২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রজব ফসল রোপণের মাস

-


মাহে রজব মুসলমানদের মাঝে নিয়ে আসে রামাদানুল মোবারকের আগমনী বার্তা। রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের সে প্রবহমান ঝর্ণায় স্নাত হওয়ার আহ্বান।
মাহে রামাদানে প্রবেশের প্রধান ফটক হচ্ছে রজব মাস। পার্থিব জীবনে যেমন শাহী মহলের প্রধান ফটকে পৌঁছে নিজেকে গুছিয়ে নেয়া হয় তদ্রƒপ রজব মাস থেকেই রহমত ও বরকত লাভের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হবে।
আবু বকর ওয়াররাক বলখী রহ: বলেন, রজব মাস ফসল রোপণের মাস। শাবান মাস ফসলে পানি সেচ দেয়ার মাস। আর রমজান হলো ফসল ঘরে তোলার মাস। তিনি আরো বলেন, রজব মাস ঠাণ্ডা বাতাসের মতো, শাবান মাস মেঘমালার মতো, আর রমজান মাস হলো বৃষ্টির মতো। Ñ লাতায়েফুল মা’আরেফ-পৃ১৪৩
রজব শব্দটি তারজীব শব্দ থেকে নির্গত। এর অর্থ সম্মান মর্যাদা। এ মাসকে আছাবও বলা হয়। কেননা আছাব অর্থ কোনো কিছু ঢেলে দেয়া। এ মাসে তাওবাকারীদের প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং ইবাদতকারী বান্দাহদের ওপর কবুলিয়তের নূর নাজিল হয়। কামুসুল মুসতালিহাত, পৃ-৮০
কেউ কেউ বলেছেন, রজব নামে জান্নাতে একটি ঝর্ণা আছে। তার পানি দুধের চেয়েও সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি, বরফের চেয়েও ঠাণ্ডা। এ পানি পান করার সুযোগ একমাত্র সে ব্যক্তিরই হবে, যে রজব মাসে বেশি বেশি রোজা রাখে।
Ñ মুকাশাফাতুল কুলুব, পৃ-৪৫৭
রজব মাসের বিশেষ দুটি আমল
রজব মাস হলো রমজান মাসের বার্তাবাহক, আর তাই হলো মাহে রমজানের জন্য আগাম প্রস্তুতি। হাদিস শরিফে এসেছে, রজব মাসের প্রথম তারিখ থেকেই রাসূলুল্লাহ সা: এই দোয়া পড়তেনÑ আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান। অর্থÑ হে আল্লাহ রজব ও শাবান মাসে আমাদেরকে বরকত দান করো এবং আমাদের হায়াত লম্বা করে রামাদান পর্যন্ত পৌঁছে দাওÑ মেশকাত, হাদিস-১২১।
মোল্লা আলী কারী রহ: এর ব্যাখ্যায় বলেন, রজব ও শাবানে আমাদের ইবাদত বন্দেগিতে বরকত দান করো এবং রমজানের পূর্ণ এক মাস শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সিয়াম ও কিয়াম তথা রোজা ও তারাবিহের তাওফিক দান করো। Ñ মেরকাত খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪৬৩
রজব মাসের দ্বিতীয় আমল হলো ২৭ তারিখের রোজা। এই মর্মে হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি রজব মাসের ২৭ তারিখে রোজা রাখবে আল্লাহ পাক তার আমলনামায় ৬০ মাস রোজা রাখার সওয়াব লিখে দেবেন। Ñ খুৎবাতুল আহকাম, পৃ-১৬০
বর্ণিত আছে, নবী করিম সা:-এর প্রতি সর্বপ্রথম হজরত জিবরাইল আ: রজবের ২৭ তারিখেই নবুওয়তের সংবাদ নিয়ে এসেছিলেন, মোকাশাফাতুল কুলুব, পৃ-৪৫৭
নবী করিম সা:কে আল্লাহ তায়ালা একটি বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন, আর তা হচ্ছে মিরাজ। এই মিরাজ হলো নবীজী সা: -এর একমাত্র বৈশিষ্ট্য যা আমাদের নবীর খতমে নবুওয়ত তথা শেষ নবী হওয়ারও অন্যতম একটি দলিল এবং এই মিরাজের মাধ্যমে উম্মতের জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অনেক পুরস্কার ও সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। আর সেই মিরাজের ঘটনা ঘটেছিল ২৭তম রাতে রজব মাসে। তাফসিরে কুরতবি, খণ্ড-৩, পৃ-১২০
বর্ণিত আছে, নবী করিম সা: বলেন, রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস। মোকাশাফাতুল কুলুব, পৃ-৪৫৭
তাই এই মাসে গুনাহের কাজ ছেড়ে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করা এবং রমজান মাসের রোজা তারাবিহ ও জিকির তিলাওয়াতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
লেখক : খতিব, চৌধুরী বাজার জামে মসজিদ, লালবাগ


আরো সংবাদ



premium cement