হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ
- ড. মোহাম্মদ আতীকুর রহমান
- ২৬ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
ইসলামের পাঁচটি রোকন বা স্তম্ভের মধ্যে হজ অন্যতম। হজ মানুষের প্রতি মহান আল্লাহ কর্তৃক ফরজকৃত একটি আর্থ-দৈহিক ইবাদাত যা সক্ষম ব্যক্তির উপর সারা জীবনে কেবল একবারই ফরজ। আল্লাহপ্রেমের অনুপম নিদর্শন হজ এমন একটি ফরজ ইবাদাত যার মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর আইনের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ এবং আল্লাহর আইনের প্রতিনিধি হওয়ার উপযোগী বৈশিষ্ট্য লাভে ধন্য হতে পারেন। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ঐক্য সম্মেলন হজের অনুষ্ঠানমালা ব্যক্তির মধ্যে তীব্র দায়িত্বানুভূতির উন্মেষ ঘটিয়ে ঈমানকে বলিষ্ঠ করার সাথে সাথে সমগ্র মুসলিম জাহানকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
হজ কবুলের পূর্বশর্ত : হজ কবুল হওয়ার জন্য হালাল সম্পদ থাকা বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় তা কবুল হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ পূতঃপবিত্র। তিনি পবিত্র সম্পদ ব্যতীত অন্য কিছু কবুল করেন না।’ অপর এক হাদিসে আছে, ‘যখন কোনো ব্যক্তি হালাল সম্পদ নিয়ে হজের উদ্দেশ্যে বের হয়, অতঃপর বাহনে আরোহণ করে বলে, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ তখন আসমান থেকে জবাব আসে, হজের উদ্দেশ্যে তোমার বের হওয়া ও হজের উদ্দেশ্যে আগমন মঞ্জুর, তোমার সৌভাগ্যের দ্বার উদঘাটিত, তোমার পাথেয় হালাল, তোমার বাহন হালাল, তোমার হজ কবুল ও ত্রুটিমুক্ত ঘোষণা করলাম। পক্ষান্তরে যখন কোনো ব্যক্তি হারাম সম্পদ নিয়ে হজের উদ্দেশ্যে বের হয় এবং বাহনে চড়ে বলে ‘লাব্বাইকা আলাহুম্মা লাব্বাইকা’- তখন আসমান থেকে একজন আহ্বানকারী জবাবে বলেন, ‘লা লাব্বাইকা ওয়ালা সাদাইকা- তোমার হাজিরা মঞ্জুর নয় এবং তোমার সৌভাগ্য বলেও কিছু নেই। তোমার পাথেয়, তোমার পথের খরচ সবই হারাম। কাজেই তোমার হজ কবুল করা হলো না। (তাবারানি)
হজ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে কুরআন ও হাদিস : জীবনে একবার হজ করা ফরজ। মহান আল্লাহ হজ ফরজ হওয়া সম্পর্কে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই ঘরের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য। আর যে প্রত্যাখ্যান করবে সে জেনে নিক, নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন।’ (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)
হজ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সা:-এর অনেক হাদিস রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলোÑ
হজরত আবূ হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। অতএব তোমরা হজ করো। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! প্রতি বছর? তিনি চুপ করে থাকলেন। সে তিনবার এ কথা জিজ্ঞেস করার পর রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, আমি হ্যাঁ বললে তা (প্রতি বছর পালন করা) বাধ্যতামূলক হয়ে যেত। অথচ (তা পালনে) তোমরা সক্ষম হতে না।’ (সহিহ মুসলিম)
হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমার ইচ্ছা হয় কিছু সংখ্যক লোককে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করি এবং তারা দেখুক ওই সব লোককে যারা হজ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও তা আদায় করে না এবং তারা তাদের উপর জিজিয়া কর আরোপ করুক। কেননা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা হজ আদায় করে না তারা মুসলমান নয়।’ (সাঈদ ইবনে মানসূর, আস-সুনান)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘হে মানবজাতি! আল্লাহ তোমাদের উপর হজ ফরজ করেছেন, কাজেই তোমরা হজ আদায় করো।’ (মুসলিম)
হজ না করার পরিণাম : হজ ফরজ ইবাদাত। সামর্থ্যবান মুসলমানদের এ ইবাদাত আদায় করা অবশ্য কর্তব্য। হজ না করার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। মনে রাখতে হবে, হজ না করলে কিংবা অস্বীকার করলে আল্লাহর কোনো ক্ষতি হবে না, ক্ষতি হবে আমাদেরই। মহান আল্লাহ বলেছেন : ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে (মসজিদুল হারামে) যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই ঘরের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য। আর যে অস্বীকার করবে, সে জেনে রাখুক, নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন।” (সূরা আলে ইমরান-৯৭)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : “যে ব্যক্তিকে কোনো অনিবার্য প্রয়োজন অথবা জালিম শাসক অথবা দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি হজ আদায়ে বাধার সৃষ্টি করেনি, সে হজ না করে মারা গেলে চাই ইয়াহুদি হয়ে মরুক অথবা খ্রিষ্টান হয়ে মরুক (তাতে আল্লাহর কিছু যায় আসে না)’ (দারেমী) কেননা মহান আল্লাহ তাঁর কিতাবে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই ঘরের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য।’ (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)
শেষ কথা : হজ বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের চূড়ান্ত নিদর্শন। বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এক বিরাট প্রদর্শনী। হজ পরস্পর পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্য, প্রেম-প্রীতি ও স্নেহ বিস্তার করার শিক্ষা দেয়। শিক্ষা দেয় ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, উঁচু-নিচুর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। সাম্য মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের অপূর্ব নিদর্শন হজের সময় সকলের মুখে একই বুলি লাব্বাইকা লাব্বাইক ধ্বনিতে মক্কার আকাশ বাতাশ হয়ে উঠে মুখরিত। এই আন্তর্জাতিক মিলনের ভেতর দিয়ে গড়ে ওঠে মুসলিম সংঘ। মুমিনদেরকে বৃহত্তর জীবনে যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত করে তোলে। সুতরাং মুমিনদের কর্তব্য হলো, মৌলিক ইবাদাতসমূহের আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি জীবনে এগুলোর শিক্ষাসমূহ বাস্তবায়নের আন্তরিক উদ্যোগ নেয়া। তাহলেই জীবনে কাক্সিক্ষত সাফল্য আসবে। ইহ ও পরকাল সুখময় হবে।
লেখক : গবেষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা