২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আল্লাহ মানুষকে ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন

-

মানুষ সৃষ্টিকুলের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি জীব। ভাব আদান প্রদানের জন্য ভাষা সৃষ্টি করেন। ভাষা আমাদের জন্য বড়ই নেয়ামত। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে মাতৃভাষার সম্মান ও মর্যাদা অপরিসীম। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করে মায়ের কোলে মাতৃভাষায় কথা বলার সু-ব্যবস্থা করেছেন। মানুষের অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে ভাষা একটি অন্যতম নেয়ামত। প্রত্যেকটি নেয়ামত বান্দার সাথে সম্পৃক্ত। কিছু কিছু নেয়ামতের গুরুত্ব অপরীসিম। প্রত্যেক মানুষ মনের ভাব প্রকাশের জন্য অর্থপূর্ণ যেসব শব্দ প্রকাশ করে তাকেই ভাষা বলে। ভাষাটা আল্লাহ তায়ালা বিশেষ নিদর্শন। এরশাদ হচ্ছে, ‘তার নিদর্শন হলো, তোমাদের রং, ধরন এবং ভাষার ভিন্নতা।’
সারা বিশে^ যত জাতি আছে, সব জাতির কাছে ভাষার মর্যদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। প্রত্যেক জাতির কাছে মাতৃভাষার মর্যাদা ও সম্মান সর্বশ্রেষ্ঠ। সম্মান, শ্রদ্ধা, আত্মত্যাগ এবং ভালোবাসার দিক দিয়ে মায়ের ভাষার সাথে কোনো ভাষার তুলনা হয় না। মহান আল্লাহ তায়ালা মাতৃভাষাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ প্রত্যেক রাসূল ও নবীকে নিজ মাতৃভাষার জন্য যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলেন। রাসূল ও নবীদের প্রতি সহিফা ও সব আসমানী কিতাব মাতৃভাষায় নাজিল হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘আমি সব রাসূলকেই তাদের স্ব-জাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি। যাতে তারা আমার বাণী স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে’। প্রত্যেক রাসূল ও নবী সা: ছিলেন, মাতৃভাষার মহাপণ্ডিত। হজরত দাউদ আ: প্রতি নাজিলকৃত যবুর ছিল গ্রিক ভাষা, হজরত মুসা আ:-এর প্রতি নাজিলকৃত তাওরাত ছিল হিব্রু ভাষা, হজরত ঈসা আ:-এর প্রতি নাজিলকৃত ইনজিল ছিল সুরয়ানি ভাষা এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ^নবী সা:-এর ওপর নাজিলকৃত মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ভাষা ছিল আরবি। বিশ^নবী সা:-এর মাতৃভাষা আরবি। বিশ^নবী সা: বলেন, তোমরা তিন কারণে আরবি ভাষাকে ভালো বাসবে। আমার মাতৃভাষা আরবি, আল কোরআনের ভাষা আরবি এবং জান্নাতিদের ভাষা আরবি।’ বিশ^নবী সা: বলেন, ‘আমি আরবদের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভাষার অধিকারী। তিনি (সা:) কারো কাছে কোনো প্রকার বিদ্যা অর্জন করেননি। তারপর তিনি ছিলেন সাহিত্যের উঁচু আসনে আসীন। বিশ^নবী সা:-এর মুখনিসৃত বাণী ছিল সাহিত্যের মহাসাগর। মহান আল্লাহ তায়ালা রাসূল ও নবীদের ভাষাকে সুমিষ্ট ও সুমধুর করে দিয়েছেন। তাদের কথা সাবলীল। সাধারণ মানুষ তা সহজেই বুঝতে পারেন। দাওয়াতের কৌশল হলো সুমিষ্ট ভাষা উপস্থাপন করা। দায়ী ব্যক্তির বড় গুণ হলো মাতৃভাষায় যথাযথ যোগ্যতার সাথে দাওয়াত উপার্জন করা।
আমরা বাঙালি। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। মাতৃভাষা বাংলা অর্জন করতে গিয়ে একবুক তাজা রক্ত ঝরাতে হয়েছে। দিতে হয়েছে জীবন বিসর্জন। মাতৃভাষা বাংলার সাথে ইসলামী ভাবধারা জড়িয়ে আছে। বাংলা ভাষা যেখানেই উৎপত্তি হোক না কেন? বাংলা ভাষা মায়ের মতো অতি আপন। আমরা যদি আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে চর্চা করি, তবে তা ইবাদতে পরিণত হবে। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা ভাষাকে বান্দার জন্য নেয়ামত হিসাবে দান করেছেন। আল্লাহর ইচ্ছায় এ পৃথিবীতে কোনো কোনো ভাষা মহিয়ান ও গরিয়ান। আরবি ভাষা আরববাসীর ভাষা। এ ভাষায় শ্রেষ্ঠ কাফের আবু জেহেল, আবু লাহাব কথা বলত। কিন্তু এ ভাষায় বিশ^নবী সা:-এর ওপর আল কোরআন অবতীর্ণ হওয়ায় তা মহিয়ান ও গরিয়ান ভাষায় পরিণত হয়েছে। পৃথিবীতে যত ভাষা রয়েছে প্রত্যেক ভাষারই ব্যাপক চর্চা রয়েছে। চর্চার কারণে প্রত্যেক ভাষাসমৃদ্ধ ভাষায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যেক মাতৃভাষা সম্মানের সাথে তুলে ধরা আমাদের উচিত। আমরা বাঙালি। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী মাতৃভাষা বাংলা আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা। এটাই আমাদের গর্ব ও অহংকার। তাই খোদার মহান নেয়ামত বারবার স্মরণ করি। এভাবেই ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করি।
বিশুদ্ধ মাতৃ ভাষায় কথা বলতে হবে। আমাদের মাতৃভাষাকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য সবাইকে এক সাথে এগিয়ে আসতে হবে। পড়া, লেখা, অফিস-আদালত, পরিবার, সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার করি। তবেই মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা যথাযথভাবে রক্ষা পাবে। এই হোক মাতৃভাষার অঙ্গীকার।
লেখক : প্রভাষক


আরো সংবাদ



premium cement