২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইসলামে হত্যাকারীর শাস্তি

-

বর্তমান বিশ্বে প্রতিদিন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ সংখ্যায় নিরপরাধ। ক্ষমতা লোভী শাসকেরা নিজেদের ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য বিরোধীদের হত্যা করছেন। শুধু শাসকেরা নন, স্বার্থের কারণে মানুষ মানুষকে হত্যা করছে, যা ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মৃত্যুর পর মহান রাব্বুল আলামিন পরকালে আবার মানুষকে জীবিত করবেন। কেয়ামতের দিবসে বিচারের মুখোমুখি করবেন। সেই দিন আল্লাহর নেক বান্দাহদের জান্নাত দেবেন। গুনাহগার বান্দাহদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। জাহান্নামে যাদের নিক্ষেপ করা হবে, তাদের মধ্যে একটি দল থাকবে হত্যাকারী, যারা দুনিয়াতে অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করেছিল। কুরানের বাণী আনুযায়ী তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে।
কারণে-অকারণে অর্থের লোভে অথবা ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে অন্যায়ভাবে সৃষ্টির সেরাজীব আশরাফুল মাখলুকাত, মানুষের প্রাণ হরণ করাই হলো হত্যা। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদের অনেক আয়াতের মধ্যে মানবহত্যাকে হারাম করে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা কোনো মানবকে ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া হত্যা করো না, যা তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে’ (সূরা আনয়াম : ১৫১)। অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের প্রাণকে হারাম ও মর্যাদাসম্পন্ন করা হয়েছে।
হত্যার ধরন : হত্যাকারী যদি নিজের ভ্রান্ত মতাদর্শ বাস্তবায়নের জন্য বিরোধীদের ওপর মিথ্যা অভিযোগ এনে বিচারের নামে সাজানো নাটক করে কাউকে হত্যা করে অথবা ব্যক্তি তার নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে, অপরাধীর অপরাধ অন্য একজন নিরপরাধ ব্যক্তির ওপর চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে হত্যা করে; নিঃসন্দেহে সেটি মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় অপরাধ ও গুনাহের কাজ।
যুগে যুগে এ ধরনের হত্যার বিভিন্ন ধরন ছিল। বর্তমান সময়েও অনেক হত্যাকাণ্ডের ধরন মানুষের দৃষ্টিচক্ষুর আড়াল করতে পারেনি। যেমনÑ
১. মানুষের শরীরে ছুরির আঘাত বা বল্লমের আঘাত বা বন্দুকের গুলি চালিয়ে হত্যা করা।
২. লাঠির আঘাত, পাথরের আঘাত অথবা প্রাচীরের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে হত্যা করা।
৩. এমনভাবে কষ্ট দেয়া, যা সহ্য না করতে পেরে মৃত্যুবরণ করে। উদাহরণ : পানিতে ডুবিয়ে মারা, আগুনে পুড়িয়ে মারা অথবা কারাগারের মধ্যে খাদ্য ও পানীয় না দিয়ে হত্যা করা।
৪. ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা।
৫. বাঘ বা সিংহের মতো হিংস্র প্রাণীর সামনে নিক্ষেপ করে হত্যা করা।
৬. বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করা।
৭. জাদু করে হত্যা করা।
৮. আদালতে মিথ্যা সাক্ষী দেয়ার মাধ্যমে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা।
নিরপরাধ মানুষকে যেভাবেই হত্যা করা হোক না কেন, সেটি অন্যায় ও অপরাধ। এর শাস্তি আখিরাতের সাথে সাথে দুনিয়াতেও শাস্তির বিধান রয়েছে। আর সেটি হলো কিসাস, অর্থাৎ হত্যার পরিবর্তে হত্যা। কিসাসের ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য হত্যার ব্যাপারে কিসাসের বিধান লিখে দেয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি হত্যা করে থাকলে তার বদলায় ওই স্বাধীন ব্যক্তিকেই হত্যা করা হবে। দাস হত্যাকারী হলে ওই দাসকে হত্যা করা হবে, আর নারী এই অপরাধ সংঘটিত করলে সেই নারীকে হত্যা করে এর কিসাস নেয়া হবে। তবে কোনো হত্যাকারীর সাথে তার ভাই যদি কিছু কোমল ব্যবহার করতে প্রস্তুত হয় তাহলে প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী রক্তপণ দানের ব্যবস্থা হওয়া উচিত এবং সততার সাথে রক্তপণ আদায় করা হত্যাকারীর জন্য অপরিহার্য। এটা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে দণ্ড হ্রাস ও অনুগ্রহ। এরপর যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করবে তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (সূরা বাকারা : ১৭৮)।
হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেন, কেউ যদি কাউকে হত্যা করে, তার উত্তম শাস্তির দৃষ্টান্ত হলো হত্যাকারীকে হত্যা করা অথবা কতল করা’ (মুত্তাফিকুন আলাইহি)।
তবে নিহতের পরিবার যদি চায় ক্ষমা করে দিতে পারে, অথবা দিয়াত অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে নিহতের পরিবার ক্ষমা করে দিতে পারবে।
আখিরাতের শাস্তি : কাউকে হত্যা করা ইসলাম ধর্মে অনেক বড় অপরাধ। বলা হয়, আল্লাহর সাথে শিরক করার পর বড় অপরাধ হলো মানবহত্যা। একজন মুমিন কখনো এ কাজ করতে পারে না। ইসলাম ধর্মে একজন মুমিনের জন্য অন্য মুমিনের রক্ত হারাম করা হয়েছে। মহান আল্লাহ হত্যাকারীর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তির বিধান রেখেছেন। মহান আল্লাহর বাণী : ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুমিনদের হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরদিন থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করছেন এবং তার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে কঠিন আজাব’ (সূরা নিসা : ৯৩)।
আয়াতের মধ্যে বলা হয়েছে, হত্যাকারী চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। অর্থাৎ সে দুনিয়াতে যত সাওয়াবের আমল করেছিল সেগুলো তার আর কোনো কাজে আসবে না। তাকে চিরকাল জাহান্নামেই থাকতে হবে। এমনকি অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘একজন হত্যাকারী যদি তাওবা করে, তার তাওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।’
এ জন্য ইসলাম কখনোই ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা সমর্থন করে না, বরং ইসলাম এটিকে হারাম করেছে। আর যে ব্যক্তি এই কাজ করবে তাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং আল্লাহ তার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন কঠিন আজাব।
লেখক : প্রবাসী, ইস্তাম্বুল ইউনিভার্সিটি


আরো সংবাদ



premium cement