যখন প্রার্থনা করেন তখন আপনি কতটা বিচ্ছিন্ন বোধ করেন সেটি কোন বিষয় নয়, সংযোগ ছেড়ে দেবেন না। আপনি আবার মনের সংযুক্তি ফিরে পাবেন।
আপনার প্রতি অতীতের কোনো অন্যায় থাকতে পারে। এর মধ্যে আটকে থেকে যাবেন না। এ জন্য আমাদের শেষ বিচারের দিন রয়েছে। জীবনের সাথে এগিয়ে যান। সাধ্যমতো সর্বোত্তমটি করার চেষ্টা করুন। সর্বশক্তিমানে আস্থা রাখুন!
যখন কেউ আপনাকে আক্রমণ করতে চেষ্টা করে, মনে রাখবেন তারা আপনাকে যা করবে তা আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, কিন্তু আপনার প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ আপনি করতে পারেন। নিজেকে রক্ষা করুন এবং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন না।
এরপর কাল : জীবন বদলানোর টিপস : বিষণœতা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা