২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সময়ের দাবি বুঝতে হবে আলেমগণকে

-

আলেম সমাজকে পরিবেশ পরিস্থিতি, বিশেষ অবস্থা ও সময়ের দাবি বুঝতে হবে। তারা তা বুঝতে ব্যর্থ হলে ইসলামেরই ক্ষতি হবে। মানুষ ইসলামের দিকে আকৃষ্ট না হয়ে ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কারণ স্থান কাল অবস্থা পরিবেশ পরিস্থিতি পরিবর্তনের ফলে ফতোয়ার পরিবর্তন হয়।
ইবনুল কাইয়্যিম তার ‘এ‘লামুল মুয়াক্কেয়িন আন রাব্বিল আলামিন’ নামক বিখ্যাত গ্রন্থে, ইবন আবেদীন তার ‘নাশরুল ওরফ’ নামক রিসালায় এবং ড. ইউসুফ আল কারজাভি তার বিভিন্ন গ্রন্থে এ বিষয়টি বেশ চমৎকারভাবে আলোচনা করেছেন। এ কারণেই আলেমদের জন্য সময়, কাল, স্থান পরিবেশ পরিস্থিতি ও সময়ের দাবি বোঝা আবশ্যক। ইমাম শাফেয়ীর কাওলে কাদিম ও কাওলে জাদিদ এ কারণেই প্রদত্ত হয়েছিল।
তিনি হেজাজে থাকাকালে যেসব অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন, মিসরে গিয়ে তার অনেক কিছু পরিবর্তন করেছিলেন। কারণ হেজাজের অবস্থা ও পরিবেশ পরিস্থিতি আর মিসরের পরিবেশ পরিস্থিতি এক ও অভিন্ন ছিল না; যার কারণে তাকে তার আগের অভিমত পরিহার করে তদস্থলে নতুন অভিমত দিতে হয়েছে।
এ উপমহাদেশের বিখ্যাত মুহাদ্দিস আলেম আবদুল আজিজ মহাদ্দেসে দেহলাভী তার সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে ইংরেজি ভাষা শেখা হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন। আবার এ উপমহাদেশেরই বিখ্যাত ফকিহ মুফতি শফী রা: তার যুগের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে, ইউরোপ আমেরিকায় ইসলাম প্রচার ও ইউরোপীয়দের আবিষ্কৃত জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জনের জন্য তার ‘জাওয়াহেরুল ফিকাহ’ নামক গ্রন্থে ইংরেজি ভাষা শেখা ফরজ বলে অভিমত দেন।
শুধু তা-ই নয়, তিনি তার ছেলে তাকি ওসমানীকে ইংরেজি ভাষা শিখতে উদ্বুদ্ধ করেন। যার কারণে তাকি ওসমানী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন ও বাণিজ্য বিষয়ে উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন।
এটা তারা রাসূল সা:-এর সুন্নাহ অনুসারেই করেছেন। কারণ স্বয়ং রাসূল সা:ই পরিবেশ পরিস্থিতি ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভিন্নতর অভিমত দিয়েছিলেন।
১. আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত। এক লোক রাসূল সা:-কে রোজাদারের জন্য স্ত্রীকে আলিঙ্গন ও মর্দন করা বৈধ কি না প্রশ্ন করেন। তখন রাসূল সা: তাকে তা করার অনুমতি দেন। অতঃপর আর এক লোক এসে তাকে একই প্রশ্ন করেন। তখন রাসূল সা: তাকে তা করতে নিষেধ করেন। তখন দেখা গেল যে লোকটিকে আলিঙ্গন করতে অনুমতি দিয়েছিলেন সে লোকটি ছিল বয়স্ক, আর যে লোকটিকে নিষেধ করেছিলেন সে ছিল যুবক।’ [আবু দাউদ : খ-২, পৃ-৩১২, হা: ২৩৮৭; শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানি হাদিসটি হাসান সহিহ বলে মন্তব্য করেন।]
২. ইবন আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত রয়েছে, ‘বৃদ্ধ রোজাদারের জন্য স্ত্রীকে আলিঙ্গন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, আর যুবকদের জন্য তা মাকরুহ সাব্যস্ত করা হয়েছে।’ [ ইবন মাজাহ, খ-১, পৃ-৫৩৯, হা: ১৬৮৮; শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানি হাদিসটি সহিহ বলে মন্তব্য করেন।]
লেখক : অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়, কুষ্টিয়া


আরো সংবাদ



premium cement