দারিদ্র্য দূরীকরণে জাকাত
- এস এম আরিফুল কাদের
- ০৩ মে ২০১৯, ০০:০০
ধনী-দরিদ্র মিলেই সমাজ। একে অপরের সহযোগিতায় গড়ে ওঠে প্রত্যেকের জীবন। ধনীদের বিভিন্ন কাজে দরিদ্রদের যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি দরিদ্রদের অসহায়ত্বে ধনীদের ভূমিকা থাকা আবশ্যক। কিন্তু আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র দাঁড়ায়, ইসলামের এ বিধান অর্থাৎ জাকাত যেন গরিবের অধিকারের জন্য নয়; বরং ধনীদের সুবিধার জন্য। তাই ধনীরা মনে করেন ‘জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি’ দিয়ে সুনাম কুড়ানো যায়।
জাকাত কিন্তু গরিবের জন্য ধনীদের ওপর কোনো ধরনের দয়া প্রদর্শন নয়। বরং এটি পরিশোধ না করা পর্যন্ত জাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তির ধন-সম্পত্তি পাক-পবিত্র হয় না। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনীদের সম্পদের ওপর গরিবের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ধনী-গরিবের সেতুবন্ধনের ব্যবস্থা হয়। জাকাতপ্রাপ্তিতে ধনীদের প্রতি গরিবের দাবি রয়েছে। পবিত্র কুরআনের ভাষায়Ñ ‘আর তাদের সম্পদে অভাবী ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে’ (সূরা জারিয়াত : ১৯)।
জাকাত সবার ওপর ফরজ নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে তাদের ওপরই ফরজ হবে যারা সাহেবে নিসাব অর্থাৎ যাদের কাছে সারা বছরের যাবতীয় খরচ বাদে ২০০ দিরহাম বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা (প্রায় ৬১৩ গ্রাম) কিংবা বিশ মিসকাল বা সাড়ে সাত তোলা সোনার (প্রায় ৮৬ গ্রাম) মূল্য বা সমপরিমাণ সম্পদ থাকে। উপযুক্ত ব্যক্তি সুস্থ মস্তিষ্ক, স্বাধীন, বালেগ মুসলমান হলে ২.৫০ শতাংশ হিসেবে হিসাব করে যত টাকা হয় তা জাকাত হিসেবে আদায় করা তাদের ওপর ফরজ। (সহিহ বোখারি, মুসলিম, আবু দাউদ)
জাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তি জাকাত না দিলে পৃথিবীর বেশির ভাগ সম্পদ অল্পসংখ্যক লোকের দখলে চলে যাবে। আর সম্পদ অল্পসংখ্যক মানুষের দখলে চলে আসা মানেই শতকোটি মানুষ দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত করা। বর্তমানে তা স্পষ্টভাবে অবলোকন করা যাচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী আটজনের কাছে যে সম্পদ আছে, তা গোটা পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যার কাছে থাকা সম্পত্তির সমান।
শতকোটি মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক ক্ষোভ থেকে বাঁচতে মহান স্রষ্টার দেয়া বিধান জাকাতের তুলনা হয় না। সম্প্রতি গ্লোবাল ফিন্যান্স ম্যাগাজিনের তালিকায় বিশ্বের চৌত্রিশতম দরিদ্রতম দেশ হিসেবে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। (দৈনিক জনকণ্ঠ, ২ নভেম্বর ২০১৪) তাই জাকাতে দারিদ্র্যতা দূরীকরণের এক অপার সম্ভাবনার দেশ আমাদের বাংলাদেশ। কিন্তু ২০১৮ সালের শেষে প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী দেশে দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশ বা ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজারে নেমে এসেছে। যা আগের বছরে ছিল ২৩ দশমিক ১ শতাংশ বা ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৬০ হাজার। একইভাবে অতিদরিদ্র্যের হার কমে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ বা ১ কোটি ৮০ লাখ ৮০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে এ তথ্য উঠে এসেছে। (দৈনিক ইনকিলাব, ৫ জানুয়ারি ২০১৯)
সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) মেলার আয়োজনে ২০১৬ সালের ২৭ মে সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দু’দিনব্যাপী চতুর্থ জাকাত ফেয়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৫ হাজার কোটি টাকা জাকাত আদায় করে বণ্টন করা সম্ভব। (দৈনিক ভোরের কাগজ, ২৭ মে ২০১৬)
১০ম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের চতুর্থ দিনের অধিবেশনে ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরিন আখতারের এক প্রশ্নের জবাবে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু জানিয়েছিলেন, দেশে ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ২৯৭ পরিবার ভূমিহীন দারিদ্র্য রয়েছে। (প্রিয় ডটকম, ১৮ এপ্রিল ২০১৮) এবার ২৫ হাজার কোটি টাকা যদি ১৭ লাখ (প্রায়) ভূমিহীন পরিবারকে প্রথম টার্গেটে দেয়া হয় তবে তারা প্রতিটি পরিবার পাবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা করে। তাদের যদি এখান থেকে আট লাখ টাকা করে দেয়া হয় তাহলে তারা এ টাকা দিয়ে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়ে জীবন চালাতে পারবে।
অন্য দিকে, মানুষ মনে করে বর্তমানে প্রচলিত সুদি ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব। তা কাল্পনিক হতে পারে। কিন্তু ঋণ গ্রহীতা ঋণীই থেকে যায়; অপর দিকে সম্পদের পাহাড় জমায় ঋণদাতারা। যার প্রমাণ আমরা পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই পড়ে থাকি। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামের সুফিয়া বেগমকে ঋণ দেয়ার মাধ্যমে সুদভিত্তিক গ্রামীণ ব্যাংক যাত্রা শুরু করে। ৪০ বছরে গ্রামীণ ব্যাংক নোবেল পুরস্কারে বিজয় অর্জন করেছে ঠিক; কিন্তু সেই সুফিয়ার দারিদ্র্যতাকে জয় করতে পারেনি। তার খড়ের ঘরে টিনও ওঠেনি। ভিক্ষাই ছিল তার জীবনের শেষ পরিণতি। (দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ, ১ এপ্রিল ২০১৮)
এখন প্রশ্ন হলো, জাকাত আদায় ও বণ্টনের কাজটা করবে কে? রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের যাবতীয় চাহিদা পূরণের দায়িত্ব যাদের ওপর, তাদেরই এ কাজ করতে হবে। অর্থাৎ সরকারকেই এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাকাতের মাধ্যমে দারিদ্র্য জয়ের অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও যথাযথ পদক্ষেপ ও ব্যবস্থাপনার অভাবে যদি মানুষ দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি না পায়, তাহলে এ অবহেলার জন্য কিয়ামতের ময়দানে সরকারকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সম্পদশালী জনগণের উচিত হলো জাকাত দেয়া, আর রাষ্ট্রপরিচালকের কর্তব্য হলো বাধ্যতামূলক আইন করে জাকাত আদায় করে গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। এ কাজটি করলে জাকাত আদায় ও বণ্টনের জন্য প্রয়োজন হবে একটি কার্যকরী সংস্থার। যেখানে ইসলামী আইনানুযায়ী জাকাত আদায় ও বণ্টনের জন্য বিপুল মানুষের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হবে।
লেখক : আলেম ও গবেষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা