২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব

-

আল্লাহর নবী সা: বলেন, ‘একটি সময় আসবে মরা লাশের মতো, তখন মানুষ হবে কুকুরের মতো। তুমি কুকুর হয়ে থাকলে তুমিও খেতে থাকবে কুকুরের সাথে কুকুরের মতো। অন্যথায় কুকুর তোমাকে খেয়ে ফেলবে। তুমি কুকুরের মতো হয়ে কুকুরের সাথে মিশে খাওয়ার চেয়ে কুকুর তোমাকে খেয়ে ফেলা উত্তম হবে। সে সময় শাসকরা হবে সিংহের মতো, মন্ত্রীরা হবে বাঘের মতো। তাদের অনুসারীরা হবে শৃগালের মতো। যুবকরা হবে ধোঁকাবাজ। বয়স্করা সৎকাজের আদেশ দেবে না, অসৎকাজে বাধা দেবে না, সে সময়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হবে না। আরেক হাদিসে আল্লাহর নবী সা: বলেন, ‘আমার উম্মতের জন্য এমন এক সময় আসবে, তাদের মন বাঘের মতো হবে, কথা হবে নবীদের মতো, আর কাজ করবে ফেরাউনের মতো, তাদের সাথে আমার সম্পর্ক থাকবে না, আমার সাথে সম্পর্ক থাকবে না তাদের।’
নবী সা: আরো বলেন, ‘শিগগিরই এমন একটা সময় আসবে, ইসলামের নাম ছাড়া কিছুই বাকি থাকবে না। কুরআনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কিছু থাকবে না। তাদের মসজিদগুলো বড় ইমারতের হবে, সেখানে হেদায়েত থাকবে না।’ (আল হাদিস)। হজরত আবু দারদা রা: থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘তোমাদের দায়িত্ব হলো সৎকাজের আদেশ দেয়া, অসৎকাজে বাধা দেয়া, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের ওপর জালিম বাদশাকে বসিয়ে দেবেন, তারা বড়দের সম্মান করবে না, ছোটদের স্নেহ করবে না।’
বর্তমান প্রেক্ষাপট : ৮৫-৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষের নৈতিক, মানবিক ও চারিত্রিক অবস্থা খুবই কাহিল। বিলাসিতা আর ভোগের প্রতিযোগিতায় যেন সবাই দিশেহারা। অনৈতিকতা, দুর্নীতি ও অপসংস্কৃতি আর পাপের সাগরে ভেসে যাচ্ছে সবাই। অন্যায়কারীদের সাথে তাল মিলিয়ে চলাই যেন এখন ইজ্জত রক্ষার উপায়।
নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশ, ধর্ম ও মানুষের ক্ষতি করতেও লজ্জাবোধ নেই। এ ব্যাপারে অশিক্ষিত মূর্খদের চেয়েও তথাকথিত শিক্ষিত এবং ক্ষমতাবানরাই যেন বেশি পারঙ্গম। কিশোর অপরাধীরা সিন্ডিকেট করে অপকর্মে লিপ্ত। নারীরাও এখন পিছিয়ে নেই, যে যার মতো করে শয়তানি করে যাচ্ছে। যারা যত বেশি প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাধর, তারা যেন তত বোশ দুর্নীতিবাজ ও বিপজ্জনক। এখন সত্য কথা বলে বিপদে পড়ার চেয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বিপদমুক্ত থাকাই যেন সফলতা। দেশ-ধর্মের ক্ষতি নিজ চোখে দেখার পরও বোবা হয়ে থাকাই যেন নিরাপদ।
ভিন্নমতের লোকদের যদি খুন, গুম ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়; যারা রক্ষা করবে তারাই যদি হত্যাকারী অথবা হুকুমদাতা হয়; হত্যা করে যদি উল্লাস আর নৃত্য করা হয় লাশের ওপর; তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ কী? ধর্ম পালন এবং ধর্মীয় আচার-আচরণকে সন্ত্রাসীদের চিহ্ন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় মহলকে জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক বানিয়ে দেয়ার চক্রান্তে যদি রাজনীতি, প্রশাসন ও মিডিয়াকে ব্যবহার করা হয়; আল্লাহ তায়ালা যাদের আল্লাহ ও মুসলমানের শত্রু বলেছেন, তাদের যদি মুসলমানের কল্যাণকারী ব্যক্তি এবং অভিভাবক মনে করা হয়; তাহলে ইসলাম ও মুসলমানের ভবিষ্যৎ কী? দেশের মানুষের নৈতিক, চারিত্রিক ও আদর্শিক এই অধঃপতনের জন্য মূলত আমাদের ধর্মীয় রাজনৈতিক নেতারাই দায়ী। কারণ, তারাই দেশে ঈমান ও চরিত্রবিনাশী আকাশ সংস্কৃতি এবং পশ্চিমা হারাম রাজনীতি চালু রেখেছেন।
ধর্মীয় নেতাদের দায়িত্ব : দেশ, ধর্ম ও মানুষের জন্য কাজ করা এবং তাদেরকে ধ্বংস ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের ঈমানি দায়িত্ব। মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে সে অনুযায়ীই আল্লাহর দরবারে জবাব দিতে হবে সবাইকে। তবে ধর্মীয় নেতাদের দায়িত্বই এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি। তাদের দায়িত্ব হলোÑ ১. দেশের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে ইসলামের আলোকে কোন কাজটি দেশের এবং মানুষের জন্য উপকারী অথবা ক্ষতিকর তা সরকার ও জনগণকে জানিয়ে দেয়া; ২. দেশে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নারী ধর্ষণ, খুন, গুম এবং সব ধরনের অনাচার-পাপাচার, প্রিয় রাসূল সা:-এর বিধান বাদ দিয়ে পশ্চিমা খ্রিষ্টানদের হারাম বিধিবিধান গ্রহণ করার কারণেই যে বৃদ্ধি পেয়েছে, এ কথা মুসলমান রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়া; ৩. এই ইসলামবিরোধী বিধানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে শত্রুরা বন্ধু সেজে ইসলাম, মুসলমান এবং মুসলিম দেশের ক্ষতি করার কাজে লিপ্ত। এ কথা নেতা, কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেয়া; ৪. যারা আল্লাহ, রাসূল সা: এবং মুসলমানের দুশমন; তাদের পরার্মশ ও কথামতো কাজ করলে কী পরিণতি হতে পারে; তা রাজনৈতিক নেতা এবং দেশের জনগণকে কুরআন-হাদিসের আলোকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া আলেম-ওলামা ও ধর্মীয় নেতাদের দায়িত্ব। কারণ আল্লাহ বলেন, যারা আমি মানুষের জন্য কিতাবে যা নাজিল করেছি তা গোপন করে, তাদের ওপর আল্লাহর লানত এবং লানতকারীদের লানত। অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তার চাইতে বড় জালেম কে, তার কাছে থাকা সত্য কথা গোপন করে যে।’ (আল কুরআন); ৫. দেশ-ধর্ম-মানুষের জন্য উপকারী কাজে রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা করা এবং অন্যায় কাজে বাধা দেয়াও ধর্মীয় নেতাদের দায়িত্ব।
মুসলমান রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব : অমুসলিম ও নাস্তিক যারা তাদের কথা ভিন্ন। কিন্তু মুসলমান নেতা যারা তারা যে দলের লোকই হোক না কেন, তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে ঈমানদারির সাথে। দায়িত্বের ব্যাপারে কিয়ামতের দিন তাদের আল্লাহর দরবারে জবাব দিতে হবে। রাসূল সা: বলেন, ‘তোমরা সবাই দায়িত্বশীল, তোমাদের প্রত্যেককে তোমাদের অধীনস্থদের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে।’ রাজনৈতিক নেতারা হচ্ছেন সরকার ও প্রশাসনের পরিচালক। ধর্মীয় নেতাসহ দেশের জনগণ তাদের কথা মেনেই চলে। তারা যদি ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে; এর ফলে দেশ, ধর্ম ও মানুষের যত ক্ষতি হবে; সব পাপের বোঝা তাদেরই বহন করতে হবে।
লেখক : খতিব


আরো সংবাদ



premium cement