কুপ্রবৃত্তি দমনের শিক্ষা
- ফিরোজ আহমাদ
- ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০, আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:২২
নফস সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহের অন্ত নেই। বিশেষ করে, যারা আধ্যাত্মবাদ নিয়ে চর্চা করেন। তাদের কাছে নফসের আলোচনা খুবই গুরুত্ব বহন করে। নফস এমন একটি সূক্ষ্ম বস্তু, যা কেবল পার্থিব ভোগবিলাস মায়ামোহের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করে। কুরআনুল কারিমে মানুষের বিভিন্ন ধরনের নফসের বর্ণনা এসেছে। নফসে আম্মারাহ, নফসে লাউয়ামাহ, নফসে মোলহেমা, নফসে মোতমায়িন্নাহ, নফসে রাজিয়া, নফসে মর্জিয়া প্রভৃতি। মানুষের মন সবসময় মন্দ কাজের দিকে ধাবিত হয়। জাগতিক সুখ-শান্তির ধোঁকায় পড়ে, মানুষ পরকালীন জীবনের অসীম ও অনন্ত সুখকে ইহকালেই ধুলোয় মিশিয়ে দেয়, খালি হাতে প্রভুর দিকে ধাবিত হয়। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘প্রবৃত্তি মন্দের দিকে ঝুঁকে থাকে, কিন্তু তার কথা আলাদা, যার প্রতি আমার প্রভু দয়া করেন’ (সূরা ইউসূফ : ৫৩)।
নফসের কুপ্রবৃত্তির পথ হলো, আল্লাহ তায়ালার লানত তথা শয়তানের পথ। অভিশপ্ত শয়তানের কাজ মানুষকে ধোঁকা দেয়া বা বিপথগামী করা। শয়তান যতক্ষণ পর্যন্ত না একজন মুমিন বান্দাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে, সে ততক্ষণ পর্যন্ত পার্থিব সুখ-শান্তি ও রঙ তামাশাকে মানুষের চোখের সামনে নানাভাবে তুলে ধরতে থাকে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পুরোপুরিভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং কোনো অবস্থায়ই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, কেননা শয়তান হচ্ছে তোমাদের প্রকাশ্যতম দুশমন!’ (সূরা বাকারা:২০৮)।
শয়তানের কুমন্ত্রণা সম্পর্কে সজাগ না থাকলেই বিপদের সম্ভাবনা। শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হলো আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা এবং অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকা। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘কখনো যদি শয়তান কুমন্ত্রণায় আপনাকে প্ররোচিত করে, সাথে সাথে আপনি আল্লাহ পাকের কাছে আশ্রয় চান’ (সূরা আরাফ : ২০০)। ‘আপনি বলুন, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের প্রভুর কাছে আশ্রয় চাই। তাঁর সৃষ্টি করা অনিষ্ট থেকে। আমি আশ্রয় চাই রাতের অনিষ্ট থেকে, যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। গিরায় ফুঁক দিয়ে জাদু টোনাকারিণীদের অনিষ্ট থেকে। হিংসুক ব্যক্তির অনিষ্ট থেকেও যখন সে হিংসা করে’ (সূরা ফালাক :১-৫)। আপনি বলুন, ‘আমি আশ্রয় চাই মানুষের সৃষ্টিকর্তার কাছে। মানুষের বাদশাহর কাছে। মানুষের মাবুদের কাছে। কুমন্ত্রণাদানকারী অনিষ্ট থেকে, যে গা ঢাকা দেয়। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জিনদের মধ্য থেকে মানুষের মধ্য থেকে হোক’ (সূরা নাস : ১-৬)।
যেসব মানুষ সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের সোহবতে থেকে নিজেকে সব ধরনের মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখতে পারবে তাদের ওপর আল্লাহ রাজি খুশি থাকবেন। ওই সব বান্দাহদের আল্লাহ তায়ালা জান্নাতিদের দলে শামিল হওয়ার জন্য আহ্বান করতে থাকবেন। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে প্রশান্ত আত্মা। তুমি তোমার রবের দিকে ফিরে যাও সন্তুষ্টচিত্তে ও তাঁর প্রিয়ভাজন হয়ে। অতঃপর তুমি আমার প্রিয় বান্দাহদের দলে শামিল হয়ে যাও। প্রবেশ করো আমার জান্নাতে’ (সূরা ফজর : ২৭-৩০)।
জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মাকে মুক্ত করতে চাইলে, অতীত জীবনের মন্দ কাজের বিষয় নিয়ে অনুতাপ করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। নিজেকে নিজের অতীত জীবনের মন্দ কাজগুলোর জন্য তিরস্কার করতে হবে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আরো আমি কসম করছি, সে নফসের, যে (ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য) নিজেকে ধিক্কার দেয়’ (সূরা কিয়ামাহ : ২)।
আত্মশুদ্ধি অর্জনকারী ব্যক্তি ইনসানে কামেল তথা আশরাফুল মাখলুকাত। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে মানুষের মধ্যে সেই সফলকাম যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর যে তাকে কলুষিত করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে’ (সূরা শামস : ৯-১০)। ‘যে ব্যক্তি তার মনের লোভলালসা থেকে বিরত রয়েছে তারাই সফলকাম হবে’ (সূরা তাগাবুন : ১৬)। আল্লাহ তায়ালা নফসের কুপ্রবৃত্তি থেকে বেঁচে আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য তৌফিক দান করুক। আমীন।
লেখক : প্রবন্ধকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা