দোয়া : মুমিনের প্রধান হাতিয়ার
- জহির উদ্দিন বাবর
- ১৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
কোনো কিছু চাইলে অত্যন্ত খুশি হন এমন সত্তা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। বান্দা যত চায় আল্লাহ তত দেন এবং তত বেশি খুশি হন। আল্লাহর কাছে বান্দার এই চাওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় দোয়া। এর মধ্য দিয়ে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি হয়। দোয়া শব্দের অর্থ প্রার্থনা করা, আহŸান করা, কোনো কিছু পাওয়ার জন্য আকুতি-মিনতি করা ইত্যাদি। ইসলামে দোয়াকে একটি স্বতন্ত্র ইবাদতের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। দুনিয়াতে যারাই আল্লাহর প্রিয় হয়েছেন তারা দোয়ার মাধ্যমেই হয়েছেন। দোয়ার মধ্যে মানুষের পার্থিব ও পরকালীন সফলতা নিহিত আছে।
আল্লাহ তায়ালা বান্দার ওই মুহূর্তটিকে অধিক পছন্দ করেন যখন বান্দা তার নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে, তার কাছে মাগফিরাত চায়। বান্দার নিজস্ব কোনো ক্ষমতা ও ইচ্ছা নেইÑ স্বতঃসিদ্ধ এ কথাটি যখন বান্দার মুখ থেকে আকুতির মাধ্যমে বের হয় তখন আল্লাহর করুণা বান্দার প্রতি প্রবল বেগে বর্ষিত হয়। বান্দা কিভাবে তার চাহিদার কথা মহান প্রভুর দরবারে উপস্থাপন করবে তার কৌশল প্রভু নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন। নিজের কাছে কোনো কিছু চাওয়ার আহŸান করা এবং তার পদ্ধতি বলে দেয়ার দৃষ্টান্ত একমাত্র মহান আহকামুল হাকিমিনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। দুনিয়ার কোনো রাজা-বাদশাহর সাথে এর তুলনা হতে পারে না। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে দোয়া কিভাবে করতে হবে তার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার জন্য কিভাবে দোয়া করবে এ প্রসঙ্গে শিক্ষা দিয়েছেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে দুনিয়া এবং আখিরাত উভয়ের মধ্যে সফলতা দান করো এবং আমাকে জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে নাজাত দাও’ (সূরা বাকারা-২০১)। আরেক জায়গায় দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার নিজের উপর অত্যাচার করেছি; এখন যদি তুমি আমাকে মাফ না করো এবং আমার উপর দয়া না করো; তবে নিশ্চয়ই আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো’ (সূরা আরাফ-২৩)। এভাবে আল্লাহ তায়ালা বান্দাহর আহŸানে সাড়া দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন, ‘হে বান্দাহরা! তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো’ (সূরা গাফির-৬০)।
রাসূল সা: আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু ছিলেন। দোয়ার মাধ্যমে তিনি আল্লাহর কাছাকাছি চলে যেতেন। যেকোনো বিপদে-আপদে আল্লাহর রাসূল সা: দোয়ার মাধ্যমে মহান প্রভুর শরণাপন্ন হতেন। মক্কায় অবস্থানকালে কঠিন মুহূর্তে, ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধে অনিবার্য পরাজয়ের মুখে, হিজরতের সময় কাফেরদের হাতে ধরার পড়ার অতি নিকটবর্তী সময়েও রাসূল সা: যখনই আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়েছেন তখনই আল্লাহর সাহায্য এসেছে। তার রহমতের দরিয়ায় ঢেউ উঠেছে। আল্লাহ তার কৃপার অদৃশ্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রিয় নবীর সাহায্যে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ কিংবা মানবিক বিপর্যয়ের করুণ মুহূর্তে রাসূল সা:-এর সর্বোৎকৃষ্ট হাতিয়ার ছিল দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর মনোযোগ আকর্ষণ করা। তার অফুরন্ত ভাণ্ডার থেকে দয়া ও করুণার ভিক্ষা প্রার্থনা করা। গভীর রাতে সমস্ত জগৎ যখন নিঝুমপুরী, সবাই যখন ঘুমে বিভোর, তখনো রাসূল সা: উম্মতের মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে কান্নাকাটি করতেন।
দোয়ার আদব হলো, বান্দাহ তার সমস্ত দুর্বলতা আল্লাহর কাছে পেশ করবে অত্যন্ত বিনম্র ভাষায়। নিজের সব সত্তাকে বিলীন করে দেবে আল্লাহর দরবারে। নিজের চাহিদার কথা, অভাব-অনটনের কথা প্রভুকে জানাবে। প্রকৃত ও যথার্থ দোয়ার ফল অবশ্যম্ভাবী। সঠিক নিয়মে দোয়া করলে তা কখনো বিফলে যাবে না। দোয়ার ফলাফলে বিলম্ব হলেও তাতে নিরাশ হওয়ার কারণ নেই। কোনো দোয়ার ফল যদি দুনিয়াতে নাও পাওয়া যায় তবে তা আখিরাতে অবশ্যই পাওয়া যাবেÑ এ বিশ্বাস রাখতে হবে সবাইকে। সর্বোপরি অন্তরকে স্বচ্ছ, কলুষতামুক্ত করে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিতে হবে।
বর্তমানে এক কঠিন সময় পার করছে বিশ^বাসী। মহামারী করোনা থমকে দিয়েছে গোটা দুনিয়াকে। নিঃসন্দেহে এটি মানুষের কৃতকর্মের ফল। এজন্য আমাদের সবার উচিত আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা। তার দরবারে বেশি বেশি প্রার্থনা জানানো। কায়মনোবাক্যে দোয়া ও মোনাজাতই পারে আমাদের এ মহাবিপদ থেকে রক্ষা করতে।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা