২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সড়ক যেন মারণফাঁদ

-

প্রতিনিয়তই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। ঝরছে তরতাজা শত শত প্রাণ, কাঁদছে মানুষ। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বদা মানুষ মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। দুর্ঘটনা একটি অনাকাক্সিক্ষত বিষয়। অনেক সময় অজান্তেই সামনে চলে আসে আর ধ্বংস করে দেয় জীবন বা জীবনের ভবিষ্যৎ। দুর্ঘটনা জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। প্রতিদিন পাখির মতো মানুষের জীবন নাশ হচ্ছে।
অনিরাপদ সড়ক ব্যবস্থায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যুঝুঁকি। দৈনিক পত্রিকাগুলোতে আলোচ্যবিষয় হিসেবে রূপ নিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। বর্তমানে বাংলাদেশে দৈনিক মৃত্যুর হার গণনা করলে যা দাঁড়ায়, তার বড় একটি অংশ আছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু। গত ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু। একই দিন চট্টগ্রামের পটিয়ায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দম্পতিসহ তিনজন নিহত। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় আরো ৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে গত ২৬১ দিনে সড়কে দুই হাজার ১০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্য দিকে ১৯ জানুয়ারি যশোরে দুই প্রাইভেট কার দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিন নারী এবং সিলেটে দুই শিক্ষার্থী নিহত। গত ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, সারা দেশে গত বছর পাঁচ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৮৫৫ জনের মৃত্যু। আহত ১৩ হাজার ৩৩০ জন। ২০১৯ সালের সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল আগের বছর ২০১৮ সালের প্রায় সমান। ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর প্রাণহানির সংখ্যা ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয় ১৫ জুন। এই দিনে ৩১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ১২১ জন আহত হয়। এ বছর সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ১৪ জুলাই। এই দিন দু’টি সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়। [তথসূত্র :আমাদের সময়-১২.০১.২০] অপর দিকে ঢাকার শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম (এসসিআরএফ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৯ সালে চার হাজার ২১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৫ নারী ও ৭৫৪ শিশুসহ চার হাজার ৬২৮ জন নিহত ও আট হাজার ৬১২ জন আহত হয়েছেন। ওই বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মহাসড়ক, জাতীয় মহাসড়ক, আন্তঃজেলা সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কসহ সারা দেশে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ও আহতের সংখ্যা ২০১৮ সালের তুলনায় কম হলেও প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালে চার হাজার ৩১৭টি দুর্ঘটনায় চার হাজার ৫৮০ জন নিহত ও ১০ হাজার ৮২৮ জন আহত হয়েছিল। [তথসূত্র :সমকাল- ৩.০১.২০] প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে কমছে না বরং অকালে ঝরছে অসংখ্য প্রাণ, নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার। এই অস্বাভাবিক সড়ক মৃত্যুর শেষ কোথায়? আর কত প্রাণ ক্ষয় হলে আমাদের বোধোদয় হবে, সড়কে ফিরে আসবে শৃঙ্খলা। মনে প্রশ্ন আসতে পারে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার এত বেশি কেন? এর প্রধান কারণ হতে পারে অনিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা। যেখানে সড়ক পথে ট্রাফিক আইন তোয়াক্কা না করে অনেকেই বেপরোয়াভাবে দূরপাল্লার যান চালানো। ট্রাফিক আইন না মানলে চালকদের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রাখা আছে। সেখানে গাড়িচালকরা কিভাবে ট্রাফিক আইন উপেক্ষা করে গাড়ি চালাতে পারে!
চালকের আসনে বসে যারা সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের কয়জনের বৈধতা আছে? বেশির ভাগ চালকের নেই গাড়ি চালানোর বৈধ কাগজপত্র। যার খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। সড়কে চলাচলরত বেশির ভাগ গাড়ির চালকই অদক্ষ-অনভিজ্ঞ-অবৈধ। সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ অদক্ষ চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে প্রতিনিয়ত বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চালক বা মালিকের উপযুক্ত শাস্তি হয় না। এ ছাড়া আইনে সরাসরি কঠোর শাস্তির বিধান না থাকায় চালকসহ সংশ্লিষ্টরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গাড়িচালকদের মধ্যে চলে প্রতিযোগিতামূলক আচরণ। যেখানে সামান্য একটু অসাবধানতাই ডেকে আনতে পারে অসংখ্য মৃত্যু। গাড়িচালকরা প্রায়ই রাস্তার সর্বোচ্চ গতিসীমা উপেক্ষা করে গাড়ি চালান।
বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সড়ক পথগুলো দিন দিন বীভৎস রূপ ধারণ করছে। সাধারণভাবে চলাচল করা আমাদের জনসাধারণের জন্য সত্যিই খুব কষ্টকর ব্যাপার। বিশেষ করে ঢাকা ও এর আশপাশের বেশ কিছু সড়ক ও মহাসড়কের বেহাল দশা আমাদের সবার কাছেই পরিলক্ষিত। এ সব সড়কে গাড়ি চালানো তো দূরের কথা জনসাধারণের চলাচলই অনেকটা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। আর যেখানে-সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি তো এখন সারা বছরের একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে যাত্রাপথে যুক্ত হচ্ছে আরো বাড়তি দুর্ভোগ। যত্রতত্র ভাঙা সড়কও কম দায়ী নয় সড়ক দুর্ঘটনার জন্য। পাশাপাশি সড়কে আনফিট গাড়ি আজকাল হরহামেশাই চোখে পড়ছে। তদারকির অভাবে দিন দিন বাড়ছে এরকম গাড়ির সংখ্যা। সাধারণ যাত্রীরা অনেকটা বাধ্য হয়েই এসব গাড়িতে যাত্রা করছেন। আপনাদের একটু শুভ দৃষ্টি সড়ক ও পরিবহনের এই পঙ্গুত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারে। আমাদের যারা সড়কের যাত্রী। সড়কে চলি হেঁটে কিংবা গাড়িতে। রাস্তা পারাপারে, চলাচলে আমাদের চাই বাড়তি সচেতনতা। গাড়িতে ওঠানামাও যেন হয় ন্যূনতম ধৈর্যসহকারে। চলাচল নিরাপত্তায় প্রস্তুতকৃত ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে মানুষ দৌড়ে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে রাস্তা অতিক্রম করছে, এমন চিত্র মাঝে মধ্যে পত্রিকায় ছাপা হয়। তাই সর্বদা যেন খেয়াল রাখি কোনো দুর্ঘটনাই যেন আমাকে পৌঁছে না দেয় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কাছে। সড়ক দুর্ঘটনায় অসময়ের যাত্রী হওয়া জীবনগুলোকে রক্ষা করতে হবে। এ জন্য সরকারের বিশেষ মনোযোগ অবশ্যই জরুরি। সড়ক অব্যবস্থাপনার চিহ্নিত সমস্যাগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে তা সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। জনসচেতনতাই অনেকাংশে রোধ করতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা। আসুন সড়ক পথে নিজে সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করি।
লেখক: প্রাবন্ধিক


আরো সংবাদ



premium cement
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে : প্রেস উইং ব্যর্থ টপ অর্ডার, মুমিনুলের ফিফটির পর পথ দেখাচ্ছেন লিটন তেজগাঁওয়ে বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেলজিয়ামের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’ গুমের ঘটনা তদন্তে কাউকে বরখাস্ত করা হয়নি : কমিশন প্রধান দায়মুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিশেষ তদারকি শুরু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সাহস ও অভিজ্ঞতা আমার আছে ইমরানের দলের বিক্ষোভ ঠেকাতে ইসলামাবাদ লকডাউন ডেঙ্গুতে ১ দিনে সর্বোচ্চ ১১ জনের মৃত্যু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল