২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কৃপণতার পরিণাম

-

অমিতব্যয়িতা বা অপচয় করা এবং কৃপণতা পরিভাষা দু’টি আমাদের সমাজে একটি অপরটির বিপরীত অর্থে বহুল প্রচলিত। এ দু’টির কোনোটিরই আমরা পছন্দ করি না। কিন্তু অজান্তেই আবার এর সাথে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলি। কারণে-অকারণে আবার সেগুলোকে বৈধ ও ভালো বলে ছাফাই গাইতেও কুণ্ঠা বোধ করি না।
ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে তার অবস্থানকে এ দুই পরিভাষার মধ্যবর্তী স্থানে নিশ্চিত করেছে। অর্থাৎ ইসলাম অমিতব্যয়িতাকেও যেমন প্রশ্রয় দেয় না, তেমনি কৃপণতাকেও নয়। এ অবস্থানটি যৌক্তিক এবং একে অন্যের জন্য কল্যাণকরও।
আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা হলো শুধু অর্থনৈতিক ব্যাপারগুলোর সাথে এ দু’টি পরিভাষা অর্থাৎ অপচয় ও কৃপণতা জড়িত। যেমনÑ খাবার, অর্থ এবং সম্পত্তি। কিন্তু এটি ঠিক নয়। বরং অন্যান্য বিষয়গুলোতেও অমিতব্যয়িতা এবং কৃপণতা হতে পারে। যেমনÑ সময়, জ্ঞান, চিন্তা, দক্ষতা, মানসিকতা ইত্যাদি। অর্থাৎ এ বিষয়গুলোর যেমন অপচয় হতে পারে, তেমনি বিপরীত দিকে কৃপণতাও হতে পারে। সুতরাং এসব বিষয়গুলোতেও আমাদেরকে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ যার যতটুকু করার সুযোগ ও ক্ষমতা আছে সে ঠিক ততটুকুই করবে। সুযোগ ও ক্ষমতার বেশি ব্যবহার যেমন অমিতব্যয়িতা হিসেবে গণ্য হবে তেমনি ব্যবহারে কুণ্ঠাবোধ করলে কৃপণতা হিসেবে বিবেচিত হবে। বিষয়টি নতুন মনে হলেও উদাহরণ স্বরূপ আমরা ‘সময়ের অপচয়’ পরিভাষাটিকে উল্লেখ করতে পারি। এ পরিভাষাটিও আমাদের মধ্যে বহুল পরিচিত ও প্রচলিত। তবে, প্রত্যক্ষ ঘটনায় খাদ্য, অর্থ এবং সম্পত্তির অপচয় এবং কৃপণতা আমরা বেশি লক্ষ করি বলে তা নিয়েই আমরা আলোচনা-সমালোচনা বেশি করি। ইসলাম মূলত সর্বাবস্থায় এই দুইয়ের মধ্যবর্তী অবস্থান নির্ণয় করে দিয়েছে। যা, প্রত্যেক অনুসারীর জন্য পালন করা বাধ্যতামূলক। তার কারণ হলো: অপচয় ও কৃপণতা করা হারাম (নিষিদ্ধ) : ইসলামে কোনো অর্থেই অপচয় ও কৃপণতা করার সুযোগ নেই। এগুলো নিষিদ্ধ। কারণ, এগুলো সমাজের অন্যদের বঞ্চিত করে। আল্লাহ বলেন, ‘... এবং অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপব্যয়ীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা আল-আন’আম, ৬ : ১৪১) অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘... এবং কিছুতেই অপচয় করো না।’ (সূরা আল-ইসরা’, ১৭ : ২৬) অপরদিকে, কৃপণতার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তুমি একেবারে ব্যয়-কুণ্ঠ হয়ো না এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’ (সূরা আল-ইসরা, ১৭ : ২৯)
আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। কুরআনুল কারিমে স্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হয়েছে, ‘হে বনি আদম, তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা পরিধান করো, খাও এবং পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা আল-আ‘রাফ, ৭ : ৩১)
অপচয়কারী শয়তানের ভাই। যারা এ সব কাজের সাথে নিজেদের জড়িত করবে তাদেরকে শয়তানের ভাই হিসেবে কুরআনে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।
কৃপণ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। সামর্থ্য থাকার পরেও যে ব্যক্তি নিজের এবং অন্যের প্রয়োজনে অর্থ, সম্পত্তি, মেধা, বুদ্ধি, চিন্তা, দক্ষতা ব্যয় করে না, সে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ (সা:) ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘কৃপণ ব্যক্তি কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসনাদু আহমাদ, হাদিস-১৯১)
কৃপণদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব। আল্লাহ ঘোষণা করছেন, ‘যারা নিজেরাও কার্পণ্য করে এবং অন্যদেরকেও কৃপণতা শিক্ষা দেয় আর গোপন করে সেসব বিষয় যা আল্লাহ তা’আলা তাদের দান করেছেন স্বীয় অনুগ্রহেÑ বস্তুত কাফেরদের জন্য তৈরি করে রেখেছি অপমানজনক আজাব।’ (সূরা আন-নিসা, ৪ : ৩৭; আরো দেখুন : সূরা আল-হাদিদ, ৫৭ : ২৪)
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ইসলাম তাহলে আমাদেরকে কী শিক্ষা দিচ্ছে? উত্তর হলোÑ আমাদের এ দুইয়ের মধ্যবর্তী হতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের সামর্থ্য থাকার পরেও রাসূলুল্লাহ সা: এর সাদাসিদে জীবনযাপনের উদাহরণ টেনে অর্থ কড়ি খরচ না করে দীনহীনভাবে চলাফেরা করেন। কিন্তু তারা ভুলে যান যে, রাসূল সা:-এর কোনো গচ্ছিত অর্থ-কড়ি সম্পত্তি ছিল না বিধায় তিনি দীনহীন সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন, অনাহারে, বুভুক্ষ অবস্থায় থাকতে বাধ্য হতেন। তাঁর সা: আর্থিক সচ্ছলতার দিনে অনাহারে ছিলেন বা পরিবারের প্রয়োজন পূরণ করেননি তার কোনো প্রমাণ আমরা পাই না। সুতরাং আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিত যে, আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী জীবন নির্বাহ করব, অন্যের উপকারে আসব। সে ক্ষেত্রে অমিতব্যয়ীও হবো না আবার কৃপণতাও করব না।
লেখক : শিক্ষক


আরো সংবাদ



premium cement