২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আত্মত্যাগের এক মহাপরীক্ষা

-


নবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন ইবরাহিম আ:। যার ফলে আল্লাহ তাকে পুরস্কার হিসেবে মুসলিম জাতির মহান পিতার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। ইবরাহিম আ: ছিলেন নিঃসন্তান। সতীসাধ্বী বন্ধ্যা স্ত্রী সারা (বয়স প্রায় ৭৫ বছর) তাঁর খাদেমা হাজেরাকে প্রাণপ্রিয় স্বামী ইবরাহিম আ:কে উৎসর্গ করেন এবং ইবরাহিম আ: তাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বরণ করে নেন। ওই সময় ইবরাহিম আ:-এর বয়স ছিল প্রায় ৮৬ বছর। তিনি বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহর কাছে নেককার
সন্তান কামনা করেছিলেন।
আল্লাহ বলেন, (ইবরাহিম বললেন), ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দাও। অতঃপর আমি তাকে একটি ধৈর্যশীল (স্থিরবুদ্ধি) পুত্রের সুসংবাদ দিলাম’ (সূরা সাফফাত : ১০০-১০১)। ইবরাহিম আ:-এর দোয়ার ফসল হিসেবে দ্বিতীয় স্ত্রী হাজেরার গর্ভে প্রথম সন্তান ইসমাইল আ: জন্ম গ্রহণ করেন। নিঃসন্তান পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। বৃদ্ধ বয়সে একমাত্র নয়নের পুত্র ইসমাইলের আ: মহববত ইবরাহিম আ:কে কাবু করে ফেলল কি-না, আল্লাহ এবার তা যাচাই করতে চাইলেন। অতঃপর হজরত ইবরাহিম আ: আল্লাহর পক্ষ থেকে শিশু পুত্র ইসমাঈল ও তাঁর মাকে মক্কায় নির্বাসনে রেখে আসার নির্দেশ পান। আল্লাহর পক্ষ থেকে এ নির্দেশ পাওয়ার পরই তাঁর অন্তরে বিশ্বাস জন্মেছিল যে, নিশ্চয়ই এ নির্দেশের মধ্যে আল্লাহর কোনো মহতী সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা লুক্কায়িত আছে এবং নিশ্চয়ই তিনি ইসমাইল ও তাঁর মাকে ধ্বংস করবেন না।
একমাত্র শিশুপুত্র ও তাঁর মাকে মক্কায় রেখে এলেও ইবরাহিম আ: মাঝে মধ্যে সেখানে যেতেন ও দেখাশোনা করতেন। এভাবে ইসমাইল ১৩-১৪ বছর বয়সে উপনীত হলেন এবং পিতার সাথে চলাফেরা করার উপযুক্ত হলেন। ঠিক সেই সময় আল্লাহ ইবরাহিমের মহব্বতের কোরবানি কামনা করলেন। ইতঃপূর্বে অগ্নিপরীক্ষা দেয়ার সময় ইবরাহিমের কোনো পিছুটান ছিল না। কিন্তু এবার রয়েছে প্রচণ্ড রক্তের টান। এবারের পরীক্ষা স্বেচ্ছায় ও স্বহস্তে সম্পন্ন করতে পারেন কি না সেটাই যাচাই করতে চাইলেন। পরীক্ষাটি ছিল পূর্বের কঠিন অগ্নি পরীক্ষার চেয়ে নিঃসন্দেহে কঠিনতর। অতঃপর সে যখন তাঁর পিতার সাথে কাজ করার মতো বয়সে উপনীত হলোÑ তখন (ইবরাহিম) তাকে বললেন, ‘বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি জবেহ করছি, এখন তোমার অভিমত কি? সে বলল, হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন, তাই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন’ (সূরা সাফফাত : ৯৯-১০২)। অতঃপর পিতা-পুত্র আল্লাহ নির্দেশিত কোরবানগাহ মিনায় উপস্থিত হলেন।
হজরত ইবরাহিম আ: ছিলেন আত্মত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত। যার ত্যাগের বিনিময় ইসলাম আলোকিত হয়েছে সারা বিশ্বে। আল্লাহর প্রতি তাঁর আনুগত্য ছিল শর্তহীন। হজরত ইবরাহিম আ:-এর সাফল্য ও সার্থকতার জন্য আল্লাহর কাছে অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতার প্রতীক হিসেবে তিনি (আল্লাহ) বিশ্ব মুসলিম ওই সুন্নত অনুসরণে ১০ জিলহজ বিশ্বব্যাপী শরিয়াত নির্ধারিত প্রতি বছর পশু কোরবানি করে থাকেন। অগ্নিকাণ্ডে ফেলে দেয়া, প্রিয়তমা স্ত্রীকে নির্বাসনে পাঠানো, পিতা কর্তৃক পুত্রকে জবাই করা এসব ছিল নবী পরিবারের আত্মসর্গের এক মহাপরীক্ষা। যে পরীক্ষায় পিতা-পুত্র এবং মা উত্তীর্ণ হয়ে অকৃত্রিম আল্লাহর প্রেমের পরিচয় দিয়ে পৃথিবীকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিলেন। ফলে পিতা হলেনÑ ইবরাহিম খলিলুল্লাহ মহান আল্লাহর পরীক্ষিত বন্ধু ও মহা সম্মানিত নবী, পুত্র ইসমাঈল হলেন জবিহউল্লাহ এবং হাজেরা হলেন আত্মত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত মসলিম জাতির মহানমাতা। তাদের আত্মত্যাগের ফলে প্রতিষ্ঠিত হলো হজরত ইবরাহিম আ:-এর সুন্নত। বলা চলে যে, এই কঠিনতম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ইবরাহিম আ: বিশ্ব নেতৃত্বের সম্মানে ভূষিত হন। আল্লাহ বলেন, যখন ইবরাহিমকে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তাতে উত্তীর্ণ হলেন, তখন আল্লাহ বললেন, ‘আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করলাম (সূরা বাকারাহ: ১২৪)। আজ তিনি ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলিমদের পিতা; সবাই তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
লেখক : জেনারেল ম্যানেজার, আইসিপিএল


আরো সংবাদ



premium cement