২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কুরআনের দেখানো পথে চলুন

-

আল্লাহ বলেন, ‘আলিফ লাম মিম। জালিকাল কিতাবু লা-রাইবা ফিহি। হুদাল্লিল মুত্তাকিন। অর্থ: আলিফ লাম মিম। এই কিতাবে কোনো সন্দেহ নেই। এটি আল্লাহভিরুদের জন্য হুদা- অর্থাৎ পথপ্রদর্শক।’ অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এই পবিত্র গ্রন্থ পবিত্র মাস রমজানে নাজিল করা হয়েছে। এ গ্রন্থ মানবজাতির জন্য সুস্পষ্ট হেদায়াত তথা পথপ্রদর্শক এবং সত্য মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী।’
এমনিভাবে অনেক আয়াতেই কুরআন নিজেকে মানবজাতির হেদায়াত তথা গাইড হিসেবে উল্লেখ করেছে। আরবি ‘হুদা’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘গাইড’। যেমন বলা হয় ‘টুরিস্ট গাইড’। আপনি কোনো অপরিচিত জায়গায় ভ্রমণে বের হলে ওই জায়গা সম্পর্কে ভালো চেনা-জানা আছে এমন একজনকে আপনার গাইড হিসেবে নিতে পারেন। ধরুন, আপনি সুন্দরবনের গহিনে ভ্রমণ করতে চান। ওই বন সম্পর্কে জানাশোনা আছে এমন একজনকে আপনি গাইড হিসেবে নিলেন। মনে করুন তার নাম মনা। তো এই মনাই আপনার গাইড। বলতে পারেন টুরিস্ট গাইড। আরবি ভাষায় এই মনা মিঞাকেই বলে হুদা। আপনি যখন ঘর থেকে বের হবেন, আবার ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত মনা মিঞার কথানুযায়ীই আপনাকে চলতে হবে। আপনি যদি গাইড মনার কথার বাইরে একচুলও নড়েন, সম্ভাবনা আছে বনের গহিনে হারিয়ে যাওয়ার। শুধু তাই নয়, জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারের লাঞ্চ হিসেবেও পরিণত হতে পারেন। কিংবা হতে পারেন কুমির বা সিংহ মামার ভোজন। আপনি যদি সুস্থ ও সুন্দরভাবে ভ্রমণ শেষ করতে চান, আবার আপনার বাসায় এসে শান্তিতে গা এলিয়ে দিয়ে আরামের ঘুম ঘুমাতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে মনা মিঞাকে ফলো করেই ভ্রমণের পথটুকু শেষ করতে হবে।
এইযে মনা মিঞা আপানাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে এটাকে বলে হেদায়াত। হেদায়াত শব্দের দুটো অর্থ আছে। এক. সে আপনাকে পথ বলে দেবে। যেমন তিনি বলললেন, ভাই আমি সুন্দবন ঘুরে আবার নিরাপদে বাসায় ফিরব কিভাবে বলুন। সে আপনাকে দারুণ একটা ম্যাপ এঁকে দিলো বা বলল, এভাবে এই রাস্তায় গিয়ে ডানে যাবেন, তারপর বামের রাস্তায় যাবেন, ডানের রাস্তায় যাবেন না, এভাবে এভাবে এ পথে চললে আপনি নিরাপদ থাকবেন। এইযে আপনাকে তিনি পথ বলে দিলেন এটাও হেদায়াত। আবার আপনি বললেন, ভাই, আমি তো সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চাই। কিভাবে করব? তিনি আপনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, আরে এটা কোনো ব্যাপার? আমার সঙ্গে চলুন। এই বলে আপনার হাত ধরে সুন্দরবন ঘুরিয়ে আবার আপনার বাসায় নিয়ে আসলেন। এটাও আরবি ভাষায় হেদায়াত।
এবার আাসি মূল কথায়। সুন্দরবন ভ্রমণে মনা যে ভূমিকা পালন করেছেন এবং তার সাহায্য ছাড়া আপনি যতটা অসহায় ও বিপদগ্রস্ত ঠিক একইভাবে পৃথিবী ভ্রমণেও কুরআন আমাদের সে ভূমিকা পালন করছে। এই কুরআন ছাড়া পৃথিবী নামক মানবগ্রহে আমরা তেমনই অসহায়।
তাইতো কুরআন বারবার বলছে, ‘হুদাল্লিন্নাস-আমি মানুষের জন্য গাইড। পথপ্রদর্শক। এই গাইড ছাড়া যেই পৃথিবীর বুকে এক পা চলবে সঙ্গে সঙ্গে শয়তান নামক বাঘ-কুমির তাকে খেয়ে ফেলবে। যেমন কুরআন স্পষ্টভাবে বলছে, হে মহাজগতের যাত্রী, পৃথিবী নামক স্টেশনে আমাকে ধরে থাক। শয়তানের কথা মেনে চলো না। তাহলে তোমাদের এই স্টেশনের সুখ-শান্তিু শেষ হবে, মহাজগতের জীবনের অশান্তির বোঝা বয়ে বেড়াবে। সাবধান! ‘অবশ্যই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’
আফসোস! যেখানে কুরআন ছাড়া একটি পদক্ষেপও মানুষের জন্য বিপজ্জনক, সেখানে আজ আমরা কুরআনহীন জীবন পরিচালনা করছি। পুরো জীবনের কুরআনের একটি আয়াত অর্থসহ জানার চেষ্টা করে না এমন মুসলমানের সংখ্যাই আমাদের দেশে বেশি। তাইতো আমাদের জীবনে এত অশান্তি-এত বিপদ। আসুন! আমাদের গাইড, পথপ্রদর্শক কুরআনের দেখানো পথে চলি। দুনিয়ায় সুখি হই। আখেরাতেও চির সুখে থাকার ব্যবস্থা করে যাই দুনিয়া থেকেই।
লেখক: মুফাস্সিরে কুরআন


আরো সংবাদ



premium cement