২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইসলামে পশুপাখির অধিকার

-

আমাদের দেশের অনেক লোক অবৈধভাবে বিক্রির জন্য বাঘের চামড়া, হরিণের চামড়া প্রভৃতি লুকিয়ে সংগ্রহ করে। পত্রিকায় আমরা দেখি যে, পরবর্তীকালে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের গ্রেফতারের পর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। শুধু সরকারি আইনেই নয়, ইসলামেও পশু ও পাখির অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে।
মহান রাব্বুল আলামিন আশরাফুল মাখলুকাতের পাশপাশি
পশুপাখি সৃষ্টি করেছেন। এটি করেছেন মানুষের কল্যাণের জন্যই। এ ব্যাপারে কালামে পাকে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি। তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৭০)
আমরা জীবনে বহুবার এমন দৃশ্য দেখেছি যে, রাস্তায় একটি কুকুর পা খুঁড়িয়ে হাঁটছে। কেউ হয়তো তার একটি পা ভেঙে দিয়েছে। এটা গর্হিত কাজ। হাদিসে আছে, হজরত সা: বলেন, ‘একবার একটি পিপাসার্ত কুকুর কূপের পাশে ঘোরাঘুরি করছে। বনি ইসরাইলের এক বেশ্যা রমণী তা দেখতে পেয়ে নিজের পায়ের মোজা খুলে কূপের পানি তোলে এবং কুকুরটিকে খাওয়ায়। এ জন্য তার পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (বোখারি- ৩৪৬৭)
আবার অনেকেই খেলার ছলে কারো ঘরের বারান্দায় চুপচাপ শুয়ে থাকা বিড়ালটাকে অনর্থক লাথি মেরে বাড়ির উঠানে ফেলে দেয়। এটি ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই অন্যায়। হাদিসে আছে, ‘এক মহিলাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে একটি বিড়ালকে আটকে রেখে খাবার ও পানি না দেয়ার জন্য। যদি সে বিড়ালটাকে ছেড়ে দিত তাহলে পোকা-মাকড় খেয়েও সে বাঁচতে পারত। (বোখারি-৩৩১৮)
রাস্তায় আমরা অনেক লেজকাটা কুকুর দেখেছি। খেলার ছলে কেউ হয়তো লেজটা কেটে দিয়েছে। এটি ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। হজরত ওমর রা: হতে বর্ণিত, ‘রাসূল সা: ওই ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন, যে প্রাণীদের অঙ্গচ্ছেদ করে।’ (বোখারি-৫১৯৫)
আমাদের আমিষের অন্যতম উৎস হলো গোশত। সেই গোশত খাবার জন্য গরু ছাগল জবাই করার সময়ও আল্লাহপাক এবং তাঁর রাসূল সা: কোনো জীবকে কষ্ট দিতে নিষেধ করেছেন। এক হাদিসে আছে ; ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি একটি ভেড়া জবাইয়ের জন্য মাটিতে শোয়াল। তারপর সে চাকুতে ধার দিচ্ছিল। তখন হজরত সা: বললেন, ‘তুমি কি পশুটিকে দু’বার মারতে চাও? তাকে শোয়ানোর আগে চাকুতে ধার দিতে পারলে না?’
সঠিকভাবে পশুপালনের ওপরও ইসলামে জোর দেয়া হয়েছে। অনেকেই গোয়াল ঘরে সন্ধ্যার পরে ঠিকমতো ধোঁয়া দেয় না, গরুকে মশায় কামড়ায়। শীতের সময় গরুকে চটের কাপড় বা ছালা দিয়ে ঠিকমতো ঢেকে দেয় না। পশুটি কষ্ট পায়। এদিকেও নজর দিতে হবে।
আমাদের দেশে অনেকেই বাড়ির আশপাশে আম, কাঁঠাল, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগান। সব সময় তো পাহারা দিয়ে রাখা সম্ভব নয়। মানুষ বা পাখি ফলফলাদি মাঝে মধ্যে খেয়ে ফেলে দেখে অনেকেই লাঠি দিয়ে তাড়া করে বা গালি দেয়। পত্রপত্রিকায় অনেক সময় দেখা যায় যে, প্রতিবেশীর ক্ষেতে একটু ঘাস খাওয়ার জন্য গরুকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। এটি শরিয়তসম্মত নয়। পশু তো তার ওপর অত্যাচারের কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। হাদিসে আছে, মহানবী সা: এরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানের লাগানো শস্য বা গাছ থেকে কোনো পাখি, মানুষ অথবা কোনো জন্তু খেলে তার জন্য ওই ব্যক্তির সদকার সওয়াব হবে।’ (সহিহ বোখারি)
ইসলামে বিভিন্নভাবে পশুপাখির অধিকার রক্ষায় গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাই আমরা কোনো পোষা প্রাণী বা রাস্তায় চলাফেরা করছে এমন সব পাখি বা জীবজন্তুকে ভালোবেসে খেতে না দিলেও, তাদের কষ্ট দেয়া থেকে যেন নিজেকে বিরত রাখি।
লেখক : প্রাবন্ধিক


আরো সংবাদ



premium cement