ইসলামে লেখালেখির গুরুত্ব
- সাকী মাহবুব
- ১২ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
লেখালেখি একটি আর্ট, একটি নান্দনিক শিল্প। কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখনীর গুরুত্ব অপরিসীম। লিখতে হয় কলম দিয়ে। কলম নামে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল করে লেখনীর প্রতি উৎসাহিত করেছেন। বিশ্বনবী সা:-এর প্রতি বিশ্ব প্রতিপালকের প্রথম নাজিল করা বাণীগুলোয় ছিল তিন অক্ষরের ছোট শব্দ কলমের গুণগান। যেমন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেনÑ ‘পড়ো তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে। পড়ো আর তোমার রব মহামহিম। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। (সূরা আল আলাক : ১-৪)।
লেখালেখির গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বিশ্বনবী সা: বলেছেন, তোমরা জ্ঞানকে আটকে রাখো লেখার মাধ্যমে। বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসির ইমাম কুরতুবী রহ: ছাফওয়াতুত তাফসিরের মধ্যে লেখালেখির গুরুত্ব সম্পর্কে লিখেছেনÑ ‘যদি লেখা না হতো, তাহলে দ্বীন ও দুনিয়ার শৃঙ্খলা ঠিক থাকত না।’ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, লেখার প্রথা অতি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সর্বপ্রথম লেখার প্রথা প্রবর্তন করেন। তিনি এ পার্থিব জগৎকে সৃষ্টি করার ৫০ হাজার বছর আগেই সমগ্র সৃষ্টিজীবের ‘ভাগ্য’ লিখেছিলেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কলমকে মর্যাদাসম্পন্ন বস্তু হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কেননা তিনি মূলত মানবজাতিকে একটি মহামূল্যবান সম্পদ (কলম) দান করেছেন। কলম হচ্ছে, একটি মর্যাদাসম্পন্ন বস্তু এবং লেখক হচ্ছেন মর্যাদাশালী।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনের কতক স্থানে কলমের শপথ করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, নুন ও কলমের শপথ এবং ওই বস্তুর শপথ, যা তারা লিপিবদ্ধ করে। (সূরা কলম : ১)।
উল্লেখ্য, শপথ সাধারণত ওই বস্তুর নামে হয়ে থাকে, যা সম্মানিত বা গুরুত্বপূর্ণ হয়। কলমের গুরুত্ব সম্পর্কে বিখ্যাত সাহাবি হজরত জায়েদ ইবনে সাবেত রা: প্রিয়নবী সা:-এর একটি হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আমি প্রিয়নবী সা:-এর কাছে গেলাম এমন সময় তার সম্মুখে একজন কাতেব (লেখক) ছিল। তিনি (কাতেবকে লক্ষ্য করে) বললেনÑ ‘কলমটি তোমার কানের ওপর রাখো। কেননা এতে প্রয়োজনীয় কথা বেশ স্মরণে আসে।’
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ কলমকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রচার-প্রসার এবং বংশানুক্রমে জ্ঞানের উত্তরাধিকার সৃষ্টি এবং বিকাশ সাধন ও সংরক্ষণের মাধ্যম বানিয়েছেন। তিনি যদি ইলহামি চেতনার সাহায্যে মানুষকে কলম ব্যবহার ও লেখার কৌশল শিক্ষা না দিতেন, তাহলে মানবজাতির জ্ঞান অর্জন ও প্রচার-প্রসারের যাবতীয় স্বভাবসিদ্ধ যোগ্যতা ও প্রতিভা সম্পূর্ণ নিরর্থক হয়ে যেত।
প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা কাতাদাহ রহ: লিখেছেন, ‘কলম হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি বড় নিয়ামত, যদি তা না হতো তাহলে দ্বীন ও পার্থিব শৃঙ্খলা ঠিক থাকত না।
ইসলামের দৃষ্টিতে লেখালেখির গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামে বিদ্যার্থীর কলমের কালিকে অত্যন্ত মর্যাদার চোখে দেখে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা লেখে না, ইসলাম মনে করে সে নিজের এবং অন্যের অধিকার নষ্ট করেছে। নিজের অধিকার নষ্টের অর্থ হলো নিজেকে ফলপ্রসূ হওয়া থেকে বঞ্চিত করা, উত্তম কাজগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা। ইসলাম সম্পর্কে মানুষকে জানতে না দেয়া। আর অন্যের অধিকারের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষ তার সারগর্ভ দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে পথহারা অনেক মানুষ সত্য সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারেনি। একটি লেখা শুধু সমকালীন মানুষকেই লাভবান করে না, বরং ওই লেখা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আদর্শ সমাজ গঠনে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে।
লেখালেখি বা কলমের মাধ্যমে বিশ্বময় ইসলামের দাওয়াতের কাজও ছড়িয়ে দেয়া যায়। আর ইসলামের দাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম। আল কুরআন ও হাদিসে অনেক জায়গায় এ কাজের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। তাই আসুন, মহান আল্লাহর দিকে মানুষকে ডাকতে এবং মানুষের মধ্যে সত্য ও সুন্দরের আলো ছড়িয়ে দিতে লেখালেখি করি। কলম ধরি। নিজেকেও শামিল করি লেখক তথা আল্লাহর পথে আহ্বানকারীর ভাগ্যবান আলোকিত কাফেলায়।
লেখক : প্রবন্ধকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা