হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা সাদাকা
- ড. মোহা: এমরান হোসেন
- ১৫ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
শিষ্টাচারিতা, সৌজন্যবোধ, ভদ্রতা, নম্রতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের চরম দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে ইসলামে। একজনের কথাবার্তা, চলাফেরা, অঙ্গভঙ্গি সব কিছুর মাধ্যমে অন্যজন শান্তি পাবেÑ এটিই ইসলামের শিক্ষা। একজন মানুষ যখন অন্য মানুষের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করে, তখন সে ব্যক্তি প্রশান্তি লাভ করে। এ জন্য হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাকেও রাসূলুল্লাহ সা: সাদাকা বলে অভিহিত করেছেন। হজরত জাবির রা: বর্ণিত হাদিসে নবী সা: বলেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজ সাদাকা। ভালো কাজ হলোÑ তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করবে এবং বালতির অতিরিক্ত পানি তোমার ভাইয়ের পাত্রে ঢেলে দেবে।’ (জামিউত তিরমিজি, হাদিস নম্বর-১৯৭০; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বর-১৪৯২০) হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা একটি অতি নগণ্য কাজ মনে হতে পারে। কিন্তু কাজটি যত নগণ্যই হোক না কেন, নবী সা: এটিকে তুচ্ছ জ্ঞান করতে নিষেধ করেছেন। হজরত আবুযার রা:-কে নবী সা: বলেন, ‘ভালো কাজের কোনোটিকেই তুমি ছোট মনে করো না, যদিও সেটি এমন হয় যে, তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে প্রফুল্লচিত্তে সাক্ষাৎ করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর-৬৮৫৭) অন্য এক বর্ণনায় হাদিসটি এসেছে এভাবেÑ ‘হে আবুযার! ভালো কাজের কোনোটিকেই তুমি তুচ্ছ জ্ঞান করো না। যদিও সেটি এরূপ হয় যে, তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে প্রফুল্লচিত্তে দেখা করবে এবং সেটি যদিও এমন হয় যে, তুমি তোমার বালতি থেকে পানি প্রার্থীর পাত্রে প্রবাহিত করবে।’ ওই সাহাবি থেকে বর্ণিত অন্য এক হাদিসে নবী সা: বলেন, ‘তুমি কোনো ভালো কাজকেই তুচ্ছ মনে করো না। যদি তুমি কোনো ভালো কাজ না পাও, তবে প্রফুল্ল চেহারা নিয়ে মানুষের সাথে নম্র আচরণ করো।’ (সহিহ ইবন হিব্বান, হাদিস নম্বর-৪৬৮)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী সা: অন্য ভাইয়ের মুখে হাসি ফুটানোকে উত্তম আমল বলে অভিহিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘নিশ্চয় ফরজ ইবাদতের পর আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল হলো কোনো মুসলমানের মনের মধ্যে আনন্দ প্রবেশ করানো।’ (আল মুজামুল আওসাত, হাদিস নম্বর-৭৯১১)। হজরত আয়েশা রা: বর্ণিত এক হাদিসে নবী সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান পরিবারে আনন্দ প্রবেশ করাবে তার জন্য জান্নাত ব্যতীত অন্য কোনো সওয়াবে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন না।’ (আল মুজামুল আওসাত, হাদিস নম্বর-৭৫১৯; চেহারার প্রফুল্লতা দিয়ে নবী সা: অন্যকে তুষ্ট করতে বলেছেন। হজরত আবু হুরায়রাহ রা: থেকে বর্ণিত, নবী সা: বলেন, ‘তোমরা সম্পদ দিয়ে মানুষকে তুষ্ট করতে পারবে না, বরং তোমাদের প্রফুল্ল চেহারা এবং উত্তম চরিত্র দিয়ে তাদের তৃপ্ত করবে।’ (আল মুসাতদরাক, হাদিস নম্বর-৪২৭)।
হাসিমুখ ভদ্রতার পরিচয়। মুহাম্মদ ইবনুদ নাদার আল হারিছি নামক একজন মনীষী বলেন, ‘শিষ্টাচারিতার প্রথম স্তর হলো হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, দ্বিতীয় স্তর হলো মানুষের সাথে সৌহার্দ্য এবং তৃতীয় স্তর হলো মানুষের প্রয়োজন মেটানো। যে ব্যক্তি নিজ কৌলিন্য হারিয়ে ফেলেছে, তার বাবার কৌলিন্য তার কোনো উপকার করতে পারবে না। যার নিজের মর্যাদা নষ্ট হয়ে গেছে, তার জন্য তার বাবার মর্যাদা কল্যাণ বয়ে আনবে না। (মুজালাসাতু ওয়া জাওয়াহিরুল ইলম, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৮৯) মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির রা:-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘দুনিয়ার কোন জিনিস আপনার কাছে প্রিয়? তিনি বলেন, ‘মুমিনের মধ্যে হাসি প্রবেশ করানো।’ (মাকতাবাতুল কুরআন, তা. বি. পৃষ্ঠা-৪৪)
লেখক : শিক্ষাবিদ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা