২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

-

একুশ শতকে পদার্পণ করে বর্তমান বিশ্ব যে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পালাবদলে অংশ নিচ্ছে নারী সেখানে এক অপরিহার্য অংশীদার, জীবন যুদ্ধেও অন্যতম শরিক ও সাথী। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কুসংস্কার কাটিয়ে নারীরা এগিয়ে আসছে মানুষের ভূমিকায়, আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে। কিন্তু তাদের অগ্রযাত্রায় যৌন নিপীড়ন, ইভটিজিং ও ধর্ষণ বিশাল প্রতিবন্ধকতার ভূমিকা পালন করছে যা নারীশিক্ষা ও তাদের জীবন যাত্রায় প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নারী নির্যাতনের সংখ্যা দ্রুত হারে যেন বেড়ে যাচ্ছে। আগামীতে সেই নির্যাতনের সংখ্যা কোথায় দিয়ে দাঁড়াতে পারে তা সচেতন মহল একটু ভাববেন বলে আশা করি। সভ্যতার এই চরম উৎকর্ষতায় এসে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের নারীরা প্রতিদিনই নির্যাতিত হচ্ছে। সাধারণত আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্টে প্রত্যেক নারী-পুরুষের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। নারীশিক্ষার বিষয়টি আমাদের সামাজিক অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে অপরিহার্য বিষয় হিসেবে জড়িত। আধুনিক সমাজে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবারই মৌলিক অধিকার সমান ও অভিন্ন। এককালে মাতৃতান্ত্রিক সামাজে নারীরা ছিল প্রধান্য। পরবর্তীকালে সমাজে পুরুষের প্রধান্য প্রতিষ্ঠিত হলে নারী হয়ে পড়ে অন্তপুরবাসী। ‘ইভটিজিংয়ের শিকার বা ধর্ষণের শিকার’ শিরোনামে সংবাদগুলো বড়ই নির্মম। চলমান বাসে ইভটিজিং কিংবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। সম্প্রতি এক ছাত্রী ধর্ষণের সংবাদ। এ অমানবিক বিষয়টি মানুষকে অবমূল্যায়ন করছে। বাড়ছে সামাজিক সমস্যা ও সমাজ জীবনে অনাকাক্সিক্ষত দুঃখ-দুর্দশা। আবার কখনো শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষা গ্রহণে যাওয়া ছাত্রী ধর্ষিতা হয়ে, যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে ফিরে আসছে। অথচ এদের কাছ থেকে পরিবার যেমন অনেক কিছু আশা করে, তেমনি জাতিও অনেক কিছু আশা করে থাকে। কিন্তু সেই স্বপ্নকে চিরতরে ধ্বংস করে দিচ্ছে। পারিবারিক শিক্ষার অভাব, আইনের সঠিক প্রয়োগ না করা, সর্বোপরি প্রত্যেক ধর্মের নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসনগুলো সঠিকভাবে পালন না করার জন্য এ ধরনের সামাজিক অবক্ষয় ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। যথার্থ উদ্দেশ্য থেকে মানব মন বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে অবক্ষয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। নৈতিক মূল্যবোধ ধুলোয় লুটোপুটি খাচ্ছে। এগুলোর জন্য দায়ী আমাদের যুবসমাজের সঠিক মনুষ্যত্ববোধের অভাব। যখন তাদের চরিত্র থেকে মহৎ গুণ বিদূরিত হয়ে অন্যায়-অনাচার আশ্রয় নেয়। জীবনের কোন মহৎ লক্ষ্য থাকে না তখন এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। দেশে আইন আছে, সমাজে ঘৃণাও আছে। তবুও দুষ্ট ক্ষতের মতো এই বিষয়টি সমাজ জীবনে নিরাময়ের অযোগ্য হয়ে আছে। কত নিরপরাধ কিশোরী-তরুণীর জীবন যে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আজ আমাদের সমাজটা অবক্ষয়ে নিমজ্জিত হতে যাচ্ছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক যেকোনো আইনে নারীর ওপর অত্যাচারের বিচার করা সরকারের দায়িত্ব। সিডো সনদের ১ অনুচ্ছেদের ৬ ধারায় বলা হয়েছেÑ ‘শরিক রাষ্ট্রগুলো নারীকে সব ধরনের অবৈধ ব্যবসায় এবং দেহ ব্যবসায়ের আকারে নারীর শোষণ দমন করার লক্ষ্যে আইন প্রণয়নসহ সব উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’। দেশীয় আইনেও এমন অনৈতিক ও মানবতাবিরোধী কাজের বিচার করা অবশ্য কর্তব্য। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(২) ও ৩৪(১) অনুযায়ী, গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা নেবে এবং সব ধরনের জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ ও আইনত দণ্ডনীয়। ইভটিজিং দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৫০৯ ধারায় দণ্ডনীয় অপরাধ। তা ছাড়া সম্প্রতি সরকার সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন প্রণয়ন করেছেন। এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমেও সর্বনিম্ন এক বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি করেছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ১০ ধারায় যৌনপীড়ন এর শাস্তি হিসেবে অনধিক ১০ বছর কিন্তু অন্যূন তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডও রয়েছে। আর যদি নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে বা অশোভন অঙ্গভঙ্গি করে, তাহলে অনধিক সাত বছর অন্যূন দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ড। ওই আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডেরও বিধান রয়েছে। প্রয়োজনে মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশকে সংশোধন ও আধুনিকায়ন করে যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি রোধে হাইকোর্টের রায়ের দিকনির্দেশনার অনুকরণে আইন প্রণয়ন করা। এসব বন্ধে সামাজিক আন্দোলন বা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন ও আধুনিকায়ন করে সঠিক ও যথাযথভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করা। বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি, সামাজিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও পাড়া-মহল্লায় কমিটি গঠন করে তাদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যৌথ উদ্যোগে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, বিশ্বের মেধা, দক্ষতা, প্রতিভার অর্ধেক ভাণ্ডার সঞ্চিত রয়েছে নারীর কাছে। সামাজিক নিরাপত্তার অভাব তাদের শিক্ষার পথে যেন বাধা না হয়। নারী সমাজ যাতে শিক্ষার আলোতে উদ্ভাসিত হতে পারে, সে লক্ষ্যে প্রয়োজন প্রচলিত ধারার পাশাপাশি বিশেষ ধরনের শিক্ষা পরিকল্পনা। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো নারী কোনো শিশু যেন ধর্ষণের শিকার না হয়। স্কুলগামী ছাত্রী যেন কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার না হয়। বাসের ভেতরে বাসের নাম্বারসহ সিসি ক্যামেরা দেয়া থাকা দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের নির্বিঘেœ যাতায়াতের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ছাত্রীরা যাতে নির্বিঘেœ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে পারে, সে জন্য শুধু তাদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা থাকতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদশ সুপ্রিম কোর্ট


আরো সংবাদ



premium cement
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা, অন্যদের কথা ব্যক্তিগত : প্রেস উইং সালাহর জোড়া গোলে জিতল লিভারপুল ১০ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা মেনে নেয়ার আহবান হাসিনা-কন্যা পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত বুটেক্স-পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে : প্রেস উইং ব্যর্থ টপ অর্ডার, মুমিনুলের ফিফটির পর পথ দেখাচ্ছেন লিটন তেজগাঁওয়ে বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেলজিয়ামের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

সকল