২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম কমান

-

আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের ব্যবসায়ী ভাইদের বেশির ভাগই মুসলমান। এটিও বিশ্বাস করি, তারাও রমজানে আল্লাহর রহমত, বরকত ও মাগফিরাত কামনা করেন। তাই তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, রমজান মাসের একটি ফরজ ৭০টি ফরজের সমান হয়ে থাকে এবং একটি নফল একটি ফরজের সমান হয়ে থাকে। এজন্য হজরত ইবনে আব্বাস রা: রমজান এলে অন্যান্য সময় অপেক্ষা অধিক দয়ালু ও সহানুভূতিশীল হতেন। তাহলে এ মাসের যেকোনো নেক আমল ৭০ গুণ বৃদ্ধি করে ব্যক্তির আমলনামায় জমা করা হয়। আমাদের ব্যবসায়ী ভাইরা যদি রোজাদারদের সহযোগিতার কথা চিন্তা করে ১১ মাসের তুলনায় রমজানে দ্রব্যমূল্য কিছুটা কমিয়ে দেন এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশে এর উদাহরণও রয়েছে। একান্তই সম্ভব না হলে অন্তত স্থিতিশীল রাখেন, তবে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, যতটুকু লোকসান বা যতটুকু মুনাফা করার সুযোগ ছিল, তা না করার কারণে আল্লাহ তা ৭০ গুণ বাড়িয়ে দুনিয়া ও কাল কিয়ামতের কঠিন দিনে দান করবেন।
ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ¢ জাকাত, এটি যেকোনো মাসে হিসাব করে আদায় করা যায়। তথাপি রমজানকে বিশেষভাবে নির্ধারণ করার কারণ হলো ৭০ গুণ অতিরিক্ত ফায়দা পাওয়ার আশা। এমনিভাবে আল্লাহর পথে, আত্মীয়স্বজনের জন্য, গরিব-দুঃখিদের জন্য, এতিমদের জন্য অসহায় মানবতার জন্য যত বেশি খরচ করা হবে, তত বেশি তার নিজের উপকারে আসবে। আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, আল্লাহর পথে একটি পয়সা, একটি শস্য, একটি দানার বিনিময়ে কমপক্ষে ৭০০ গুণ প্রতিদান দেয়া হবে। এরপর বলা হয়েছে, এর চেয়েও অধিক দেয়া হবে।
আমাদের ব্যবসায়ীরা যদি বিশ্বাস করেন, ‘আল্লাহু বাছিরুম বিল ইবাদ’ ও ‘সামিউম বাছির’। অর্থাৎ ‘মহান আল্লাহ বান্দার সব কিছু গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেন, তিনি শোনেন ও দেখেন’, তাহলে কী করে তারা রমজান এলেই দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেন, কী করে তারা খাদ্যের সাথে ভেজাল মিশ্রিত করেন, কেন রোজাদার মুমিনদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্য মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করেন? আপনারা যদি সত্যিকারের রোজাদার হন, তাহলে আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্নÑ রোজা আপনাকে কী শেখায়? আমরা তো জানি, রোজাদার সারা দিনের ক্ষুধা-পিপাসার দুঃসহ জ্বালা নিবারণের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ ‘দেখেন’ এ নামের ভয়ে সে সুযোগ গ্রহণ করে না। অবিরত ও ক্রমাগত একটি মাস এ ট্রেনিংয়ের ফলে আল্লাহর অন্যান্য সিফাতি নামের কার্যকারিতা এমনভাবে হৃদয়ের গভীরে অঙ্কিত হয় যে, বাকি ১১টি মাস সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বিরত থাকতে পারে। এমনিভাবে একজন মুমিন আল্লাহর প্রতি এ ঈমান পোষণ করে যে তিনি রাজ্জাক, তিনি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত সম্পদ দান করেন। আমাদের মুসলিম ব্যবসায়ীরাও যদি এ ধরনের ঈমান পোষণ করে থাকেন, তবে আমার প্রশ্নÑ কেন আপনি রোজাদারকে শোষণ করবেন?
তাহলে প্রথমেই আমরা এর উত্তরে বলতে পারি, আপনাদের ঈমানে বহুত গলতি আছে। দ্বিতীয়ত রোজা পালনসহ অন্য ইবাদতগুলো আপনাদের কোনো উপকারে আসেনি। কারণ, রিজিকের মালিক আল্লাহর চেয়ে নিজেদের ব্যবসাকেই অধিক শক্তিশালী মনে করছেন। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সব কিছুর ওপর অধিক শক্তিশালী। রমজানের মূল শিক্ষা তাকওয়া তথা আল্লাহকে ভয় করার গুণটি উজ্জীবিত করা। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা আমাদের শক্তিশালী তিনটি হাতিয়ার যথাÑ খাদ্য, যৌন ও পরিশ্রমের পর বিশ্রাম প্রবৃত্তিকে ক্রমাগত একটি মাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এমন এক শক্তি অর্জন করি যার নাম তাকওয়া; যার মাধ্যমে নিজের দেহমন এবং সময়কে প্রভুর জন্য সোপর্দ করে দেই। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন, সামাজিক আচার-আচরণ, ওঠাবসা ও কথাবার্তা প্রতিটি বিষয় নিজের প্রভুর বন্দেগির জন্য ওয়াকফ করে দেই। এ ধরনের ব্যক্তির সব ধনসম্পদ এবং নিয়ামত হোক তা শারীরিক বা আত্মিক সে তা আল্লাহর পথে নিয়োগ করবে। এগুলোই তাকওয়ার গুণাবলি। আল কুরআনের শুরুতেই বলা হয়েছেÑ এ মুত্তাকিদের কয়েকটি গুণের অন্যতম একটি গুণ হলো : ‘আল্লাহ যে ধনসম্পদ দান করেছেন তা থেকে খরচ করা।’ আর ধনসম্পদ তারাই দান করতে পারে যারা সহানুভূতিশীল। যে ব্যক্তির ভেতর সহানুভূতি বা ভ্রাতৃত্ববোধ নেই তার ঈমানে ত্রুটি আছে। কারণ, ঈমানদারদের একটি সার্টিফিকেট আল্লাহ স্বয়ং কুরআনে পেশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার স্ত্রীলোকেরাই প্রকৃতপক্ষে পরস্পরের দায়িত্বশীল বা সাহায্যকারী বন্ধু। এদের বৈশিষ্ট্য এই যে, এরা নেক কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে, নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত আদায় করে আল্লাহ ও রাসূলের বিধান মেনে চলে। প্রকৃতপক্ষে এদের প্রতিই আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন।’ (সূরা তাওবা : ৭১)। আমরা রোজার মাধ্যমে খুৎ-পিপাসায় কষ্ট করছি, তেমনিভাবে বিপুল খরচের মাধ্যমে আমাদের পকেটকেও কষ্ট অনুভব করানোর চেষ্টা করছি। তাই অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসে আমাদের খরচের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। আমাদের ব্যবসায়ী ভাইয়েরা খাদ্যে ভেজাল মিশ্রিত না করে এবং দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি না করে, বরং কমিয়ে বা স্থিতিশীল রেখে ঈমানের এ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারেন। অবশ্যই মহান আল্লাহ তাদের ব্যবসায় বরকত দান করবেন।
লেখক : ব্যাংকার

 


আরো সংবাদ



premium cement