চাঁদ দেখা : সমস্যা ও সমাধান-৩
- মো: আবদুল্লাহ
- ১২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০, আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯, ২২:১৫
ঈদের চাঁদ সম্পর্কিত শরিয়তের সাক্ষ্যবিধি : চাঁদ যখন ব্যাপকভাবে দেখা না যায়, বরং দু-চারজনে দেখে থাকে মাত্র, সে ক্ষেত্রে অবস্থা যদি এমন হয় যে, ওই অঞ্চলের আকাশে কোনো মেঘ-বৃষ্টি, আবছা-অন্ধকার কিছুই ছিল না; আকাশের দিগন্ত ও চাঁদ উদয়স্থল একেবারে মেঘমুক্ত ও পরিষ্কার ছিল। তা সত্ত্বেও আর কেউ চাঁদ দেখতে পেল না। তা হলে এ অবস্থায় কেবল দু-তিনজনের দেখা ও সাক্ষ্যদান শরিয়তের বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য হবে না। যে পর্যন্ত না মুসলমানদের বড় একটা দল চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দেবে, চাঁদ দেখা প্রমাণ হবে না। যারা দেখার সাক্ষ্য দেবে, তা তাদের ভুল বোঝাবুঝি, দৃষ্টিভ্রম বা মিথ্যা বলে ধর্তব্য হবে। ( প্রাগুক্ত : পৃ-৩৫২)।
হ্যাঁ, যদি চাঁদ দেখা যাওয়ার ওই দিগন্ত বা স্থান মেঘে ঢাকা থাকে, অন্ধকার থাকে, বৃষ্টিবাদল থাকে, যার কারণে চাঁদ দৃষ্টিগোচর হতে প্রতিবন্ধক হয়ে থাকে; সে ক্ষেত্রে মাহে রমজানের রোজা পালনের জন্য একজন বিশ্বস্ত (মুসলিম) লোকের এবং ঈদ ইত্যাদির ক্ষেত্রে দু’জন বিশ্বস্ত মুসলমানের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে। (প্রাগুক্ত+রাদ্দুল মুহতার : খ-৩, আল্লামা ইবনু আবেদীন র., পৃ-৩৫২-৩৫৩, ৩৫৫-৩৫৬ / আল-বাহরুর রায়িক: আল্লামা ইবনু নুজাইম র., খ-২, পৃ-৪৬০, যাকারিয়া বুক ডিপো, ই.পি. ভারত, তা.বি.)।
কিন্তু সরকারের পক্ষে এমন সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে সারা দেশে ঘোষণা করার জন্য তিনটি অবস্থার যেকোনো একটি পদ্ধতি অবশ্যই অনুসরণ করে ঘোষণা দান জরুরি হবে। যদি এসব পদ্ধতির কোনোটিই না হয়, তাহলে অন্য কোনো প্রকার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ঈদের ঘোষণা দান সরকারের পক্ষে বা অন্য কোনো দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান/সংস্থা/দলের জন্য জায়েজ নয়। শরিয়ত অনুমোদিত পারিভাষিক সেই তিনটি প্রক্রিয়া হলোÑ
১. শাহাদাত আলার রুইয়া।
২. শাহাদাত আলা শাহাদাতের রুইয়া।
৩. শাহাদাত আলাল কাদা।
শাহাদাত আলার রুইয়া : শাহাদাত আলার রুইয়া হলো, এমন একজন আলেম বা একদল আলেমের সামনে ওই সাক্ষ্যদাতা সরাসরি উপস্থিত হবেন, যিনি বা যারা শরিয়তের ফিকাহ তথা আইনবিষয়ক বিধিবিধান এবং ইসলামের সাক্ষ্য আইন ও নিয়মনীতি বিষয়ে অভিজ্ঞ মর্মে দেশের মানুষ আস্থা ও প্রত্যয় রাখেন। আর এই আলেম বা আলেমগণ সর্বসম্মতভাবে তার সাক্ষ্য গ্রহণের ফয়সালা দেন।
শাহাদাত আলাশ-শাহাদাত : শাহাদাত আলাশ-শাহাদাত হলো, যদি ওই সাক্ষী খোদ উপস্থিত না হন অথবা রোগব্যাধি বা সফর করে আসতে না পারেন তাহলে সে ক্ষেত্রে তেমন প্রত্যেক সাক্ষীর স্থলে দু’জনকে সাক্ষী বানাবেন যে, আপনারা সাক্ষী থাকুন, আমি আজ সন্ধ্যায় বা রাতে এতটা এত মিনিটে, এ স্থানে বা অমুকস্থানে নিজ চোখে চাঁদ দেখেছি। এরপর এই দু’জন সাক্ষী ওই আলেম বা আলেমগণের সামনে এ মর্মে সাক্ষ্য দেবেন যে, ‘আমাদের সামনে অমুক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন যে, ‘আমি আজ/অমুক রাতে, অমুক স্থানে, নিজ চোখে চাঁদ দেখেছি’Ñ তারই ভিত্তিতে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি (অমুকের পুত্র অমুক) আমাকে তাঁর সাক্ষ্যের ওপর/ব্যাপারে সাক্ষী বানিয়েছেন। সে জন্য আমি তার সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে সাক্ষ্য প্রদান করছি।
শাহাদাত আলাল কাদা : শাহাদাত আলাল কাদা হলো, যে স্থানে চাঁদ দেখা গেছে, সেখানে যদি সরকারের কোনো উপকমিটি থাকে এবং তাতে কয়েকজন এমন আলেম অন্তর্ভুক্ত থাকেন যাদের ফতোয়াদান ও তেমন যোগ্যতা বিষয়ে অন্যান্য আলেম ও সাধারণ জনগণের আস্থা থাকে এবং যিনি চাঁদ দেখেছেন তিনি তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে নিজ চোখে দেখার বিষয়টি সাক্ষ্য আকারে পেশ করেন আর সেই সাক্ষ্য ওই আলেমগণ গ্রহণ করেন। তাহলে এই আলেমগণের ফয়সালা এ অঞ্চলের জন্য যথেষ্ট হবে বটে, যে অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেল, সাক্ষ্য পাওয়া গেল; কিন্তু বাকি পুরো দেশের বা সব অঞ্চল ও সব জেলার জন্য তেমন ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য হওয়ার নিমিত্তে ঘোষণা দানের জন্য জরুরি হলো, সরকারের নিযুক্তীয় কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এ আলেমগণের ফয়সালাটি যেন নি¤েœাক্ত শর্ত মোতাবেক উপস্থাপিত হয় : এ আলেমগণ বা তাদের প্রধান এমনটি লিখে পাঠাবেন যে, ‘অমুক সময়ে আমাদের সামনে দু’জন বা ততোধিক সাক্ষী নিজ চোখে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। আর আমাদের কাছে এ সাক্ষীরা নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য। যে কারণে তাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে চাঁদ প্রমাণিত হওয়ার ফয়সালা প্রদান করা হয়েছে।’ এই লেখা দু’জন সাক্ষীর সামনে লিখে মোহরাঙ্কিত করতে হবে এবং এই সাক্ষীরা লিখিতটি নিয়ে ‘কেন্দ্রীয় চাঁদ দেখা কমিটি’র আলেমগণের বরাবরে নিজ সাক্ষ্যসহ পেশ করবেন যে, ‘অমুক আলেমগণ এই লেখা আমাদের সামনেই লিখেছেন।’ (মুফতি শফী র., জাওয়াহিরুল ফিকাহ্: খ-১, পৃ-৩৯৫-৪০১; ৯ম সংস্করণ, ১৪০৭ হিজরি, মাকতাবা দারুল উলুম, করাচি + আহসানুল ফাতাওয়া : মুফতি রশীদ আহমদ র. খ-৪, পৃ-৪৭৮, যাকারিয়া বুক ডিপো, ইউ.পি. ভারত; সংস্করণ-১৯৯৪ খ্রি.)।
কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে যদি ওই উপকমিটির আলেমগণের ফয়সালা শরিয়তসম্মতভাবে হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়; তাহলে সে ক্ষেত্রে এই কেন্দ্রীয় কমিটি সরকারিভাবে প্রদত্ত অধিকার বলে পুরো দেশের বেলায় ঘোষণা প্রদান করতে পারে। এমন ঘোষণা সব মুসলমানের জন্য মেনে নেয়া ওয়াজিব বলে গণ্য হবে। (প্রাগুক্ত: পৃ- ৪০২)
লেখক : মুফতি, ইফা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা