চাঁদ দেখা : সমস্যা ও সমাধান-৫
- মো: আবদুল্লাহ
- ২৬ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
আমাদের করণীয় : ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা পালন করো এবং চাঁদ দেখেই ঈদুল ফিতর উদযাপন করো’(বুখারি ও মুসলিমসহ প্রায় সব সহিহ হাদিসগ্রন্থ দ্র.)। এ হাদিসখানা অনুযায়ী চাঁদ দেখা প্রশ্নে আমাদের সবারই দায়-দায়িত্ব আছে, তা অনস্বীকার্য। আর এ দায়িত্ব ‘ফরজে কিফায়া’ হিসেবে ধরে নেয়ার এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে শৃঙ্খলাবিধান ও ব্যবস্থাপনার সুযোগ করে দিয়ে আমাদের জন্য বিরাট সহযোগিতা করা, এর বাইরেও প্রসিদ্ধ হাদিসÑ
‘যে বা যিনি কোনো ভালো ও কল্যাণকাজের পথ দেখান বা সুযোগ করে দেন বা সহযোগিতা করেন; তিনি সেই সংশ্লিষ্ট কাজ বা আমল যারা করবেন তাঁদের সবার সমপরিমাণ সওয়াব পেয়ে যাবেন’Ñ এই ব্যাপক অর্থবোধক ও মূল নীতিজ্ঞাপক হাদিসের প্রতি একটু গভীরভাবে মনোযোগ দিলে আমরা বুঝতে পারব যে, আলোচ্য সমস্যাকবলিত ও বিতর্কজনক পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানোর লক্ষ্যে, সুনির্দিষ্ট কমিটির বাইরে যদি আমরা কেউ সত্য সত্য চাঁদ দেখতে পাই, আর বসে না থেকে দ্রুত, প্রয়োজনে কিছু টাকা-পয়সা খরচ করেও, বিধি মোতাবেক সংবাদ বা সাক্ষ্যটি স্থানীয় উপজেলা-জেলা বা কেন্দ্রীয় কমিটির বরাবরে যেকোনো মূল্যে পৌঁছে দেই। আর তার ফলশ্রুতিতে সারা দেশের মানুষ ‘চাঁদ দেখা’ প্রশ্নে বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি পায় এবং সংশয়হীনভাবে রোজা শুরু বা ঈদ উদযাপন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে সবাই রোজা রেখে বা ঈদ-ইবাদত পালন করে যে পরিমাণ সওয়াব প্রাপ্ত হবেন, সেই সবের সমপরিমাণ সওয়াব তো এ লোকটি একাই পেয়ে যাবেন! কারণ, এটা তো হাদিসের কথা! সুতরাং সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোর বাইরে দূর-দূরান্তে, দেশের প্রান্তিক সীমায় যারা অবস্থান করেন, তাঁদের আমরা ওইরূপে উৎসাহিত করতে পারি।
সারসংক্ষেপ : ওই আলোচনা থেকে সারসংক্ষেপ হিসেবে বলা যায়Ñ ১. রোজা ও ঈদ পালন যেমন সবার দায়িত্ব, তারই প্রয়োজনে চাঁদ দেখা এবং তাতে সাহায্য করাও সব মুসলমানের দায়িত্ব; কেবল সরকারের একার দায়িত্ব নয়।
২. চাঁদ দেখা এবং তা প্রমাণে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহযোগিতা করা অন্যতম একটি সওয়াবের কাজ।
৩. কেবল চাঁদ দেখাই যথেষ্ট নয়, দেখার সংবাদ বা সাক্ষ্যটি সংশ্লিষ্ট কমিটির বরাবরে পৌঁছাতে হয়।
৪. কেবল চাঁদ দেখার সংবাদের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা প্রচার করা যাবে না; সাক্ষ্য হিসেবে প্রমাণিত হওয়া চাই।
৫. যিনি বা যারা চাঁদ দেখেছেন, তাঁরা একান্ত কোনো সমস্যায় কমিটির বরাবরে উপস্থিত হতে না পারলে, কমিটির কোনো সদস্যকে সেখানে পাঠিয়ে তার সংবাদ ও সাক্ষ্য বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
৬. আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে মাহে রমজানের রোজা একজন সৎ প্রত্যক্ষদর্শীর সংবাদেও প্রমাণিত হতে পারে; অবশ্য দুইজনের সাক্ষ্য হলে আরো উত্তম। তবে এতে সাক্ষ্য প্রক্রিয়া জরুরি নয়; যদিও তা হলে অধিক ভালো।
৭. আকাশ মেঘমুক্ত হলে, রোজা প্রমাণে কমপক্ষে দুইজনের সাক্ষ্য থাকা চাই; একদল বা আরো বেশি হলে অধিক ভালো।
৮. কিন্তু ঈদের চাঁদের ক্ষেত্রে আকাশ মেঘলা হলে অবশ্যই দুইজন সাক্ষীর সাক্ষ্য বিধি মোতাবেক গৃহীত হওয়া চাই। আর ঈদের চাঁদের ক্ষেত্রে আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে সে ক্ষেত্রে কেবল দুইজনের সাক্ষ্যই যথেষ্ট হবে না, সে ক্ষেত্রে বরং ‘বেশ কয়েকজন’ বা ‘একদল মানুষ’ এর সংবাদ ও সাক্ষ্য থাকা জরুরি।
৯. ওই ‘বেশ কয়েকজন’ বা ‘একদল’ বলতে, নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। বিচারক বা তাঁর স্থলাভিষিক্ত ফায়সালাদানকারী ব্যক্তি বা কমিটির লোকজনের প্রবল ধারণা বা আস্থা-বিশ্বাস অর্জিত হয়ে যায়Ñ এমন (৩/৪/৫ বা ততধিকও হতে পারে) কয়জন হলেই হলো। (আহসানুল ফাতাওয়া : মুফতি রশীদ আহমদ র. খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪৬৮, ৪৫৩-৪৮৮; যাযকারিয়া বুক ডিপো, ইউপি ভারত; সংস্করণ-১৯৯৪ খ্রি.)
১০. যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত স্পটের বাইরেও চাঁদ দেখা যাওয়া সম্ভব; তাই অন্য কেউ চাঁদ দেখলে, তার মূল্যায়ন করতে হবে।
১১. স্পট সংখ্যা বাড়াতে হবে।
১২. উপজেলা-জেলা পর্যায়ের কমিটির সাথে স্থানীয়দের যোগাযোগের সুবিধার্থে সেখানকার স্থানীয় কারো টেলিফোন বা মোবাইল নম্বর দিয়ে দিতে হবে।
১৩. কেন্দ্রীয় কমিটি বা স্থানীয় কমিটির প্রদত্ত ফোন নম্বরগুলোতে প্রত্যক্ষদর্শীদের যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে উৎসাহিত করতে হবে।
১৪. উপরে উল্লিখিত তথ্যসূত্রের শরিয়া আইন গ্রন্থাদিতে বলা হয়েছে, ‘চাঁদ দেখা কমিটির সদস্যদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ফিকহ-বিশেষজ্ঞ আলেম হওয়া চাই।’ তারপরও অধম মনে করি, সংখ্যাগরিষ্ঠ না হোক, সমসংখ্যক না হোক; কিন্তু এমন কয়েকজন অবশ্যই হওয়া চাই যেন দেশের মানুষ আস্থাবান হতে পারে যে, আলোচ্য চাঁদ দেখা, না দেখার সিদ্ধান্ত আলেমরাই দিয়ে থাকেন বা তাঁদের নির্দেশনা মোতাবেকই দেয়া হয়ে থাকে। সুতরাং অনিচ্ছাকৃত কোনো সমস্যা হলে সে ক্ষেত্রেও, সরকারকে দোষারোপ করার কোনো যুক্তি নেই।
১৫. যে ইসলামিক ফাউন্ডেন অফিসের সভাকক্ষে চাঁদ দেখা হয় সেই একই অফিসে সরকারের নিয়োগ দেয়া তিনজন বিশেষজ্ঞ আলেম রয়েছেন; যা বর্তমানে সারা দেশের মানুষই জানেন। চাঁদ দেখা, কোনো সমস্যা হোক বা না হোক, জনগণ বারবার তাঁদেরই ফোন দিয়ে থাকে; তাঁরা তখন বলতে বাধ্য হন, ‘আমরা তো কমিটির সদস্য নই; তাই কিভাবে কি হয়েছে... বলতে পারছি না!’ এতে নেতিবাচক বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং এ তিনজন আলেমকে স্থায়ী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তি বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
১৬. চাঁদ দেখা প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট ফাতাওয়ার কিতাবাদিতে অত্যন্ত স্পষ্টভাষ্যে বলা হয়েছে, শরিয়ত নির্দেশিত পন্থা-প্রক্রিয়ার বাইরে ‘ইলমে নুজুম’ বা হিসাব বিজ্ঞানের বিশেষ কোনো প্রক্রিয়া অথবা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে চাঁদ প্রমাণ করার কসরত শরিয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং তেমন চিন্তা-চেতনা অসমীচীন বলেই মনে হয়।
১৭. দেশের মানুষকে চাঁদ দেখা কমিটির কার্যক্রম, প্রক্রিয়া, তাতে যে আলেম বা মুফতি সদস্যরাও আছেন এবং কেবল বাইতুল মোকাররমে বসেই নয়, বরং ৬৪টি জেলার সংবাদ সংগ্রহ (যদিও তা যথেষ্ট নয়) করে, তারপর বিধি মোতাবেক ঘোষণা প্রদান করা হয়Ñ তা প্রচারের ব্যবস্থা করা চাই।
উপসংহার : মোটকথা, চাঁদ দেখার কেন্দ্রীয় কমিটি বা ধর্ম মন্ত্রণালয় তথা সরকার সার্বিক বিবেচনায় যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এবং আমরা সর্বস্তরের জনগণ, ইমাম ও মুয়াজ্জিন এবং আলেমরা নিজ নিজ পর্যায়ে আরেকটু সজাগ ও সচেতন হয়ে, নিজেদের দায়িত্ব মনে করে চাঁদ দেখা কমিটিকে সহযোগিতা করলে অবশ্যই আলোচ্য সমস্যা ও বিড়ম্বনা থেকে নিজেরাও মুক্ত হতে পারব এবং দেশের মানুষকেও মুক্তি দেয়া সম্ভব হবে। (সমাপ্ত)
লেখক : মুফতি, ইফা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা